সাংবাদিক রাহাত খান মোসাহেবি জানতেন না
প্রকাশ : 2021-05-04 16:34:34১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
একজন ২০০৯ সাল রাহাত খানকে ইত্তেফাক থেকে অব্যাহতির নামে তৎকালীন পত্রিকার মালিক সরিয়ে দিলেন। ৩৩ বছর ইত্তেফাকে কাজ করা মানুষটিকে বঞ্চিত করা হলো তার প্রাপ্য থেকে। কী তার অপরাধ আজও জানি না। সে পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হয়েছিলেন কিছুদিনের জন্য যা মঞ্জু সাহেব চান নাই। দুই ভাই ছিলেন দুই পক্ষের। প্রতিনিয়ত দ্বন্দ্ব লেগেই থাকতো ঝগড়া ঝাটি ক্ষমতা দখল নানা কোন্দল। রাহাত খানের এই ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হওয়া নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে নানান ঝামেলা মতবিরোধ। মঞ্জু সাহেব তখন আমেরিকা। তিনি চান নি রাহাত খান সম্পাদক হোক। এদিকে মঈনুল হোসেন নাছোড়বান্দা তিনি তার মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। বেচারা রাহাত খান অনেকটা চাপের মুখে সম্পাদক হলেন। এবং যে কদিন ছিলেন নানান রকম ঝামেলা পোহাতে হয়েছে মানসিক ভাবে।
আমার নিজের চোখে দেখা কত আওয়ামী লীগ বিরোধী লেখা কেটেছেটে যতটা সম্ভব আওয়ামীলীগের পক্ষে এনে পত্রিকায় ছাপানোর মত করে দিতেন এবং তার জন্য রাহাত খানকে ফোনে মঈনুল হোসেন রাগারাগি করতেন। মঈনুল হোসেন ছিলেন টোটালি আওয়ামীলীগ বিরোধী।এই অবস্থার মধ্যে পরে রাহাত খান প্রতিদিন মানসিক যন্ত্রনায় ভুগতেন।বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত প্রিয়ভাজন ছিলেন রাহাতখান।মালিকের প্রেসারে এসব লেখা ছাপা হতো আর সে এসে বলতো এখানে আর চাকরি করবো না।সারা জীবন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকা মানুষটি অমানবিক কষ্ট পেতেন।বাসায়এসে খুব মন খারাপ করে থাকতো কতদিন টেলিফোনে রাগারাগি করতো অফিসের লোকের সাথে। শেষ পর্যন্ত ইত্তেফাক ছেড়ে আসলেন শূন্য হাতে। আমি বললাম এতগুলো টাকা থেকে তোমাকে বঞ্চিত করলো তুমি কিছু করবে না?? ৩৩ টা বছর ইত্তেফাকে কাটালে আর এই তার প্রতিদান। বললাম মামলা করো বলে না উপরওয়ালা দেখবেন। খুব অভিমান হয়েছিল। আর রাহাত খান তার ব্যাক্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে কিছু করতে চান নি কোনোকালেই।
২০০৯ এর পরে অসুস্থ ছিলেন অনেকদিন। টাকার খুব দরকার। হাসপাতালে ভর্তি আমি বললাম একবার মঞ্জু সাহেবকে কি আমি ফোন করবো?? বললো না দরকার নেই। আবারও একদিন বললাম কারণ কোনো কুল পাচ্ছিলাম না। তখন ও বললো আচ্ছা দেখ একবার করে। আমার পাওনা. টাকা। আমি ফোন করলাম উনি ধরলেন বললেন আচ্ছা কাউকে অফিসে পাঠিয়ে দিন কাল, আমি দেখছি। সৌরভ জাহাঙ্গীর বলে একটি ছেলে পরের দিন গিয়ে বসে থাকলো অফিসে মঞ্জু সাহেব দেখাই করলেন না। সত্যি খুব কঠিন সময় পার করছিলাম। আমি আজ শুধু অভিশাপ দেই উপরওয়ালা যেন এর বিচার করেন। রাহাত খানের এত বছরের কস্টের টাকা যারা আত্মসাৎ করলো ঈশ্বর যেন তার বিচার করে। শুনেছি ঐ সময় আরও অনেকের টাকা উনি দিতে চান নি এবং অনেকে আবার মামলা করে আদায় করেছেন। দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্ব এমন পর্যায়ে চলে গেলো মামলায় রায় হলো ইত্তেফাক মালিকানা মঞ্জু সাহেবের এবং তৎকালীন হাটখোলা মোড়ে ইত্তেফাক ভবন মাঈনুল হোসেনের। যাই হোক একটা ভীষন কষ্ট নিয়েই তিনি গতবছর মারা গেছেন।
সেই ২০০৯ এর পর নানান কিছু করার চেষ্টা করছিলো ও। একদিন বললো বসুন্ধরা গ্রুপ একটা নতুন পত্রিকা বের করবে ঐ মালিকের সাথে দেখা করতে যাবো হয়তো ওখানে কিছু হবে। আমি বললাম হলে তো খুব ভালো হয়। দেখা করে বেশ অনেক রাতে ফিরলো ওখানেই ডিনার ছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম হলো কিছু বললো না ওখানে হবে না ওদের সাথে আমি কাজ করবো না কথাবার্তায় বুনলো না আর ছেলেটা একটা বেয়াদব ওখানে আমি কাজ করবো না।আজকের এই বসুন্ধরা গ্রুপের আলোচিত ছেলেটির কথাই বলছিলেন।
সত্যিই আজ আরও শ্রদ্ধা বেড়ে গেলো রাহাত খানের প্রতি। এমন অনেক জায়গায় রাহাত খান কাজ করতে পারেনি। স্বেচ্ছায় চলে এসেছে। মালিককে সন্তুষ্ট করে তেল দিয়ে কাজ করতে পারেনি বলে শেষ বয়সে অনেকগুলো কাজ তিনি ছেড়ে দিয়েছিলেন। সব সাংবাদিক মানেই তেল দেওয়া হুজুর হুজুর করা নয়। গর্ব করার মত যে কজন সাংবাদিক রয়েছেন তাদের মধ্যেও রাহাত খান ছিলেন অন্যতম। অর্থের বিনিময়ে তিনি কলম বেচেন নি।চাইলে তিনি শত কোটি টাকার মালিক হতে পারতেন।ঢাকা শহরে শুনেছি অনেক সাংবাদিক রিপোর্টটার এখন ফুলে ফেপে কলাগাছ। তাদের চারটা পাঁচটা বাড়ি।রাহাত খানের সামনে বসে ভালো করে কথা বলতে পারে না এমন সাংবাদিক শত কোটি টাকার মালিক। এত বছর সাংবাদিকতা করেও রাহাত খান এই মাথা গোছার ঠাঁই ছাড়া কিছুই করতে পারেনি , সেটাও করেছিলেন হাউজ বিল্ডিং লোন নিয়ে এবং আরও একটা ব্যাংক লোন রেখে গেছেন আমার মাথায়। ঈশ্বর ওপারে তাকে ভালো রাখুন। তার আত্মার শান্তি কামনা করি।