সুবাহর মামলা থেকে খালাস পেয়ে সন্তুষ্ট গায়ক ইলিয়াস
প্রকাশ : 2022-07-27 13:57:20১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগে অভিনেত্রী শাহ হুমায়রা হোসেন সুবাহর মামলার থেকে খালাস পেয়েছেন গায়ক ইলিয়াস হোসাইন।রায়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন ইলিয়াস।
বুধবার (২৭ জুলাই) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক আবেরা সুলতানা খানম এ মামলা থেকে আসামি ইলিয়াসকে খালাস দেন। রায় ঘোষণার পর ইলিয়াস বলেন— সুবাহ আমার বিরুদ্ধে যে মামলা করেছেন তা থেকে আদালত খালাস দিয়েছেন। আমি আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞ। এ রায়ে আমি সন্তুষ্ট।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি লিয়াকত আলী বলেন, ইলিয়াস ও সুবাহর মধ্যে পারিবারিকভাবে আপস হয়েছে। আদালত আপস-মীমাংসার শর্তে ইলিয়াস হোসাইনকে খালাস দিয়েছেন।
এর আগে সোমবার (২৫ জুলাই) বিচারক আবেরা সুলতানা খানম রায় ঘোষণার জন্য এ দিন ধার্য করেন। এদিন আদালতে উপস্থিত হয়ে সুবাহ জানান— ১০ লাখ টাকায় পারিবারিকভাবে তাদের মধ্যে মামলা আপস হয়েছে। এসময় ইলিয়াস হোসাইনও উপস্থিত ছিলেন। এদিন ইলিয়াস মামলায় জামিন নেন। এরপর বিচারক মামলাটির সাক্ষ্য ও যুক্তি উপস্থাপন শেষ করে রায়ের জন্য ২৭ জুলাই দিন ধার্য করেন।
সুবাহ বিচারককে বলেন, আমরা পারিবারিকভাবে ১০ লাখ টাকায় মামলা মীমাংসা করেছি। আমি টাকা বুঝে পেয়েছি। এখন ইলিয়াসের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, যে সংসার করবে না তার সঙ্গে জোর করে সংসার করা যায় না। ইলিয়াস তার জীবনে ভালো থাকুক, আর আমিও ভালো থাকি। ইলিয়াস বলেন, পারিবারিকভাবে আমাদের আপস হয়েছে। সুবাহ ২০ লাখ টাকা দাবি করেছিলেন। তবে যেকোনোভাবে আমরা মীমাংসা করেছি।
এর আগে রোববার (২৪ জুলাই) বিচারক আবেরা সুলতানা খানমের আদালতে সুবাহ আদালতে বলেন, আমাদের দুজনের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে গেছে। আমি আর এ মামলা চালাতে চাই না। আমি মামলা প্রত্যাহার করতে চাই। এরপর বিচারক আসামি ও বাদীর উপস্থিতির জন্য সোমবার (২৫ জুলাই) দিন ধার্য করেন।
এর আগে ১৯ জুন ইলিয়াসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছিলেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক আবেরা সুলতানা খানম।
চলতি বছরের মার্চে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের নারী সহায়তা ও তদন্ত বিভাগের উপ-পরিদর্শক মাসুমা আফ্রাদ অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এ মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ১১ জনকে।
অন্যদিকে, মামলায় উচ্চ আদালতের ছয় সপ্তাহের জামিনে ছিলেন ইলিয়াস। কিন্তু আত্মসমর্পণ করে জামিন শুনানির দিন আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় গত ২২ মার্চ ইলিয়াসের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক জুলফিকার হায়াত।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, সুবাহ একজন অভিনয়শিল্পী এবং আসামি ইলিয়াস একজন কণ্ঠশিল্পী। