সিনহা হত্যায় ওসি প্রদীপসহ আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন ও জামিন নামঞ্জুর 

প্রকাশ : 2021-06-27 14:30:02১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

সিনহা হত্যায় ওসি প্রদীপসহ আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন ও জামিন নামঞ্জুর 

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় কারান্তরীণ টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছেন আদালত।  এর মধ্য দিয়ে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচারকার্য শুরু হলো।  

রোববার কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালত চার্জগঠনের আদেশ দেন।  সেই সঙ্গে প্রদীপসহ ১০ আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। এ তথ্য জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম।

এর আগে ১৩ জুন দুপুরে একই আদালতে ওসি প্রদীপের জামিন আবেদন শুনানির কথা থাকলেও তা ২৭ জুন করা হবে বলে দিন ধার্য করা হয়েছিল। ২৪ জুন আত্মসমর্পণ করা ওসি প্রদীপের সহযোগী কনস্টেবল সাগর দেবের করা জামিন আবেদনও আজ শুনানির তারিখ দেওয়া হয়। 

রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রিজনভ্যানে করে জেলা কারাগার থেকে আসামিদের কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আনা হয়। কঠোর নিরাপত্তায় কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে ১৫ আসামিকে। প্রিজনভ্যান থেকে আসামিদের নামানোর সময় কান্নার রোল পড়ে স্বজনদের মাঝে।

পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানান, সাবেক ওসি প্রদীপ ও এসআই নন্দদুলালের জামিন চেয়ে গত ১০ জুন আদালতে আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু ওই দিন আদালতে নথি উপস্থাপন না হওয়ায় শুনানির দিন ধার্য করা হয়নি। ১৩ জুন এ নিয়ে পুনরায় আদালতে আবেদন করা হয়। আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে শুনানির জন্য ২৭ জুন দিন ঠিক করেন। এ মামলায় অভিযুক্ত কনস্টেবল সাগর দেব গত ২৪ জুন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করেন। আদালত তার জামিন আবেদনের বিষয়ে শুনানির জন্য আজ দিন ধার্য করেছিলেন।

সিনহা হত্যা মামলায় (এস,টি-৪৯৩/২১) চার্জগঠন শুনানি করেন আসামিপক্ষে কক্সবাজার বারের অ্যাডভোকেট দিলীপ দাশ, মহিউদ্দিন খান, মোবারক হোসেন এবং অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, অ্যাডভোকেট চন্দন দাশসহ ১০-১২ জনের একটি আইনজীবী প্যানেল। রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম ও বাদীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মোস্তফা, সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর শুনানিতে অংশ নিয়েছেন। 

উল্লেখ্য, গত বছরের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে গাড়ি তল্লাশি কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় গত ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়েছে বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ (পরিদর্শক) লিয়াকত আলীকে প্রধান করে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়। আদালত মামলাটির তদন্ত করার আদেশ দেন র্যা কে। এর পর গত ৬ আগস্ট প্রধান আসামি লিয়াকত আলী ও প্রদীপ কুমার দাশসহ সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

পরে সিনহা হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার অভিযোগে পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টের দায়িত্বরত আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ ছাড়া একই অভিযোগে পরে গ্রেফতার করা হয় টেকনাফ থানা পুলিশের সাবেক সদস্য কনস্টেবল রুবেল শর্মাকেও।

মামলায় গ্রেফতার ১৫ আসামিকে র‌্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তা বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাদের মধ্যে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া ১২ আসামি আদালতে ঘটনার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এ মামলায় গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব ১৫-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলাম। মামলায় অভিযুক্ত ওসি প্রদীপের অন্যতম সহযোগী কনস্টেবল সাগর দেব দীর্ঘ ১১ মাস পলাতক থাকার পর ২৪ জুন আত্মসমর্পণ করেন। এর পর নির্ধারিত দিন হিসেবে চার্জগঠন শুনানিতে সব আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।