সরকারকে চাপে রাখতে কিছু দেশ মানবাধিকারের ধুয়া তোলে

প্রকাশ : 2022-12-22 15:31:06১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

সরকারকে চাপে রাখতে কিছু দেশ মানবাধিকারের ধুয়া তোলে

কিছু দেশ মানবাধিকারের ধোঁয়া তুলে সরকারকে চাপে রাখতে চাচ্ছে মন্তব্য করে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, যেসব দেশ মানবাধিকারের নামে বাংলাদেশ সরকারকে চাপে রাখতে চায় সেসব দেশেই চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপ নিয়ে রুশ দূতাবাসের বিবৃতি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিদেশি কূটনীতিকদের ভিয়েনা কনভেনশন মেনে চলা উচিত। রুশ দূতাবাস থেকে যে বিবৃতি দেয়া হয়েছে, সেখানে অনেকগুলো কথা বলা হয়েছে। প্রথমত কিছু কিছু দেশ যখন সরকারকে চাপে রাখতে চেষ্টা করে, তখন তারা মানবাধিকারের ধোয়া তোলে। অর্থাৎ সরকারকে চাপে রাখতে মানবাধিকারকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে। রুশ বিবৃতিতে সে কথাও এসেছে।

তিনি বলেন, সেসব দেশে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়, তারাই সবচেয়ে বেশি মানবাধিকারের কথা বলে। কিন্তু বাংলাদেশের একান্তই অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপের বিষয়টিও তুলে ধরেছে রুশ দূতাবাস। আমরা সবসময় এমন বিবৃতি দেখিনি, তবে যারা ভিয়েনা কনভেনশন অমান্য করেন, তাদের বোধোদয় হওয়ার ক্ষেত্রে এটি সহায়ক হবে।

ড. হাছান আরও বলেন, আমরা এখন বৈদেশিক ঋণ প্রত্যাখ্যান করি। বাংলাদেশ এক সময় পরমুখাপেক্ষী ছিল। বাজেট প্রণয়নের জন্য বিদেশিদের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হতো। আমাদের অর্থমন্ত্রীকে প্যারিস কনসোর্টিয়ামের বৈঠকে ছুটে যেতে হতো। আমাদের বাজেটের বেশিরভাগ অংশ আসতো অনুদান ও ঋণ থেকে। এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। আমাদের বাজেটের ৯০ শতাংশ আমরা নিজেরা জোগান দিই। বাংলাদেশ এখন নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে।

তিনি বলেন, যখন বিদেশি কূটনীতিকরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর চেষ্টা করেন, তখন তা আমাদের স্বাধীনতা ও স্বকীয়তার জন্য হস্তক্ষেপ হয়ে দাঁড়ায়। তবে যারা এই নাক গলান, তাদেরই দোষ দিচ্ছি না, বরং যারা ক্ষণে ক্ষণে বিদেশিদের কাছে ছুটে গিয়ে তাদের পদলেহন করেন, তারাও দায়ী।

মন্ত্রী বলেন, কেবল পদলেহনই নয়, তাদের (কূটনীতিকদের) বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। যারা এমনটা করেন, তারা সত্যিকারের দোষী।

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, সব সূচকেই বাংলাদেশ আজ পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। এ নিয়ে পাকিস্তানের রাজনীতিবিদদের মধ্যে প্রচণ্ড বিতর্কও হয়। স্বাধীনতার ৫১ বছর পর বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্র রচনার স্বার্থকতা আমরা দেখতে পেয়েছি। শেখ হাসিনার রাষ্ট্র পরিচালনার স্বার্থকতা সেখানেই যে আজ পাকিস্তান আমাদের দিকে তাকিয়ে নিশ্বাস ফেলে।

দলের আসন্ন সম্মেলনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কোনো পরিবর্তন আসছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের দলে জননেত্রী শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগের প্রতিটি কর্মী-সমর্থক চায় শেখ হাসিনা যতদিন বেঁচে আছেন, ততদিন দলকে নেতৃত্ব দেবেন। কেবল দলই নয়, রাষ্ট্র পরিচালনায়ও তার বিকল্প আজ বাংলাদেশে নেই। তিনি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, একটি অনুন্নত দেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করেছেন। উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার যে প্রাণান্তকর চেষ্টা, বিশ্ব সম্প্রদায় তার প্রশংসা করেছেন। তার বিকল্প আওয়ামী লীগে কেউ নেই।

আওয়ামী লীগের সম্মেলন সবসময় জাতির জন্য মাইলফলক উল্লেখ করে দলের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলন থেকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তা থাকে। এখন রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও রাজনীতির জন্য বার্তা থাকে। আর বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি এখনো মাঝে মাঝে ফণা তুলছে। আর আমাদের দেশকে নিয়ে বিএনপিসহ তার মিত্ররা যেভাবে ষড়যন্ত্র করছে, এই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের সম্মেলন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

স্বাধীনতাবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের আসন্ন সম্মেলনে দিক নিদের্শনা থাকবে বলেও জানিয়ে তিনি বলেন, একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনে আবারও ভূমিধস বিজয় ছিনিয়ে আনতে আমাদের দলকে আরও শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে সুসংগঠিত করা হবে।

সাধারণ সম্পাদক পদে যেসব নাম আছে, তার মধ্যে আপনার নামও আছে কি না- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে ড. হাছান বলেন, সম্মেলন হলে অনেক নাম আসবে। তবে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কে কোন পদে থাকবেন, তা একমাত্র তিনিই নির্ধারণ করবেন।

আপনি আশাবাদী কি না; জানতে চাইলে স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে বলেন, তিনিই (শেখ হাসিনা) ঠিক করবেন।