সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিন আজ  

প্রকাশ : 2022-07-27 09:42:31১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিন আজ  

ডিজিটাল বাংলাদেশের এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের বিপ্লবের নেপথ্যের নায়ক সজীব আহমেদ জয়ের [সজীব ওয়াজেদ জয়] ৫২তম জন্মদিন আজ  বুধবার ২৭ জুলাই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র এবং পরমাণু বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়া ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দম্পতির একমাত্র ছেলে জয় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। নানা শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ‘জয়’ ও নানি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছার দেয়া ‘সজীব’ মিলিয়ে নাম রাখা হয় সজীব ওয়াজেদ জয়। কম্পিউটার বিজ্ঞানী সজীব আহমেদ জয় বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা এ দু’জনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার নেপথ্য কারিগর হিসেবে কাজ করছেন পরিশ্রমী, মেধাবী ও পরিচ্ছন্ন জীবন-জীবিকার অধিকারী কম্পিউটার বিজ্ঞানী সজীব আহমেদ জয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার সময় মা ও বাবার সঙ্গে জার্মানিতে ছিলেন জয়। পরে তিনি মায়ের সঙ্গে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ভারতে চলে যান। তার শৈশব ও কৈশোর কাটে ভারতে। সেখানকার নৈনিতালের সেন্ট জোসেফ কলেজে লেখাপড়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক করেন। পরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোকপ্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০২ সালের ২৬ অক্টোবর ক্রিস্টিন ওভারমায়ারকে বিয়ে করেন সজীব ওয়াজেদ জয়। তাদের একটি মেয়ে আছে।

লেখাপড়া করা অবস্থায় রাজনীতির প্রতি অনুরক্ত থাকলেও জয় সক্রিয় রাজনীতিতে নাম লেখান ২০১০ সালে। ওই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিতৃভূমি রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ দেওয়া হয় তাকে, যার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে আসেন তিনি। অবশ্য ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের সময় মা শেখ হাসিনা গ্রেফতার হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত জয় নেপথ্যে থেকে মায়ের মুক্তি আন্দোলন জোরদারসহ আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে ভূমিকা রাখেন। ওই বছর [২০০৭ সালে] জয় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম কর্তৃক গ্লোবাল লিডার অব দ্য ওয়ার্ল্ড হিসেবে নির্বাচিত হন।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার বিষয়টি নিয়ে আসেন। পর্দার অন্তরালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে থেকে গোটা দেশে তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লব ঘটান এই তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। বর্তমানে দলীয় ঘরানা ছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তি, রাজনীতি, সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ, তরুণ উদ্যোক্তা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন জয়।

বিশেষ করে দেশের তরুণদের দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে আত্মনিয়োগ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কর্মসূচি ও পদক্ষেপ নিচ্ছেন তিনি। বর্তমানে বেশিরভাগ সময়েই দেশের বাইরে অবস্থান করতে থাকা সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশের রাজনীতি ও সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে ফেসবুকে মতামত ব্যক্ত করে থাকেন। ইতোমধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে তার নামডাক ছড়িয়ে পড়েছে।

দেশের আইসিটি খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, শিক্ষাগত যোগ্যতা আর পেশাগত কাজের অভিজ্ঞতা এই দুয়ের মিশেলেই দেশের আইসিটি খাতের এমন দ্রুত উন্নতিতে সফল নেতৃত্ব দিতে পেরেছেন জয়।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে ইন্টারনেটকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। ইউনিয়ন পর্যায়ের পাশাপাশি চর বা পার্বত্য অঞ্চলের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

জয়ের জন্মকথা

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সরকারের হাতে শেখ হাসিনাসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা গৃহবন্দি থাকার সময় জয়ের জন্ম হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর [২০২১] ২৭ জুলাই একটি সরকারি অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে জয়ের জন্মের ঘটনার বিবরণ দেন। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তাদের গ্রেফতার করে ধানমন্ডির ১৮ নম্বর রোডের অনেকটা পরিত্যক্ত একটি একতলা বাসায়  রাখা হয়। ওই সময় তিনি ছিলেন সন্তান সম্ভাবা। শেখ হাসিনার সন্তান প্রসবের সময় হলে পাকিস্তানি মিলিটারিরা তাকে হাসপাতালে যেতে দিলেও তার মাকে তারা যেতে দেয়নি। হাসপাতালে তখন ডা. নুর ইসলাম, সুফিয়া খাতুন, ওয়াদুদ ও মুহিত সাহেবের বোন প্রফেসর সাহেলা ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী জানান, জয়ের জন্মটা মেডিক্যাল কলেজেই হয়। জানা গেছে, নির্ধারিত সময়ের কয়েক সপ্তাহ আগে ২৭ জুলাই রাত ৮টার দিকে জয়ের জন্ম হয়।

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যখন বন্দি, সেই বন্দি অবস্থায় জয়ের জন্ম। জন্মের পর জয়কে নিয়ে আমি ফিরে আসি বাংলোতে। সেই কারাগারেই। আমি জয়কে নিয়ে বারান্দায় দাঁড়ানো। পাকিস্তানি একজন কর্নেল জিজ্ঞেস করে ওর নাম কী? আমি বলি যে ‘জয়’। তিনি বলেন, জয় মানে! তো আমি বলি—জয় মানে জয়, জয় মানে ভিক্টরি। তো খুব ক্ষেপে যায়। শিশু, তাকেও তারা গালি দেয়। কাজেই এরকম একটি পরিবেশে জয়ের জন্ম।’

ওই সময় খাওয়া-দাওয়ার কোনও ঠিক ছিল না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওকে [জয়কে] নিয়ে যখন একটা বাড়ি থেকে আরেকটা বাড়িতে শেল্টার নিই, জানি না কীভাবে বেঁচে ছিলাম, খাওয়া-দাওয়ার কোনও ঠিক ঠিকানা ছিল না। শুধু আল্লাহর কাছে দোয়া চাইতাম, আমার বাচ্চাটা যেন একটি সুস্থ বাচ্চা হয়। আমার মা সবসময়ই দোয়া করতেন।’

জয়ের নামকরণ

গত বছর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে জয়ের জন্ম সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সেদিন ছিল ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ, প্রথম সন্তান তার গর্ভে। ২৩ মার্চ আপনারা জানেন পাকিস্তান দিবস হিসেবে..., ইয়াহিয়া খান তখন ঢাকায়। সারা বাংলাদেশে কিন্তু পাকিস্তানি পতাকা কেউ ওড়ায়নি। সেইদিন সব বাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয়েছিল। ৩২ নম্বর বাড়িতেও সেদিন আমার বাবা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করলেন। যদিও পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান তখন ঢাকায় ছিল, কিন্তু তাকে সবাই অস্বীকার করেছিল।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাত, পায়ের নখ কেটে দেওয়া আমার নিয়মিত কাজ ছিল। তিনি যখন বিশ্রাম নিতে বসেছেন দুপুরে, আমি তখন একটা মগে পানি নিয়ে তার হাতের নখ কেটে দিচ্ছি। তখন তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, ভালোভাবে কেটে দে। জানি না, আর এই সুযোগ পাবি কিনা। তবে তোর ছেলে হবে। এবং সেই ছেলে স্বাধীন বাংলাদেশে জন্ম নেবে। তার নাম জয় রাখবি।’

অবশ্য এর আগে ২০১৭ সালে জয়ের জন্মদিনে নামকরণের কাহিনি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ওকে পেয়ে আমরা বন্দিখানার মধ্যে সজীবতা পেয়েছিলাম। তাই মা [বেগম মুজিব] নাম রেখেছিলেন সজীব। আর নানা [বঙ্গবন্ধু] রেখেছিলেন ‘জয়’।

কর্মসূচি

প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ জয়ের জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী যুবলীগের উদ্যোগে বিকাল ৪টায় ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে বৃক্ষরোপণ, বাদ আছর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দোয়া মাহফিল ও খাবার বিতরণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।

এছাড়া দেশব্যাপী সব মসজিদে দোয়া ও মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ অন্যান্য উপাসনালয়ে প্রার্থনা সভা এবং বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হবে।

এদিকে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের উদ্যোগে খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দুপুরে সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটা ও তার সু-স্বাস্থ্য কামনায় দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে।