সান্তাহার রেলওয়ে হাসপাতালটির বেহাল দশা, চিকিৎসক সংকটে সেবা ব্যহত

প্রকাশ : 2025-05-27 16:33:11১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

সান্তাহার রেলওয়ে হাসপাতালটির বেহাল দশা, চিকিৎসক সংকটে সেবা ব্যহত

জনবল সংকট’সহ নানা সমস্যায় পড়ে বেহাল দশা বৃটিশ আমলে নির্মিত বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার রেলওয়ে হাসপাতাল। ১৯১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতালটিতে চিকিৎসক ও অনান্য পদে প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় চিকিৎসা সেবা ভেঙে পড়েছে। একজন ফার্মাসিস্ট দিয়ে চলছে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা। প্রাচীন এই হাসপাতালটির অবকাঠামো ব্যবহারের উপযোগী নয়। হাসপাতালের সামনে কয়েকটি ভাঙাচুরা অব্যবহৃত, অপরিস্কার ভবন দাঁড়িয়ে আছে। 

রেলওয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, রেল মন্ত্রণালয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে একটি সিন্ধান্ত অনুযায়ী রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপশি সাধারণ মানুষ আগামী দিন থেকে রেলওয়ে হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা পাবেন। সারা দেশেমোট ১০টি রেলওয়ে হাসপাতাল সবার জন্য উন্মুক্ত হবে। এ বিষয়ে রেলপথ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে মধ্যে স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী অবকাঠামো ও স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত উন্নয়ন শেষে সাাধারণ মানুষ এই হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্যসেবা পাবে। 

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পোষ্যদের চিকিৎসাসেবা, দুর্ঘটনা কবলিত স্থানে দ্রুত গিয়ে আহত রোগীর সেবা প্রদান, বিভিন্ন হাসপাতালে আহত রোগীদের খোঁজখবর রাখা, রেলওয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, রেলওয়ে স্টেশনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ এলাকা পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা, হাসপাতালের ভর্তিকৃত রোগীদের পথ্য ও খাদ্য সরবরাহ করা এবং দুর্ঘটনা মোকাবেলার জন্য সার্বক্ষনিকভাবে আ্যম্বুলেন্স গাড়ী প্রস্তত রাখার জন্য সান্তাহার জংশন ষ্টেশনে রেলওয়ে হাসপাতাল তৈরি করা হয়। স্বাধীনতার পর হাসপাতালটির জাকজমক অবস্থা থাকলেও বর্তমানে এটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম। শুধু নেই আর নেই, এমনই পরিবেশ বিরাজ করছে সান্তাহার রেলওয়ে হাসপাতালটিতে। চিকিৎসক নেই, প্রশিক্ষন প্রাপ্ত নার্স নেই, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট নেই, পরীক্ষাগার নেই, অ্যাম্বুলেন্স নেই, পর্যাপ্ত ওষুধ নেই, ইনডোর সেবা নেই। হাসপাতালটির মঞ্জুরীকৃত ৭৫ জন জনবলের স্থানে আছে কর্মরত মাত্র ২৫জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। শুণ্য পদের সংখ্যা ১৯ জন। কাগজে-কলমে ২২ শয্যা মজ্ঞুরী থাকার কথা থাকলে বর্তমানে আছে ১৩ শয্যা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ইনডোরে কোন চিকিৎসা সেবা না থাকায় রোগী ভর্তি হয়না। সেখানকার পরিবেশ ভতুড়ে ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ২ জন সহকারী সার্জন পদের চিকিৎসকের বিপরীতে একজনও কর্মরত নেই। চিকিৎসকের অনুপস্থিতে একজন ফার্মাসিস্ট শুধূ রোগীর বিবরনী শুনে ওষুধ দেয়। ইনডোর সিষ্টার ইনচার্য শুণ্য জন, কম্পিউটার অপারটের পদে ১ জন, ১ জন ড্রেসারার, ১ জন বাবুর্চি ও ১ জন মেডিসিন ক্যায়িয়ার কর্মরত আছেন। পরিচ্ছন্নতা কর্মি আছে ৪৪ জন, যাদের মধ্যে অধিকাংশ জনই সান্তাহার রেলওয়ে জংসন স্টেশনে দায়িত্ব পালন করে।

হাসপাতালটিতে সেনিটারি ইন্সপেক্টর ও জামাদার পদে নেই কোন জনবল। ২ জন খালসীর স্থলে রয়েছে ১ জন। সত্তর দশকে হাসপাতালটিতে একটি উন্নত পরীক্ষগার থাকলেও বর্তমানে তা নেই। রেলওয়ের কোন কর্মকর্তা পরিদর্শনেও আসেন না। হাসপাতালে এক সময় আলাদা কলেরা ওয়ার্ড ছিল, কিন্তু বর্তমানে তার কোন অস্তিত্ব নেই ।

হাসপাতালটির অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক আব্দুস সবুর জানান, কোন চিকিৎসক না থাকায় ১ জন ফার্মাসিস্ট দিয়ে আউটডোর চালু রাখা হয়েছে। হরিজন সম্পাদায়ের লোকবলসহ দিনে ৩০/৪০ জন রোগীর চিকিৎসা সেবা ও বিনামুল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হয়। এব্যাপারে পাকশি রেলওয়ে বিভাগীয় মেডিকেল অফিসার (ডিএমও) আনিসুল হক জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে জানান, সান্তাহার রেলওয়ে হাসপাতালটির জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, অনান্য জনবল নিয়োগসহ নানা প্রকার অবকাঠামো উন্নয়নের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. মুহম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সারাদেশে সুষম স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে চায় সরকার। এ কারণে সান্তাহার রেলওয়ে হাসপাতালসহ মোট ১০টি রেলওয়ে হাসপাতালকে স্বাস্থ্য মন্ত্রাণালয়ের সাথে যুক্ত করে উন্নত চিকিৎসাসেবা উন্মুক্ত করার পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। অচিরেই এ বিষয়ে কার্যক্রম শুরু করা হবে ।