সীতাকুণ্ড অগ্নিকাণ্ড: হাত হারিয়েও প্রধান আসামি নুরুল
প্রকাশ : 2022-06-11 11:10:30১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশ। কিন্তু এই মামলার প্রধান আসামি নুরুল আক্তারের পরিবারের দাবি, ডিপোতে আগুন লাগার খবর পেয়ে নুরুল সেখানে যান। আগুন নেভানোর কাজে সাহায্য করতে গিয়ে তিনি গুরুতর আহত হন। তাঁর একটি হাতও কেটে ফেলতে হয়েছে।
নুরুল আক্তারকে মামলার আসামি করা বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক বলেন, এই কর্মকর্তা ডিপোর দায়িত্বে ছিলেন। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তাঁকেও মামলার আসামি করা হয়েছে। তদন্ত শেষে দোষী ব্যক্তিদের শনাক্ত করা যাবে।
পরিবারের সদস্যরা বলেন, নুরুল আক্তার ডিপোতে আগুন নেভানোর কাজে ছিলেন সামনের সারিতে। মাইক হাতে নিয়ে উৎসুক জনতাকে সরিয়ে দেন তিনি। পরে বিস্ফোরণে মারাত্মকভাবে আহত হন।
শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, নুরুলের বাঁ হাত কাটা পড়েছে। পাঁজর গেছে ভেঙে। পায়ে পোড়া ক্ষত রয়েছে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন তিনি। কথা বলতে পারছিলেন না।
৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন ও ভয়াবহ বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন নুরুল আক্তার। ডিপোর উপমহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) পদে কর্মরত আছেন তিনি।
হাসপাতালে কথা হয় নুরুল আক্তারের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, নুরুলকে প্রথমে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ডিপোতে আগুন নেভানোর কাজে তিনি ছিলেন সামনের সারিতে। মাইক হাতে নিয়ে উৎসুক জনতাকে সরিয়ে দেন তিনি। পরে বিস্ফোরণে মারাত্মকভাবে আহত হন।
চট্টগ্রাম নগরের একটি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, নুরুলের বাঁ হাত কাটা পড়েছে। পাঁজর গেছে ভেঙে। পায়ে পোড়া ক্ষত রয়েছে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন তিনি। কথা বলতে পারছেন না। আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনার তিন দিন পর ৭ জুন আটজনকে আসামি করে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে মামলা করে সীতাকুণ্ড থানা-পুলিশ। মামলায় ১ নম্বর আসামি করা হয় নুরুল আক্তারকে।
নুরুল আক্তারের ছেলে ইয়াসির আনোয়ার বলেন, বিএম কনটেইনার ডিপোতে ২০১২ সাল থেকে কাজ করছেন তাঁর বাবা। এর আগে অন্য একটি ডিপোতে কাজ করতেন। বিএম ডিপোতে উপমহাব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। তাঁদের গ্রামের বাড়ি সন্দ্বীপের গাউছোয়া এলাকায়। চট্টগ্রাম নগরের হালিশহর এলাকায় থাকেন তাঁরা। চার ভাই ও এক বোন তাঁদের। তাঁর আরেক ভাই ইয়াসির আসাদুজ্জামানও বিএম কনটেইনার ডিপোতে কাজ করেন। কিন্তু সেদিন অফিস ছিল না তাঁর।
ইয়াসির আনোয়ার বলেন, সেদিন রাতে তাঁর বাবা বাসায় ছিলেন। আগুন লাগার খবর পেয়ে তিনি ডিপোর দিকে রওনা হন। এরপর আর পরিবারের কারও সঙ্গে তাঁর কথা হয়নি। গভীর রাতে তাঁর মায়ের মুঠোফোনে এক ব্যক্তি জানান, বাবা আহত হয়েছেন। তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে গিয়ে খোঁজাখুঁজির পর তাঁকে পাওয়া যায়। এরপর তাঁকে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসেন তাঁরা।
বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে তাঁর বাবার সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের কথা হয়েছে বলে জানান ইয়াসির আনোয়ার। বাবা তাঁদের বলেছেন, ডিপোতে আগুন লাগার পর তিনি আগুন নেভানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ বিস্ফোরণ হয়। তিনি ছিটকে পড়ে গেলেও সংজ্ঞা হারাননি। তখন নিজে ডিপোর পেছনের ছোট গেট দিয়ে বের হন। তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজন বের হয়েছিলেন। শেষে কয়েকজন ব্যক্তি তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।
নুরুল আক্তারকে আসামি করা বিষয়ে তাঁর ছেলে বলেন, মামলা হওয়ার বিষয়টি খবরের মাধ্যমে তাঁরা জেনেছেন। কর্তৃপক্ষ তাঁদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেনি। তাঁরাও কারও সঙ্গে আলোচনা করেননি। ইয়াসির বলেন, ‘বাবাকে আসামি করার কথা শোনার পর মা ভেঙে পড়েছেন।’
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে লাশ পাওয়া গেছে ৪৬ জনের। ২৬ জনের লাশ শনাক্ত হয়েছে এখন পর্যন্ত। ওই ঘটনায় আহত হয়েছেন দুই শতাধিক।