সিলেট জুড়ে বাজার গুলোতে সবজির দাম লাগামহীন !! দেখার কেউ নেই
প্রকাশ : 2024-10-14 18:05:07১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
সরকার পরিবর্তনের পর থেকে প্রতিদিন বাড়ছে সবজির দাম। গত এক সপ্তাহে সবজির দাম নিয়ে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। ১০০ শত টাকার নিচে কোন সবজি ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে না মানুষের। তবে ইতোমধ্যে সিলেটের বাজার তদারকিতে কাজ করছে জেলা প্রশাসনের ৯ সদস্যের টাস্কফোর্স কমিটি। প্রতিদিন চলছে অভিযান, হচ্ছে বাজার মনিটরিং। এরপরও সুফল মিলছে না নিত্যপণ্যের দামে। উল্টো হালি প্রতি ২টাকা কমে এবার ৬ টাকা বেড়েছে ডিমের দাম। কাচা মরিচের দাম এখনো ৪০০-৫০০ টাকার ঘরে। নতুন করে দাম বৃদ্ধির তালিকা যোগ হয়েছে ময়দা, পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল, পাম অয়েল ও মুরগীর দাম। সবজি বাজারেও রীতিমত আগুন। দুয়েকটি সবজির দাম সামান্য কমলেও এখনো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে অধিকাংশ সবজি।
সব মিলিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে ভোক্তারা। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, পণ্যের দাম কমাতে ইতোমধ্যে কোনো কোনো পণ্যের শুল্ককর কমিয়েছে সরকার। আবার কোনোটির শুল্ককর কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর সুফল পাচ্ছে না ভোক্তারা। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বাজারে এখনো সিন্ডিকেট কাজ করছে। এই সিন্ডিকেটের কারণেই বাজার ব্যবস্থা রীতিমতো অসহায়।
এদিকে ৮ অক্টোবর (মঙ্গলবার) সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোবারক হোসেনকে আহ্বায়ক ও ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক শ্যামল পুরকায়স্থকে সদস্য সচিব করে ৯ সদস্যের টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করে সিলেটের জেলা প্রশাসন। উক্ত কমিটিতে- কৃষি বিপণণ কর্মকর্তা, জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা, জেলা খাদ্য কর্মকর্তা, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা, ক্যাব সিলেটের প্রতিনিধি, মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ২ সমন্বয়ককে যুক্ত করে ৯ জনকে সদস্য রাখা হয়। পরবর্তীতে উক্ত কমিটিতে জেলা তথ্য অফিসারকে কো-অপ্ট করে ১০ সদস্যে উন্নীত করা হয়। উক্ত কমিটির নেতৃত্বে গত সপ্তাহের বুধবার থেকে নগরীর কালিঘাট, সোবহানীঘাট, বন্দরবাজারসহ বিভিন্ন বাজারে প্রতিদিনই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) সিলেটের বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, গত পাঁচ দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি প্যাকেট ময়দায় পাঁচ টাকা বেড়ে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজে ১০ টাকা বেড়ে ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলে ২০ টাকা বেড়ে ৮০০ থেকে ৮১০ টাকা ও খোলা পামঅয়েলে তিন থেকে সাত টাকা বেড়ে ১৪৪ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর আগে থেকে বাড়তে থাকা ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম আরো বেড়েছে।
এর মধ্যে ফার্মের বাদামি রঙের ডিমের হালিতে দুই টাকা বেড়ে ৬০ টাকা ও ব্রয়লার মুরগির কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে তা ২০০ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) শনিবারের বাজারদরের প্রতিবেদনেও এ পণ্যগুলোর দাম বাড়ার তথ্য জানিয়েছে। অথচ অন্তর্বরতী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজারে টাকার সরবরাহ কমিয়ে আনার নীতি গ্রহণ করেছে। এছাড়া গত মাসে অপরিশোধিত ও পরিশোধিত চিনির ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। এতে আমদানি পর্যায়ে প্রতি কেজি অপরিশোধিত চিনির শুল্ককর ১১.১৮ টাকা এবং পরিশোধিত চিনির শুল্ককর ১৪.২৬ টাকা কমবে। কমানো হয়েছে পেঁয়াজের শুল্ককরও।
তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম ৩ মাসে সয়াবিন তেল, পাম অয়েল ও পেঁয়াজের আমদানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। চলতি অর্থবছরের গত তিন মাসে ৩ লাখ ৩২ হাজার টন পাম তেল আমদানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ কম। এ সময়ে অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৩৯ হাজার টন, যা গত অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫১ শতাংশ কম। কমেছে পেঁয়াজের আমদানিও। গত ৩ মাসে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার টন। গত বছর একই সময়ে আমদানি করা হয়েছিল সাড়ে ৩ লাখ টন।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, কী কারণে পণ্যগুলোর আমদানি কম হয়েছে, সরকারের উচিত বিষয়টি খতিয়ে দেখা। তা না হলে পণ্যগুলোর দামের লাগাম টেনে ধরা কঠিন হবে। ইতোমধ্যে এসব পণ্যের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে।
নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে গঠিত টাস্কফোর্সের কাজ সিলেটে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোবারক হোসেন জানিয়েছেন, গত সপ্তাহের মঙ্গলবার টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে। বুধবার কমিটির উদ্যোগে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় করেই বাজার মনিটরিংয়ে নেমেছে। আমাদের টীম প্রতিদিনই বাজারে যাচ্ছে।
মূল্যে কমানোর ব্যাপারে তাদের তেমন কিছু করার নেই বলে জানিয়ে টাস্কফোর্স কমিটির এই আহ্বায়ক বলেন, আমরা বাজারে যাচ্ছি। সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছি। পণ্যের ক্রয়-বিক্রয় রশিদ পরীক্ষা করছি। এর মধ্যে ব্যত্যয় দেখলে জরিমানা করা হচ্ছে। এই কাজের মধ্যে পণ্যের মুল্য কমানো একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তবে বাজারে পণ্যের সরবরাহ ঠিক থাকলে মজুতদারি বন্ধ হলে পণ্যের মূল্যে কিছুটা সুফল পাওয়া যেতে পারে।
এ ব্যাপারে সিলেটের সিনিয়র কৃষি বিপণণ কর্মকর্তা আবুল সালেহ মো. হুমায়ুন কবির বলেন, সিলেটের সবজি বাজারটা প্রায় পুরোপুরি আমদানি নির্ভর হয়ে পড়েছে। গত জুনের ৩ দফায় বন্যায় সিলেটের সবজির অনেক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি বন্যায় দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও ব্যাপক ক্ষতি হয়। ফলে বাজারে সবজির সরবরাহ তুলনামূলক কম থাকায় দাম কিছুটা বেশী রয়েছে। সিলেটের স্থানীয় সবজি বাজারে আসতে আরো ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে। তখন দামও নিয়ন্ত্রণে আসবে।
কাচাঁমরিচের ব্যাপারে তিনি বলেন, সিলেটে চাহিদার তুলনায় কাঁচামরিচ সরবরাহ কম হচ্ছে। আর দাম বেশী থাকায় পাইকারী ব্যবসায়ীগণও কাঁচামরিচের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে একদিকে দাম বাড়ছে অপরদিকে চাহিদা বাড়ছে। আমরা পাকা রশিদ পরীক্ষা করে দেখেছি কাঁচামরিচ পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি। সেই কাঁচামরিচ খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ৫০০ টাকায় পৌঁছে যাচ্ছে। আমরা সেই বিষয়টি নিয়েও কাজ করছি।
জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক শ্যামল পুরকায়স্থ বলেন, কমিটি গঠনের পরপরই আমাদের টীম নগরীর বিভিন্ন বাজার মনিটরিং করছেন।
সোমবার নগরীর খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেগুন ১০০ থেকে ১২০ টাকা, বরবটি ৯০ থেকে ১০০ টাকা, করলা ১০০ থেকে ১২০ টাকা, ঝিঙা, ধুন্দুল, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেড়শ ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পটল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সবজির মধ্যে পেঁপের দাম তুলনামূলক কম রয়েছে। বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজিতে। তবে কাঁচামরিচের দর সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা।