শিথিল হচ্ছে না চলমান ‘কঠোর লকডাউন’
প্রকাশ : 2021-07-28 09:36:52১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
শিথিল হচ্ছে না চলমান ‘কঠোর লকডাউন’। ৫ আগস্ট পর্যন্ত থাকবে বিধিনিষেধ। ১ আগস্ট থেকে গার্মেন্টস ও শিল্প-কারখানা খোলার জন্য মালিকদের পক্ষ থেকে যে অনুরোধ করা হয়েছিল তা নাকচ করে দিয়েছে সরকার। ‘কঠোর লকডাউনের’ পঞ্চম দিন গতকাল ঢাকাসহ সারাদেশেই বেড়েছে যানবাহন ও মানুষের চলাচল।
লকডাউন পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সচিবালয় এক সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘চলমান লকডাউন চলবেই। শিল্পপতিরা যে অনুরোধ করেছেন, তা গ্রহণ করতে পারছি না। লকডাউন ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলবে।’ সময় বাড়ানোর বিষয়ে কোন আলোচনা হয়নি। লকডাউন কার্যকরের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত ১ জুলাই দেশে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়। ঈদুল আজহা উপলক্ষে গত ১৫-২২ জুলাই পর্যন্ত তা শিথিল করা হয়। এরপর ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আবার কঠোর লকডাউন দেয়া হয়।
গার্মেন্টস ১ আগস্ট খোলার অনুরোধ ছিল মালিকদের
আগের সব লকডাউনে গার্মেন্টস ও শিল্প কারখানা খোলা থাকলেও এবার তাও বন্ধ রয়েছে। তবে পণ্য রপ্তানির ভরা মৌসুমে লকডাউন নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকা তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা লকডাউন শিথিলের আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে তৈরি পোশাক কারখানার কর্মীদের গণটিকাদানের পাশাপাশি শেষ পর্যায়ে থাকা ক্রয় আদেশের কাজগুলো সারতে সীমিতসংখ্যক শ্রমিক দিয়ে কারখানা খোলার প্রস্তাব করেছিলেন মালিকরা।
এ বিষয়ে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি শহিদুল আজিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘জুন, জুলাই ও আগস্ট মাস হচ্ছে পোশাক রপ্তানির ‘পিক টাইম’। সারা বছরের ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ রপ্তানি হয় এই সময়ে। পশ্চিমের দেশগুলোতে ক্রিসমাস ও উইন্টার সিজনের অর্ডারগুলো এখন শিপমেন্টের পর্যায়ে রয়েছে। তাই এ পরিস্থিতিতে পণ্য দিতে না পারলে তারা বিলম্বে এই পণ্যগুলো নিয়ে বিক্রি করতে পারবে না। যথাসময়ে জাহাজে পণ্য পাঠাতে না পারলে পরে কার্গো বিমানে পাঠাতে পরিবহন ব্যয় ৩/৪ গুণ বেড়ে যাওয়ার কথাও বলেন তিনি।
ক্রয়াদেশ পূরণে কাজের প্রচ- চাপ থাকায় কারখানা খুলে দেয়ার জোরালো দাবি রয়েছে বলে জানান নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘একজন কারখানা মালিক জানান, ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে তার শিপমেন্ট দেয়ার কথা ছিল। এই সময়ের মধ্যে দিতে না পারলে অর্ডার বাতিল করার হুমকি দিচ্ছেন ক্রেতা। অথচ তার কাজের ৮০ শতাংশই কমপ্লিট।’ রপ্তানিমুখী গার্মেন্ট কারখানাগুলো ১ আগস্ট থেকে খুলে দেয়ার একটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছিল বলে জানান তিনি।
ঈদের আগে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে পোশাক শিল্প খাতকে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখার সুপারিশ করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। তবে বর্তমান পরিস্থিতি দেখে গত সোমবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, পোশাক কারখানা খুলে দেয়ার কোন পরিকল্পনা সরকারের নেই।
লকডাউনের পঞ্চম দিন ঢিলেঢালা ভাব
করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান কঠোর লকডাউনের পঞ্চম দিন গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে রিকশা, ভ্যান, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলসহ ছোট ছোট যানবাহন ছিল বেশি।
লকডাউনে বাস, ট্রেন ও লঞ্চসহ সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ রাখার নির্দেশনা রয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে মানুষ বের হওয়া নিষেধ। কিন্তু কেউ তা মানছে না। নানা অজুহাতে বাইরে বের হচ্ছেন মানুষ। অনেক ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধিও মানছেন না তারা। প্রধান প্রধান সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট থাকলেও অলিগলি ছিল অনেটা স্বাভাবিক। মাস্ক ছাড়া বিভিন্ন গলিপথে আড্ডা দিতে দেখা গেছে অনেককেই।
রাজধানীর মানিকনগর এলাকায় রাজিব নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও বাজার করতে বাইরে বের হয়েছি। এ সময় দায়িত্বরত পুলিশ আমার কাছে জানতে চায়, কেন ঘর থেকে বের হয়েছি? যা সত্য তাই বলেছি পুলিশকে। প্রথমবারের মতো সতর্ক করে তারা আমাকে ছেড়ে দিয়েছেন।’
রাজধানীর মিরপুর এলাকায় নাসির উদ্দীন নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘ডাক্তারের পরামর্শে হাঁটাচলা করতে বের হয়েছি। প্রায় দুই মাস আগে স্ট্রোক করি। এতে আমার ডানহাত প্যারালাইজড হয়ে যায়। এ কারণেই মনিপুর থেকে ১০ নম্বরে একটি হাসপাতালে এসেছি থেরাপি দিতে। থেরাপি দেয়া শেষ, এখন বাসায় ফিরছি। ডাক্তার আমাকে হাঁটাচলা করতে বলেছেন। তাই আমি এখন হেঁটে হেঁটে মনিপুর যাব।’
পল্লবী জোনের ট্রাফিক এসি ইলিয়াস হোসেন জানান, ‘সড়কে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। ব্যাংক খোলা থাকায় মানুষ বাইরে আসছেন। এছাড়া অনেকে টিকা দিতে ও অসুস্থ থাকায় হাসপাতালে যাচ্ছেন। আমরা নিয়মিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। সরকারি আইন অমান্য করলেই করা হচ্ছে মামলা ও জরিমানা।’