সরকারবিরোধি আন্দোলনে কূটনৈতিক সাড়া পাচ্ছে কি বিএনপি?
প্রকাশ : 2022-01-31 09:49:48১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
দলের চেয়ারপারসন অসুস্থ খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার অনুমতি দিতে সরকারকে কিছুটা ‘কূটনৈতিক চাপ’ দিতে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কাছে অনুরোধ জানায় বিএনপি। একই সঙ্গে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ করতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংস্কার, ‘দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে’ পরবর্তী সংসদ নির্বাচন আয়োজনের আন্দোলনে কূটনৈতিক সমর্থন পাওয়ার অনুরোধ করে দলটি। এখন পর্যন্ত কোনো দেশ থেকে দলীয় অনুরোধের ‘কূটনীতিক সাড়া’ তেমন পায়নি। এমনকি একসময় ‘বিএনপির সঙ্গে জোরদার কূটনৈতিক সম্পর্কের দেশ চীন ও সৌদি আরব’ থেকেও প্রত্যাশিত সাড়া মেলেনি।
গত সোমবার, ২৪ জানুয়ারি রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় ‘বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে সরকারবিরোধি আন্দোলনে কূটনৈতিক সাড়া না পাওয়ার’ বিষয়গুলো আলোচিত হয়। দলের বিদেশনীতিতে পরিবর্তন এনে ‘উদারপন্থি নেতাদের সামনে রেখে’ কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে সভায় মতামত আসে। দলটির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র মত ও পথকে এসব তথ্য জানায়।
কূটনৈতিক দায়িত্বে থাকা বিএনপির চারজন নেতা জানান, প্রতিবেশি ভারতসহ চীন, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি দেশের কাছে আবেদন জানায় দলটি। দেশগুলো থেকে এখনো তেমন ‘কূটনৈতিক সাড়া’ পায়নি। ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের কূটনৈতিক সম্পর্কে সাম্প্রতিক ‘সামান্য শিথিলতা’ দেখা দিলেও দেশটি বিএনপিকে আস্থায় নিচ্ছে না।
বিএনপি সম্পর্কে ভারতের গত একযুগের নেতিবাচক মনোভাবে এখনো সেভাবে পরিবর্তন আসেনি। বিএনপি প্রকাশ্যে ‘ভারতবিরোধিতার রাজনীতির চর্চা’ গত বছর দুয়েক ধরে আগের মতো করছে না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সবশেষ বাংলাদেশ সফরের সময় দলটি ‘চুপ’ থাকার নীতি অনুসরণ করে। এরপরও দেশটি বিএনপিকে আস্থায় না নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে দলের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে নানা আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে।
দলীয় সূত্রমতে, ভারতের সঙ্গে জোরালো কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় বিএনপি। দলের দায়িত্বপ্রাপ্তরা গত কয়েক মাস ধরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশে ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে আসছেন। বিভিন্ন কর্মকর্তা ও থিংকট্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে অতীতের ভারতবিরোধি মনোভাব থেকে বের হয়ে যাওয়ার বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করছে। দেশটির সঙ্গে লেনদেনের সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে বিএনপিকে ভারতীয় কর্মকর্তারা দলটির সঙ্গে তীব্র ভারতবিরোধি দল জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুললে তাও ছিন্ন করার ইঙ্গিত দেয় দলটি।
বিএনপিতে চীনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত দুজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে মত ও পথকে বলেন, দলের কূটনৈতিক শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েক নেতাকে নিয়ে আপত্তি আছে চীনের। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ঢাকায় তাইওয়ানের দূতাবাস খোলার অনুমতি দেওয়ার সঙ্গে জড়িত নেতারা আছেন চীনের সঙ্গে ‘সম্পর্ক পুনর্গঠনের’ সামনের সারিতে।
২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে ‘দলনেতা’ করে বিএনপির বিদেশ বিষয়ক কমিটি পুনর্গঠিত হয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে। আমীর খসরু ঢাকায় তাইওয়ানের দূতাবাস খোলার নেতৃত্বে ছিলেন। এ জন্য তাঁকে জোট সরকারের আমলে বাণিজ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে হয় বলে প্রচলিত আছে। এখনো তাঁকে সামনে রাখায় বিএনপিকে চীন আস্থায় নিতে পারছে না।
আরেকটি ঘটনা চীনের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের অবনতির জন্য দায়ি বলে মনে করেন দলটির শীর্ষনেতারা। তাদের মতে, গত ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রশংসা করেন ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। রাষ্ট্রদূতের এমন বক্তব্যে ‘ক্ষোভ’ জানায় বিএনপি। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ব্যাপারে বলা হয়, ‘চীনা রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে বিএনপি ক্ষুব্ধ, মর্মাহত’। পাশাপাশি ‘অবাধ নির্বাচন, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের স্বার্থে’ চীনকে বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি। যা ছিল কূটনৈতিকভাবে বিএনপির জন্য ভুল।
বিএনপির নিজস্ব পর্যালোচনা বলছে, গত ১০ বছর বিরোধিদলীয় রাজনীতিতে থেকে বিএনপি এমন কোনো কর্মসূচি সামনে আনতে পারেনি, যার মাধ্যমে দলটি বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। ভারসাম্যমূলক কূটনীতি দলটি চালিয়ে যেতে পারেনি। রাশিয়া ও সৌদি আরবের মতো দেশগুলোর সঙ্গে অনেক গভীর কূটনৈতিক সম্পর্ক বর্তমান সরকারের। ফলে বিএনপি সেখানেও ভিড়তে পারছে না।
জানতে চাইলে বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কমিটির প্রধান ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী মত ও পথকে বলেন, ‘বিএনপি দল পুনর্গঠনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যোগাযোগ বাড়াতে বেশি মনোযোগী। এক্ষেত্রে বিএনপির সঙ্গে কারো দূরত্ব তৈরি হয়েছে কী না, সেটা বড় নয়। বরং, সরকারের প্রহসনের নির্বাচন এখন পর্যন্ত কেউ মেনে নেয়নি।’