সিরাজদিখানে ১০৮টি মন্ডপে মন্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততা  

প্রকাশ : 2021-10-03 15:54:41১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

সিরাজদিখানে ১০৮টি মন্ডপে মন্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততা  

মুন্সীগঞ্জ সিরাজদিখান আবিরপাড়া পালবাড়ি মন্দিরে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পী সত্যগোপাল পাল ও তার পরিবার। শিশির ভেজা ভোর আর শরতের কাশফুল জানান দিচ্ছে শারদীয় দূর্গোৎসবের আগমনী বার্তা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গোপূজাকে ঘিরে সিরাজদিখানের মন্ডপে মন্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততা। আগামী ৬ অক্টোবর মহালয়ার মধ্যদিয়ে দেবী দূর্গার আগমন ঘটবে মর্তলোকে। এবার দেবী দূর্গা আসবে ঘোড়ায় চড়ে, ফিরবেন ঘোড়ায় । মা কে বরণ করে নিতে অধির অপেক্ষায় ভক্ত-অনুসারিরা। তাই পূজা মন্ডপগুলোতে প্রতিমা তৈরিতে নিরলস ব্যস্ততা কারিগরদের। 

মনের মাধুরি মিশিয়ে কারিগরদের নিপুন হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে দুর্গতিনাশীনি দেবী দূর্গা এবং তার সঙ্গীয় লক্ষী, সরস্বতী, গনেশ, কার্তিক ও অনিষ্টকারী অশুর সহ বিভিন্ন দেবদেবীর প্রতিমা। কথা রশুনিয়া আবিরপাড়া  গ্রামের প্রতিমাশিল্পী বাবুল মালের মেয়ে অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্রী দিপাশা পালের  সঙ্গে। ছোটবেলা থেকে কাদামাটি ও রংতুলির সঙ্গে বেড়ে ওঠা দিপাশা পালের  জন্ম এ গ্রামেই। প্রতিবছর তার বাবা বাবুল পাল ২৫ থেকে ৩০ সেট প্রতিমা তৈরির ফরমাশ নেন। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ইতিমধ্যে ৭ সেট প্রতিমা বিক্রি দিয়েছেন তিনি। প্রতি সেট প্রতিমা তৈরিতে ব্যয় হয় প্রায় ২৫ হাজার টাকা। বিক্রি করেন ৩০-৪৫ হাজার টাকায়। কলেজের পড়াশুনার তেমন কোন চাপ নেই তাই সে তার বাবা কাকাদেরকে সাহায্য করছে। 

সিরাজদিখান উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ থেকে জানা গেছে, এবছর সিরাজদিখান উপজেলায় ১০৮টি মন্ডপে অনুষ্ঠিত হবে দূর্গোৎসব। এর মধ্যে চিত্রকোট ইউনিয়নে ১৯টি,শেখরনগর ইউনিয়নে ১৪টি,রাজানগর ইউনিয়নে১১টি,কেয়াইন ইউনিয়নে ১৭টি,বাসাইল ইউনিয়নে ০৪টি,লতব্দী ইউনিয়নে ০৪টি,রশুনিয়া ইউনিয়নে ১০টি,বয়রাগাদী ইউনিয়নে ০৫টি,ইছাপুরা ইউনিয়নে ০৪টি, মধ্যপাড়া ইউনিয়নে ০৪টি,জৈনসার ইউনিয়নে  ০৬টি,কোলা ইউনিয়নে ০১টি ও মালখানগর ইউনিয়নে ০৯টি। পঞ্জিকা অনুযায়ী ১১ অক্টোবর মহাষষ্ঠী তিথিতে দেবীর বোধনের মধ্যে শুরু হবে এ শারদীয় দুর্গোৎসব। দশমী পূজার মধ্য দিয়ে ১৫ অক্টোবর শেষ হবে এ উৎসব। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, আবিরপাড়া পালপাড়া মন্দির, সিরাজদিখান বাজার কালী মন্দির, সন্তোষপাড়া মন্দির, পূর্ব সন্তোষপাড়া  মন্দির,  রাজদিয়া পাটিকর পাড়া মন্দির,সন্তোষপাড়া দাস পাড়া মন্দিরে পূজার প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হলেই দেওয়া হবে রং-তুলির আচঁড়। 

প্রতিমা শিল্পি সত্য গোপাল  পাল বলেন, প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ। আগামী সপ্তাহ খানেকের ভিতর পূজা তৈরির কাজ শেষ হয়ে যাবে। করোনায় আর্থিক দৈন্যতার কারনে চলতি বছরে মন্ডপের সংখ্যা কমলেও স্বল্প সাধ্যের মধ্যেই উৎসব আয়োজনের ঘাটতি নেই। তবে কারিগরদের আছে হতাশা। প্রতিমা তৈরির কারিগর বাবুল পাল, গনেশ পাল, রতণ পাল জানান, পূজা মন্ডপ কমায় অনেকটাই বেকার হয়ে পড়েছেন প্রতিমা কারিগরা। তার পরও পূণ্য লাভের আসায় বাপ দাদার এ পেশা ধরে রেখেছেন কারিগররা। এবার বাইরের শিল্পীরা পূজা তৈরীর কাজে আসতে ভয় পাচ্ছে। তাই কারিগর শিল্পীর সঙ্কটও রয়েছে এবারের পূজায়। 

সিরাজদিখা  মদন মোহন মন্দিরের পূরোহিত, মদন চক্রবর্তী জানান, এ বছরে দেবী দূর্গা পৃথিবীতে আগমন করবেন ঘটোকে, গমন করবেন দোলায়। ভাল বার্তা নিয়ে আমাদের মাঝে আসছেন। ফলে দেশে শান্তি শৃক্সখলার উন্নতি হবে। সিরাজদিখান পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক জয়হরি মল্লিক বলেন, একটা মন্ডপে একাধিক পুরোহিত মালাকার লাগে। এবার তারা আসতে চাইছে না। পূজা তৈরীর প্রতিটি জিনিষের দাম বেড়েছে। বেড়েছে খরচ তারপর করোনায় দেখা দিয়েছে নানা ধরনের আতঙ্ক । সবমিলিয়ে এবার পূজা উদযাপন করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। 

সিরাজদিখান উপজেলার  পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি গোবিন্দ দাস পোদ্দার বলেন, এবারের পূঁজাকে সার্বজনীন উৎসবে রূপ দিতে সনাতন সকলকে নিয়ে আনন্দ করতে চাই। অশুর বিনাসী দেবীর এই আগমন উপলক্ষে সাধ্যমত আয়োজন সম্পন্ন করার প্রাণান্তকর চেষ্টা আমাদের। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও প্রতিটি মন্ডপে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।