সুন্দরবন লর্ড প্রজাস্বত্ব এষ্ট্রেটের মালিক তিনি !
প্রকাশ : 2021-12-31 20:02:40১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পিসি বারুইখালী গ্রামের বাসিন্দা আঃ সামাদ হাওলাদার। তার পিতা মোঃ আকবর আলী হাওলাদারের কাছ থেকে পেয়েছেন “সুন্দরবন লর্ড প্রজাস্বত্ব এষ্টেট” এর মালিকানা। এরই মধ্যে তিনি তৈরী করে ফেলেছেন প্রায় দুই হাজার অনুসারী। দাবী করছেন বাগেরহাটের শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার সকল জায়গার মালিক তিনি। ২০১১ সাল থেকে সামাদ হাওলাদার “সুন্দরবন লর্ড প্রজাস্বত্ব এষ্টেট” নামের তার কার্যক্রম শুরু করে। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তার অনুসারীর সংখ্যা। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলাও করেছেন সামাদ হাওলাদার। এছাড়া ভূমি অফিস থেকে যেসব মিউটেশন দেয়া হচ্ছে তা সিএস খতিয়ান মোতাবেক দেয়া হচ্ছে না ও এসএ রেকর্ড দিয়ে যেসব মিউটেশন ও রেজিষ্ট্রি করা হচ্ছে তা সম্পর্ণ অবৈধ অভিযোগ করে সুন্দরবন লর্ড প্রজাস্বত্ব এস্টেটের নামে নামজারীর জন্য প্রায় ৮৮২ জন সদস্য প্রশাসনের মাধ্যমে আবেদন করেছে। এরই মধ্যে দিনদিন সামাদ হাওলাদারের পক্ষে বৃদ্ধি পাচ্ছে তার অনুসারী সংখ্যা। বিষয়টি নিয়ে শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার সাধারন মানুষের মাঝে চলছে আলোচনা ও সমলোচনার ঝড়।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, এর আগেও তিনি জেলার শরণখোলা ও মোড়েলগঞ্জে উপজেলার বৈধ মালিকানা দাবী করেছিলেন। প্রায় ৩/৪ বছর ধরে তিনি তার এই কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসচ্ছেন। গত বছর রায়েন্দা বাজার পাঁচরাস্তা এলাকায় তার অফিস সীলগালা ও সাইনবোর্ড অপসারন করে শরণখোলা উপজেলা প্রশাসন। এর কিছুদিন পরে পুনরায় তিনি তার কার্যক্রম শুরু করেন। জেলা বাগেরহাট, থানা মোড়েলগঞ্জ ও শরনখোলার অর্ন্তগত “গ” তফসিলের সুন্দরবন পরগোনার অধীন ২৫/বি সহ ১,২,৩,৪ ও ৫নং লর্ট এবং তৎসহ অতিরিক্ত লপ্তলর্ট এবং জেলা কালেক্টরী ভূক্ত ৮১৭,৮১৮,৮১৯,৮২০,৮২১ নং অধীন মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলার অর্ন্তুগত সকল নামীয় মৌজার গেজেটভূক্ত সম্পত্তি অত্র দরখাস্তের তফসিল ভূক্ত সম্মতি জেলা প্রশাসক ও আদালতে দাবী করেছেন তিনি।
শরণখোলা উপজেলার বাসিন্দা নাইম শেখ বলেন, একটি লোক দুটি উপজেলার মালিকানা দাবী করছেন। এটা কি কোন ভাবেই সম্ভব। এর আগে তিনি সুন্দরবনসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমা লের ৫ জেলার সকল জমির বৈধ মালিনা দাবী করেছিলেন। প্রায় তিন/চার বছর ধরে তিনি তার এই কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে।
মোরেলগঞ্জ পৌর এলাকার বাসিন্দা শেখ মাইনুল ইসলাম বলেন, একটা লোক প্রকাশ্যে রীতিমত জনসমাবেশ করে দুইটি উপজেলার মালিকানা দাবী করছে। গত বছর শুনেছি তিনি মাইকিংও করেছেন গ্রামে গ্রামে। উপজেলা প্রশাসন থেকে অভিযান চালিয়ে অফিস সীলগালা করা হলেও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। বিষয়টি দিনদিন আমাদের কাছে ঘোলাটে মনে হয়ে। আমরা মোরেলগঞ্জ শরণখোলাবাসি এখন সত্যিটা জানতে চাই। তাই মূল বিষয়টি জনসমূর্খে তুলে ধরার জন্য প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবী রইলো।
তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে “সুন্দরবন লর্ড প্রজাস্বত্ব এষ্টেট” এর মালিক দাবীদার আব্দুস সামাদ হাওলাদার বলেন, আমরা সাবেক সি,এস বুনিয়াদে বি,আর,এস সংশোধন চাই এবং প্রশাসনের মাধ্যমে দেশের কৃষকের ভূমি অধিকার ফিরে পেতে চাই। বর্তমানে বি,আর,এস রেকর্ড কার্যক্রম সারা দেশে বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। চলমান বি,আর,এস রেকর্ড কার্যক্রম রিভিশন করে রেকর্ড হালকরন ও সংশোধন এবং সম্পত্তির প্রকৃত মালিকানা স্থির করা এখনও সম্ভব। গণতান্ত্রিক দেশে এ কাজটি করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। আর এর ফলে ভূমি প্রশাসনে সাবেক রেকর্ড-অব রাইট অনুসরন করে ভূমিনীতি কার্যকর হলে ভূমি প্রশাসনে এক নতুন অধ্যায় সূচিত হবে। যে কারনে কৃষকের ভূমি অধিকার ফিরে পাবার লক্ষ্যে আমরা বাগেরহাট দায়রা জজ আদালতে আইনী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি এবং সত্য প্রচার ও বন্দোবস্ত স্বত্বের বাবদ মোকার্দ্দমা করেছি যার নং-৪৬/১১, বিজ্ঞ আদালত মামলার মূল আরজিতে দাবীকৃত মধ্য সত্ব ২৪নং আদেশসহ একাধিক আদেশ এবং প্রর্থনা মঞ্জুর করেন।
তিনি আরও বলেন, ভ‚মি অফিস থেকে যেসব মিউটেশন দেয়া হচ্ছে তা সিএস খতিয়ান মোতাবেক দেয়া হচ্ছে না যা সম্পূর্ণ অবৈধ। এসএ রেকর্ড দিয়ে যেসব মিউটেশন ও রেজিষ্ট্রি করা হচ্ছে তাও অবৈধ। তাই আমরা সুন্দরবন লর্ড প্রজাস্বত্ত¡ এষ্ট্রেটের নামে নামজারীর জন্য প্রায় ৮৮২ সদস্য বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি। আর এ আবেদনের প্রেক্ষিতে এবং প্রশাসনের আদেশে মাইকিং, ব্যানার ও মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচারের অনুমতি প্রদান করা হয়। ইতোমধ্যে এসএ ও বিএস রেকর্ড জরিপসহ বন্দোবস্ত স্বত্ত্বের হস্তান্তরের প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য মাইকিংও গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়।
এ ব্যাপারে আঃ সামাদ হাওলাদারের আইনজীবি এ্যাড: স্বপন কুমার বলেন, দেওয়ানী ৪৬/১১ নং মামলা ২০১১ ইং সালে দাখিল করা হয়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে শরনখোলা ও মোড়েলগঞ্জের তৎকালীন ইউএনও এবং ভূমি কর্মকর্তাকে বলা হয় সিএস মোতাবেক বিএস জরিপ সহকারে সুন্দরবন লর্ড এষ্ট্রেটের প্রতীয়মান মালিক আব্দুস সামাদ হাওলাদার কে সঠিকভাবে বন্দোবস্ত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক এবং জেলা প্রশাসক মহোদয় তার পক্ষে একাধিক আদেশ প্রদান করেছেন।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ শাহীনুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন দেশে এখন আর কোনো জমিদারী প্রথা নেই। দেশের সকল জমির মালিক সরকার। বিষয়টি নিয়ে তাদের সাথে শুনানী হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে দ্রুতই তারা জবাব পেয়ে যাবেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি একটি গুরুত্বর অভিযোগ। বিষয়টি আমি যাচাই-বাচাই না করে কিছুই বলতে পারবো না। তবে উনি যদি আইন ভঙ্গ করে কিছু করে তবে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।