শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিনেই যানজটের কবলে রাজধানীবাসী
প্রকাশ : 2021-09-12 13:45:32১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
দীর্ঘদিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু ও সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস হওয়ায় রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) তীব্র যানজটের কবলে পড়েছেন রাজধানীবাসী। বিভিন্ন এলাকা বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকায় যানজট ছিল লক্ষণীয়।যদিও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের দাবি, অন্যান্য দিনের মতোই স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে যানবাহন।
তবে করোনার মধ্যে চলমান ব্যবস্থার চেয়ে ট্রাফিক বিভাগ থেকে আজ আলাদা উদ্যোগ নিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলায় যান চলাচল বেড়ে যাওয়া ও যানজট সৃষ্টির আশঙ্কায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সড়কে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। স্কুল-কলেজের সামনে বা আশপাশের এলাকায় যাতে গাড়ি পার্কিং না করা হয় সেজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি বরাবর অনুরোধও জানিয়েছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ।
রোববার রাজধানীর মিরপুরের বিভিন্ন সড়কে যান চলাচলে ধীর গতি দেখা যায়। ৬০ ফিট সড়কের মনিপুর স্কুলের সামনে ছিল যানজট। এছাড়াও মিরপুর সড়কের শ্যামলী থেকে আসাদগেট পর্যন্ত ছিল দীর্ঘ যানজট। মোহাম্মদপুর আইডিয়াল স্কুল ও মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ (বালিকা শাখা) এলাকায় গাড়ির চাপ বেড়ে যায়। সকাল ১০টার পর সংশ্লিষ্ট এলাকায় অতিরিক্ত দায়িত্ব ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তাদের তৎপরতায় সড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
অন্যান্য দিনের মতো আজও বিজয় সরণি মোড়ে দীর্ঘ যানজট দেখা গেছে। ট্রাফিক সিগনালের কারণে প্রত্যেকটি লেনে গাড়ির চাপ বেড়ে যায়।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিজয় সরণি মোড়ে দেখা যায়, ট্রাফিক পুলিশ সড়কে গাড়ির চাপ সামলাতে দুটি লেনের গাড়ি একসঙ্গে ছেড়েছে। বিজয় সরণি মোড়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও নির্বিঘ্ন করতে তাদের তটস্থ থাকতে দেখা যায়।
শিকড় পরিবহনের যাত্রী পুষ্প সাহা বলেন, মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ী যেতে বাসে উঠেছি। মিরপুর থেকে ফার্মগেট আসতেই এক ঘণ্টা শেষ। যাত্রাবাড়ী যেতে কতক্ষণ লাগবে জানি না।
ড্রাইভার্স ট্রেনিং সেন্টারের চেয়ারম্যান এবং পরিবহন বিশেষজ্ঞ মো. নুরনবী শিমু বলেন, মিরপুর ডিওএইচএস থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যেতে আজ সাড়ে চার ঘণ্টা লেগেছে। জ্যামের কারণে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়েছে। এমন যানজট গত ছয় মাসেও দেখিনি। স্কুল-কলেজ খুলে যাওয়া ও অন্যান্য কারণে রাজধানীতে তীব্র যানজট আজ।
শেরেবাংলা নগর ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট মোর্তজা মোশাররফ বলেন, আজ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। যানজট হতে পারে, সড়কে সড়কে গাড়ির সংখ্যা বাড়তে পারে- এমন ধারণা ছিল। তবে সেভাবে এর প্রভাব পড়েনি। অন্যান্য দিনের মতোই চলছে যানবাহন। তবে গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। ট্রাফিক বিভাগ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ কাজ করছেন। মূল সড়কের সঙ্গে লাগোয়া অলি-গলি মুখেও ট্রাফিক পুলিশ অবস্থান করছেন। যাতে অহেতুক বিশৃঙ্খলা তৈরি না হয়। পরিস্থিতি আপাতত স্বাভাবিক।
উত্তরা ও মধ্য বাড্ডার মধ্যে গাড়ির চাপ খুবই বেশি। থেমে থেমে চলছে যানবাহন। উত্তর বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্কুল ও মধ্য বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের হেঁটে স্কুলে যেতে দেখা যায়। ফুটপাত থেকে সড়ক- সর্বত্র যানবাহন আর মানুষ।
রাজধানী মতিঝিল, বক চত্বর, আইডিয়াল স্কুল সংলগ্ন এলাকাতেও যানজট ছিল লক্ষণীয়। সংশ্লিষ্ট এলাকায় সড়কে নির্মাণ কাজ ও রিক্সার দাপটে সড়কে যানজট তৈরি হয়েছে বলে দাবি ট্রাফিক পুলিশের।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. মুনিবুর রহমান বলেন, করোনাকে জয় করে ৫৪৩ দিন পর আজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। দীর্ঘদিন পর সরাসরি ক্লাসরুমে ফিরল শিক্ষার্থীরা। স্বাভাবিকভাবেই রাজধানীতে দীর্ঘদিন পর বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। তবে ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ায় যানজট ভোগান্তিতে রূপ নেয়নি।
