সাজিয়ে তুলুন ঘরের ফাঁকা জায়গাগুলো

প্রকাশ : 2021-03-29 11:15:06১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

সাজিয়ে তুলুন ঘরের ফাঁকা জায়গাগুলো

অনেক সময়েই ঘরে আসবাব, প্রয়োজনীয় জিনিস রাখার পর ঘরের কোনাগুলো ফাঁকা পড়ে থাকে। এই ফাঁকা জায়গাগুলো কিছুটা অসামঞ্জস্যপূর্ণ দেখা যায় বলে ইন্টেরিয়র বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন উপায় খুঁজে ফেরেন এ জায়গাগুলো যথাযথভাবে কাজে লাগানোর। এতে ঘরটি যেমন দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠে, তেমনি এই অতিরিক্ত পড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনার মতো জায়গাটুকু ব্যবহার করতে পারলে আমাদেরই লাভ হয়। এ ছাড়া আজকালের ছোট ফ্ল্যাটবাড়িতে ঘরের আয়তনের সর্বোচ্চ ব্যবহারই আমাদের লক্ষ্য হয়ে থাকে ঘর সাজানোর সময়। তাই বাড়ির প্রতিটি ঘরেরই এই কোণগুলোর প্রতি আমাদের বিশেষ মনোযোগী হওয়া দরকার। চলুন দেখে নেওয়া যাক বেশ কিছু উপায়, যাতে ঘরের কোনাগুলো আর ফাঁকা পড়ে না থাকে।

বাড়ির প্রবেশদ্বারের পাশের দেয়ালের কোনাটি প্রায়ই আমরা দেখেও যেন না দেখার ভান করি। অথচ এই করোনার সময়ে জায়গাটিতে বাইরের কাপড়, বেল্ট, স্কার্ফ ইত্যাদি ঝোলানোর জন্য হুকযুক্ত স্ট্যান্ড বা ট্রি বসিয়ে দিলে কতই না সুবিধা হয়! এ ছাড়া নিচে বাইরের জুতা রাখার ব্যবস্থা রেখে একটি ছোট্ট তাকে বেরোনোর সময়ে অতিপ্রয়োজনীয় মাস্ক, স্যানিটাইজার, ছাতা ইত্যাদি রাখা যায়। বর্ষার দিনে ভেজা ছাতা বা রেইনকোট রাখার জন্যও এই কোনা কাজে লাগানো যায়।

এরপরই আসে বসার ঘরের কোনাগুলোর কথা। সোফা সেট, টিভি, বুক শেলফ, শোকেস ইত্যাদি রাখার পর কোনাগুলো কেমন যেন করুণভাবে চেয়ে থাকে আমাদের দিকে। এই জায়গাগুলোতে সুযোগ বুঝে গাছপ্রেমী বাগানবিলাসী মানুষেরা অনায়াসেই ট্রি পড স্ট্যান্ডে বা বহুতল ধাতব লম্বা র‍্যাকে নজরকাড়া সব সাকিউলেন্ট, ক্যাকটাস বা অন্য রকম হাউসপ্ল্যান্ট রাখতে পারেন। পলিশ করা কঞ্চি দিয়ে বানানো একটি ছোট লম্বা ফ্রেম তৈরি করে এতে একটি লতানো পাতাবাহার উদ্ভিদ তুলে দিলে একদম অন্য রকম একটা আবহ আসবে ঘরের কোণটিতে।

আজকাল ঘরের কোণে সেট করা যায়, এমন অনেক তিন কোনা ধরনের তাক, সাইড টেবিল, র‍্যাক ইত্যাদি পাওয়া যায়। ফরমাশমতো কাঠ বা পার্টিকেল বোর্ড দিয়ে তৈরিও করে নেওয়া যায় এই আসবাবগুলো। এতে একটু বিশেষ ধরনের শোপিস, স্মৃতিময় পারিবারিক ছবির ফটোফ্রেম, বই-পত্রিকা ইত্যাদি অনেক কিছুই সাজিয়ে রাখা যায়। বসার ঘরের খালি একটি কোণে সুন্দর লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা যায় টেবিল বা ওয়াল ল্যাম্প দিয়ে। বিশেষ কোনো উপলক্ষে বা লোডশেডিংয়ের সময়ও ঘরের একটি কোণে সুন্দর করে সাজানো সুগন্ধি মোমবাতির আলোয় মন ভরে উঠবে সবারই। এখন এ রকম ত্রিকোনাকার অ্যাকুয়ারিয়াম পাওয়া যায়, যা ঘরের এক কোণে রাখলে খুবই বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লাগবে দেখতে। এমনকি ইনডোর ছোট টবের মতো জলাশয়ে জলজ উদ্ভিদ রেখে তা দিয়েও ঘরের কোণটি সাজানো যায়।

শোবার ঘরের কোণগুলোকেই–বা হেলাফেলা করা কেন। কারও যদি সেলাই ফোঁড়াই বা যেকোনো ক্র্যাফটিং, যেমন কাগজ দিয়ে কুইলিং, উল বা কুরুশকাঁটার কাজ ইত্যাদির শখ থাকে, তবে শোবার ঘরের একটি খালি কোণে রীতিমতো একটি ওয়ার্ক স্টেশন বা কাজের জায়গা করে নেওয়া যায়। কয়েকটি স্টোরেজ বাক্স বা লম্বালম্বি করে কটি দেরাজযুক্ত ছোট টেবিল সাজিয়ে নিলেই সেখানে নিজের শখের কাজে ডুবে যাওয়া যায় অবসর সময়ে। বই পড়ার অভ্যাস থাকলেও শোবার ঘরের এক কোণে একটি ছোট আরামদায়ক সোফা বা আর্মচেয়ার রাখা যায়। সঙ্গে শেডযুক্ত টেবিল ল্যাম্প থাকলে ঘরের ঘুমিয়ে থাকা সঙ্গীদের কষ্ট হবে না রাত জেগে আরেকজন বই পড়লে। এই কোনার জায়গাটি লেখালেখি বা কম্পিউটারে কাজ করার জন্যও ব্যবহার করা যায় মাপমতো ডেস্ক বসিয়ে।

এখন ঘরের জায়গা দখল করে বলে প্রথাগত ড্রেসিং টেবিলের চল কমে যাচ্ছে। কিন্তু ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে বসে সময় নিয়ে খোঁপা-বিনুনি বাঁধা আর চোখের কাজল-আইলাইনার দেওয়ার মধ্যে যে কী আনন্দ, তা নারীমাত্রই জানেন। ফরমাশমতো বানিয়ে বা কিনে ছোট জায়গা নেয় কিন্তু লম্বায় উঁচু এমন ড্রেসিং টেবিল রাখা যায় এমন একটি অব্যবহৃত কোনায়। তার নিচের অংশটি খালি রাখলে তাতে অনায়াসে এঁটে যাবে একটি কুশন দেওয়া টুল। শোবার ঘরের কোনায় ত্রিপদী টুলে বা কোণ ঘেঁষে রাখা তাকেও অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে রাখা যায়।

ছোটদের ঘরের কোণগুলো ব্যবহার করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, যেন শিশুদের চলার পথে তা বাধা সৃষ্টি না করে। আর লুকোচুরি খেলার জন্যও তো কিছু কোণ খালি রাখা দরকার! তারপরও কোনায় রাখা ডলহাউস বা প্লে হাউসটি অথবা নরম আলোর সুন্দর একটি নিশিবাতি বা নাইট লাইট কিন্তু ঘরটিকে শিশুর কাছে আরও মনোরম করে তুলতে পারে। শিশুর নিত্যদিনের খেলাসামগ্রী, যেমন ক্রিকেট ব্যাট, ব্যাডমিন্টন র‍্যাকেট, বল, ব্লক, পুতুল, হাঁড়ি-পাতিল ইত্যাদি রাখার জন্য ঘরের এক কোণে একটি বড় ঝুড়ি রেখে দিলে মন্দ হয় না। এতে তারা সহজেই খেলার সময় এগুলো খুঁজে পাবে।