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে তাদের পরিচয়। পরিচয়ের সূত্র ধরেই প্রেমের সম্পর্ক। পরে দুই পরিবারের সম্মতিতে ওই বছরের ১ ডিসেম্বর ইসলামি শরিয়া মোতাবেক তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় ইলিয়াসের চাহিদা অনুযায়ী যৌতুক হিসেবে ১২ লাখ টাকা দামের রোলেক্স ব্র্যান্ডের একটি ঘড়ি, ২৫ হাজার টাকা দামের আরেকটি ঘড়ি, এক লাখ টাকার স্বর্ণের আংটি, গলার চেইনের জন্য ৫০ হাজার টাকা এবং বিয়ের কাপড় বাবদ দুই লাখ টাকা দেওয়া হয়। এতে সন্তুষ্ট না হয়ে সুবাহর কাছে ফ্ল্যাট কেনার জন্য ৫০ লাখ টাকা ও গাড়ির জন্য ৩০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন ইলিয়াস।
এছাড়া সুবাহর মায়ের কাছে যৌতুক হিসেবে ইউটিউব চ্যানেল কেনার জন্য ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। তখনো ইলিয়াসকে আড়াই লাখ টাকা দেওয়া হয়।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, সুবাহ জানতে পারেন ইলিয়াস একাধিক বিয়ে করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুবাহকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন তিনি। এরপর ২০২১ সালের ২৭ ডিসেম্বর ইলিয়াস যৌতুক হিসেবে আরও ৮০ লাখ টাকা দাবি করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া চলছিল। এর জেরে ইলিয়াস কাচের গ্লাস ভেঙে তার ভাঙা অংশ দিয়ে সুবাহকে মারতে যান। তখন সুবাহ থামাতে গেলে তার বাম হাত জখম হয়। পরবর্তীতে ইলিয়াস বিষয়টি নিয়ে সুবাহর কাছে ক্ষমা চান এবং এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
কিন্তু এরপরও সুবাহর কাছে ইলিয়াস ফের টাকা দাবি করেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, পরের দিন ২৮ ডিসেম্বর ইলিয়াস আবার সুবাহর কাছে ৮০ লাখ টাকা দাবি করেন। এতে সুবাহ অস্বীকৃতি জানালে ইলিয়াস এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি, লাথি মারেন এবং চুলের মুঠি ধরে দেয়ালের সঙ্গে ঠুকে জখম করেন। অসুস্থ হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন সুবাহ। মেডিকেল সনদপত্রে সুবাহকে মারপিট করে সাধারণ জখম করার বিষয়টি প্রকাশ পায়।
তদন্তকালে ইলিয়াসের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধনী/২০০৩) এর ১১(গ) ধারায় অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।
মামলার অভিযোগে যা বলেছেন সুবাহ
চলতি বছরের (২০২২) ৩ জানুয়ারি যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগে ইলিয়াসকে আসামি করে রাজধানীর বনানী থানায় মামলা করেন সুবাহ। এতে ঘড়ি, স্বর্ণের আংটি, গলার চেইন ও কাপড়ের জন্য ইলিয়াসকে টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়।
গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর দুপুরে ফ্ল্যাট ও গাড়ি কেনার জন্য ৮০ লাখ টাকা দিতে সুবাহকে চাপ দেন ইলিয়াস। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এরই জেরে ওইদিন রাত ৮টার দিকে সুবাহকে শারীরিক নির্যাতন করেন ইলিয়াস। পরদিন আবারও যৌতুকের জন্য ৮০ লাখ টাকা দাবি করেন।
টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সুবাহকে আবারও শারীরিক নির্যাতন করেন ইলিয়াস। এতে জখম হন সুবাহ। এরপর সুবাহকে ব্যথার ওষুধের নামে অন্য ওষুধ খাইয়ে দেন। এর কিছুক্ষণ পরই অজ্ঞান হয়ে পড়েন তিনি। এ সুযোগে ইলিয়াস আলমারিতে থাকা ২০ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার এবং ৫০ হাজার টাকা নিয়ে যান।