তিনি বলেন, আজ অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ একযোগে মোতায়েন করা হয়েছে। স্কুল-কলেজ যেসব এলাকায় বেশি সেখানে অতিরিক্ত ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও যানজট নিরসনের জন্য ডাইভারসন বাড়ানো হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের রেকার গাড়ির সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। যেসব এলাকায় প্রায় সময়ই যানজট লেগে থাকে সেসব স্থানে আমরা যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে ট্রাফিক কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা নিতে বলেছি।
ডিএমপির এই অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, স্কুল-কলেজ কেন্দ্রিক যাতে অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং করা না হয় সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালক, প্রিন্সিপাল, প্রধান শিক্ষক ও কমিটিগুলোকে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। সার্বিক প্রচেষ্টায় আজ তেমন কোনো ট্রাফিক বিড়ম্বনা তৈরি হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
রাজধানীর বিমান বন্দর সড়ক, মিরপুর রোড, প্রগতি সরণিসহ প্রধান সড়কগুলোর পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বহুল এলাকায় যানবাহনের চাপ বেশি ছিল। স্টপেজগুলো ছাড়াও যেখানে সেখানে বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠানো নামানোয় সড়ক বিশৃঙ্খল অবস্থায় ছিল। ধানমন্ডি, বেইলি রোড, মতিঝিল, প্রগতি সরণি, মিরপুর, মোহাম্মদপুরসহ স্কুলবহুল এলাকায় প্রাইভেটকার চলাচল ছিল বেশি। মোহাম্মদপুর টাউন হলের কাছে শিক্ষার্থীদের বহনকারী প্রাইভেটকারের জটের ফলে সেখানে নিয়মিত চলাচলকারী বাসগুলোও আটকা পড়ে সকাল ৮টার দিকে।
প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, জরুরি সেবা সংস্থার গাড়ি, অফিসের কর্মীদের বহনের গাড়িতে যানজটের পূর্ণ অবয়বে ফিরেছে রাজধানী। যানজট দেখা গেছে- দৈনিক বাংলা, আরামবাগ, কমলাপুর, কাকরাইল, পল্টন, শাহবাগ, বাংলা মোটর, কারওরান বাজার, ফার্মগেটেও। শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেল প্রকল্পের জন্য সড়কের বেশির ভাগ অংশ বন্ধ রয়েছে। এর সঙ্গে সকাল থেকে গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় যান চলাচলের গতি আরও কমেছে।
উল্লেখ্য যে, করোনাকে জয় করে ৫৪৩ দিন পর স্কুল-কলেজ খুলেছে। শিক্ষার্থীদের মাঝেও এক ধরনের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত। করোনার ছোবলে গত বছর ১৭ মার্চ সরকার দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছিল।
এরপর এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত একাধিকবার শ্রেণি কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু সংক্রমণের দাপটে তা আর হয়ে ওঠেনি।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, কোথাও সংক্রমণের হার একটানা দুই সপ্তাহ ৫ শতাংশে স্থিতিশীল থাকলেই সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যাবে। কিন্তু বাংলাদেশে শনিবারও সংক্রমণের হার ৭ শতাংশের ওপরে ছিল। অবশ্য এটা আগের দিনের তুলনায় প্রায় দেড় শতাংশ কম। সেই হিসাবে অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই ছাত্রছাত্রীদের সরাসরি পাঠদানের জন্য ক্লাসরুমে ফিরিয়ে আনা হলো। প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় সোয়া ৩ কোটি শিক্ষার্থী। প্রাক-প্রাথমিক স্তরে এখন শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাবে না। এখনো বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি।
রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সার্বিক প্রস্তুতি পরিদর্শনে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, খোলার সঠিক সময় মনে করেই আজ দেশে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হয়েছে। করোনা সংক্রমণের হার কমতে থাকায় কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা ধরে নিয়েছিলাম, ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংক্রমণের হার একেবারে ৫ শতাংশে না হলেও এর কাছাকাছি নেমে আসবে। তার ভিত্তিতেই কিন্তু আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেই। আমরা এই সময়টাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার যথার্থ সময় মনে করেছি।’