সংস্কারটা ঠিক কোন জায়গায়, কীভাবে হবে, এখন পর্যন্ত তা পরিষ্কার নয়: আনু মুহাম্মদ
প্রকাশ : 2025-09-26 19:27:32১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক

অর্থনীতিবিদ সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পরে সংস্কার প্রসঙ্গে এত বেশি কথা হয়েছে, যা বিগত ৫৪ বছরেও হয়নি। সংস্কারটা ঠিক কোন জায়গায়, কীভাবে হবে, এখন পর্যন্ত তা পরিষ্কার নয়। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
আন্তসীমান্ত নদী এবং নদী সংস্কৃতি সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা সভার আয়োজক নোঙর ট্রাস্ট। সহযোগিতা করেছে ওয়াটার কিপার বাংলাদেশ, রিভারাইন পিপল, রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি), বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), তুরাগ নদী সুরক্ষা কমিটি এবং নদী রক্ষা জোট।
সংস্কার প্রসঙ্গে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সংস্কারটা ঠিক কোন জায়গাটায়, কীভাবে হবে, এটা আমরা এখন পর্যন্ত পরিষ্কারভাবে দেখিনি। একমাত্র সংবিধান নিয়ে সংস্কারের কিছু সুনির্দিষ্ট আলোচনা আমরা দেখতে পাই, এর বাইরে অন্য কোনো বিষয়ে সংস্কারের কোনো প্রকৃত উদ্যোগ আমরা দেখিনি। নদী নিয়ে তো কোনো সংস্কার কমিশনই হয়নি। অথচ নদী হচ্ছে আমাদের অস্তিত্বের অংশ এবং অস্তিত্বই থাকবে না যদি নদী না থাকে।’
সরকার নদী নিয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ তোলেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, সরকারের একটা সহজ কাজ ছিল নদী নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের সংযুক্ত করা, ১৯৯৭ সালের আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহ কনভেনশনে অনুস্বাক্ষর করা। তিনি আরও বলেন, ‘সরকার এসব কাজ করতে পারেনি।’ ভারত যেহেতু এই কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি সেহেতু বাংলাদেশের করা উচিত বলে মনে করেন আনু মুহাম্মদ।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ মনে করেন, নদীর পানিবণ্টনে ভারত কখনো বহুপক্ষীয় আলোচনায় অংশ নিতে চায় না। আবার দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় গিয়েও বাংলাদেশ ইতিপূর্বে তেমন লাভবান হতে পারেনি। সমুদ্রসীমানা নির্ধারণ নিয়ে বাংলাদেশের যে সাফল্য, সেটাও আন্তর্জাতিক আইনের সহায়তায় অর্জিত হয়েছে। তাই নদীর পানির ন্যায্যতা আদায়ে বাংলাদেশকে বিকল্প পথ খুঁজতে হবে।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, আন্তনদী সংযোগ প্রকল্প নিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, সেটার শিকার কিন্তু ভারতের জনগণ। ফারাক্কা বাঁধের বিরোধিতা করেছিলেন ভারতের মধ্যে বিশেষজ্ঞরা। ভারতের মধ্যেই এখন ফারাক্কা বাঁধ ভাঙার আওয়াজ উঠেছে।
ভারতের মধ্যে বিভিন্ন বাঁধবিরোধী মানুষের সঙ্গে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সংহতি, যোগাযোগ এবং ভারতের শাসক শ্রেণির ওপর চাপ সৃষ্টির পরামর্শ দেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
নদী বিপর্যয়ের তিন কারণ
বাংলাদেশে নদী বিপর্যয়ের জন্য সামগ্রিকভাবে তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছেন এই অর্থনীতিবিদ। এগুলো হলো, ভারতের নদী আগ্রাসন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নদী বিধ্বংসী বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প এবং বিভিন্ন ক্ষমতাবান ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর দখল ও দূষণ।
আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘যদি জলবায়ু পরিবর্তন নাও হয়, আমাদের দেশের ভেতরেই ক্ষমতাবানদের জন্য নদী বিনাশী অনেক প্রকল্প গ্রহণ হয়েছে।’
আরও বক্তব্য দেন নদী গবেষক ও লেখক আইরিন সুলতানা, অধ্যাপক কামরুজ্জামান মজুমদার, নদী ও নৌপরিবহন বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার নজীর আহমদ, হাওর অঞ্চলবাসীর আহ্বায়ক জাকিয়া শিশির, রিভারাইন পিপলের মহাসচিব শেখ রোকন প্রমুখ।