আজকাল ফ্ল্যাটবাড়িগুলোর রান্নাঘর এত ছোট হয় যে সেখানে কাজ করাই এক দুষ্কর ব্যাপার। আর সেই সঙ্গে বছরের বেশির ভাগ সময়জুড়ে দাবদাহ তো আছেই উপরি হিসেবে। রান্নাঘরের এক কোণে একটি ফ্যান ওয়ালে বা স্ট্যান্ডে লাগিয়ে নিলে যিনি রান্না করেন, তিনি সময়–সুযোগমতো একটু দাঁড়াতে পারেন তাঁর কাছে। কাটাকুটির জায়গাসংলগ্ন এক কোণে ফ্যানটি দিলে সবচেয়ে ভালো হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, যেন চুলায় সরাসরি বাতাস লেগে রান্নায় ব্যাঘাত না ঘটে। চা-কফি বানানোর কেটলি, ব্লেন্ডার, টোস্টার, রাইস কুকার ইত্যাদি রাখার জন্য রান্নাঘরের এক কোণে একটি শক্তপোক্ত কয়েক তলা তাক বানিয়ে রাখলে তা খুবই সুবিধাজনক হয়। আবর্জনা ফেলার মুখ ঢাকা পেডাল বিনটিও রান্নাঘরের এক কোণে রাখলেই ভালো।

বাড়ির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ বাথরুম বা ওয়াশরুম। তাই এর খালি কোনাগুলো আমাদের ভালোভাবে কাজে লাগাতে হবে। ওয়াশ রুমের এক কোনায় ভালো মানের প্লাস্টিকের ড্রয়ারে বা বাক্সে ব্লিচিং পাউডার, গুঁড়া সাবান, টয়লেট পরিষ্কারক সলিউশন ইত্যাদি ভরে শিশুদের নাগালের বাইরে রাখা যায়। আবার এক কোণে একটি হাউসপ্ল্যান্ট বা সাবান শ্যাম্পু গুছিয়ে রাখার লম্বা স্ট্যান্ড রাখলেও ভালো দেখাবে। অনেক সময় বাথরুমের এক কোনায় সেট করা যায়, এমন বিশেষ আকৃতির সিঙ্ক বা বাথটাব লাগানো হয়, যা দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি জায়গা বাঁচানোর খুব ভালো একটি উপায়।

ছোট ফ্ল্যাটটির যতটুকু জায়গা কাজে লাগানো যায়, ততটুকুই লাভ। আর কোনায় কোনায় জিনিস রাখলে ঘরের দেয়ালের পরিধি বড় মনে হয় দেখতে। আবার অভিনব সব উপায়ে ঘরের কোনাগুলো সাজিয়ে নিতে পারলে নিঃসন্দেহে তা নান্দনিকতার পরিচয় দেয়। সমঝদার অতিথির চোখে ভূয়সী প্রশংসা ঝরবেই যদি বসার ঘরে ঢুকেই তার চোখে পড়ে এক কোণে সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখা অ্যান্টিক বড় পিতলের ফুলদানি বা গ্র্যান্ড ফাদার ক্লক। খাবারঘরে এসে খাবার টেবিলের বাইরে ঘরের এক কোণে ডেজার্ট বা পানীয় পরিবেশনের আলাদা আয়োজনও মন কাড়বে সবার। ছুটির দিনে ঘরের এক কোণে রাখা দোলনা বা রকিং চেয়ারে বসে বইয়ের দুনিয়ায় ডুবে যাওয়া যায়, ভেসে যাওয়া যায় পছন্দের সংগীতের স্রোতেও।