সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান এখন দুটি বাজার–গণপরিবহনে
প্রকাশ : 2021-04-10 09:41:24১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান এখন দুটি—বাজার এবং গণপরিবহন চালু। দেশে এখন পর্যন্ত যাঁরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের বড় অংশই হয় বাজারে গেছেন, নয়তো গণপরিবহন ব্যবহার করেছেন। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) এক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে।
প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, যেসব জায়গা থেকে মানুষ বেশি সংক্রমিত হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে উপাসনালয়, সভা-সেমিনারের মতো জনসমাগমস্থল, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে ভ্রমণ, সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া এবং পর্যটনকেন্দ্র। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের হিস্ট্রি (ইতিহাস) পর্যালোচনা করে সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ এসব উৎসস্থল চিহ্নিত করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে আইইডিসিআরের ওয়েবসাইটে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এ বিষয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক তাহমিনা শিরিন গতকাল শুক্রবার রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় সাড়ে ৮ হাজার আক্রান্ত ব্যক্তির তথ্য তাঁরা গত ৫ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত পর্যালোচনা করেছেন। এর ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি করা হয়েছে।
ওই রোগীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে আইইডিসিআর বলছে, ৬১ শতাংশ রোগীর বাজারে যাওয়া এবং গণপরিবহন ব্যবহারের ইতিহাস রয়েছে। সংক্রমিত হওয়া ব্যক্তিদের অন্তত ৩০ শতাংশ জনসমাগমস্থল (সভা–সেমিনার) এবং উপাসনালয়ে গিয়েছিলেন।
ওই সাড়ে আট হাজার রোগীর তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তাঁদের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে গিয়েছিলেন ২৬ শতাংশ, করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এসেছিলেন ২২ শতাংশ। এ ছাড়া আন্তবিভাগ ভ্রমণ করেছিলেন ১৩ শতাংশ, সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন ১২ শতাংশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আইইডিসিআর আক্রান্ত রোগীদের ‘কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং’ (রোগীর সংস্পর্শে আসা সন্দেহভাজনদের শনাক্ত করা)–এর কাজটি করে আসছে। এই সময় রোগীদের কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সেগুলোর মধ্যে আছে শনাক্ত হওয়া ব্যক্তি সংক্রমিত হওয়ার আগে কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন এবং কোথা থেকে সংক্রমিত হয়েছেন বলে ধারণা করেন। রোগীদের কাছ থেকে সংগৃহীত সব তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকেও সরবরাহ করা হয়।
দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় গত সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য সারা দেশে সরকার নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তবে এই বিধিনিষেধ ঢিলেঢালাভাবে কার্যকর হচ্ছে। প্রথমে সারা দেশে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার থেকে দেশের সব সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। গতকাল থেকে শপিং মলও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খোলা থাকছে। খোলা জায়গায় সব কাঁচাবাজার স্থানান্তরের নির্দেশনা থাকলেও তা নিশ্চিত হয়নি।
আইইডিসিআরের পরামর্শক মুশতাক হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি নিশ্চিত করতে হবে। বাজার খোলা জায়গায় নিয়ে আসার নির্দেশনা আছে, এটিও নিশ্চিত করতে হবে। কোথাও বদ্ধ জায়গায় বাজার হলে সেখানে যাতে জনসমাগম বেড়ে না যায়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে।
চার দিন ধরে দৈনিক মৃত্যু ৬০–এর বেশি
দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে নতুন রোগীর সঙ্গে মৃত্যুও খুব দ্রুত বাড়ছে। ১০ দিন ধরে প্রতিদিনই অর্ধশতাধিক মানুষের মৃত্যুর তথ্য দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই ১০ দিনে ৫৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে চার দিন ধরে মৃত্যু ৬০–এর ওপরে। এই চার দিনে ২৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট ৯ হাজার ৫৮৪ জনের মৃত্যু হলো করোনায়। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১ হাজার ৬৫৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাঁদের মধ্যে ৭ হাজার ৪৬২ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ২৩ দশশিক ৫৭ শতাংশ। আর এখন পর্যন্ত দেশে মোট ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৫৯৪ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
২০১৯ সালের শেষ দিকে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। ক্রমে তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে প্রথম সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানানো হয় গত বছরের ৮ মার্চ। প্রথম মৃত্যুর খবর জানানো হয় ১৮ মার্চ। মে মাসের শেষ দিক থেকে সংক্রমণ দ্রুত ছড়াতে থাকে। জুন–জুলাই মাসে প্রথম দফায় সংক্রমণ চূড়ায় উঠেছিল। এরপর থেকে কমতে থাকে। মাঝে কিছুদিন ঊর্ধ্বমুখী হলেও গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল। এরপর থেকে আবার ক্রমে বাড়তে শুরু করে।
গত মার্চ থেকে দ্বিতীয় ঢেউয়ের আলামত পাওয়া যাচ্ছিল। ওই মাসের মাঝামাঝি থেকে রোগী ও মৃত্যু বাড়ছিল। অন্তত দুই সপ্তাহ ‘পূর্ণ লকডাউন’ ছাড়া সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না বলে মনে করছে কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।