লৌহজংয়ে সাব-রেজিস্ট্রারের প্রত্যাহারের দাবিতে দলিল লেখকদের কর্মবিরতি

প্রকাশ : 2023-07-05 10:19:54১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

লৌহজংয়ে সাব-রেজিস্ট্রারের প্রত্যাহারের দাবিতে দলিল লেখকদের কর্মবিরতি

মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে নানা অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগে উপজেলা সাব-রেজিস্টার অফিসের সাব-রেজিস্ট্রারের প্রত্যাহারের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করছেন দলিল লেখকেরা। তাঁরা গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে সাব-রেজিস্ট্রার রাশিদা ইয়াসমিন মিলির বিরুদ্ধে এ কর্মসূচি শুরু করেছেন। সাব-রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ চেয়ে মহাপরিদর্শক, নিবন্ধন বরাবর লিখিত অভিযোগ পত্র দিয়েছেন উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সদস্যরা। অভিযোগ পত্রের অনুলিপি জেলা প্রশাসক, জেলা রেজিস্টার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দেওয়া হয়েছে। 
     
অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, দলিল লেখকদের কথায় কথায়  সাব-রেজিস্ট্রার রাশিদা ইয়াসমিন মিলি সাময়িক বরখাস্ত করেন। কারণে-অকারণে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। স্মারক নম্বর ও তারিখ ছাড়া এসব নোটিশ পাঠান তিনি। আবার নোটিশ ও বরখাস্ত প্রত্যাহারে দুই অফিস সহকারীকে দিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবি করেন তিনি। দলিল দাতা ও গ্রহীতাকে অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন তুলে হয়রানি করেন। দলিল লেখকদের জুতা দিয়ে পেটানো উচিত বলে শাসান। এমনকি দলিলের সাক্ষী ও শনাক্তকারীদের দালাল বলে গালি দেন এবং জেল খাটানোর হুমকি দেন। এ ছাড়া সাব-রেজিস্ট্রার মিলি যোগদানের পর থেকে রবিবার ও সোমবার অফিস করেন না বলে অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়। এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।  অফিসে এলেও বেলা ১১টার আগে তিনি হাজির থাকেন না। দুপুর ১২টায় এজলাসে বসে দেড়টার মধ্যে এজলাস ত্যাগ করেন। মধ্যাহ্ন ভোজের বিরতি দিয়ে বিকেল ৩টায় তিনি অফিস ত্যাগ করেন। তাঁর এ খামখেয়ালির কারণে সেবাগ্রহীতাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

গত ২২ জুন দলিল গ্রহীতা মোশারফ হোসেন দলিল লেখক বিল্লাল হোসেনকে নিয়ে সাব-রেজিস্ট্রারের সাথে দেখা করে  ৯১ লাখ ১০ হাজার টাকা মূল্যের একটি সাফ কবলা দলিল এজলাসে দাখিল করেন। কিন্তু দলিলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে সাব-রেজিস্ট্রার মিলি দলিল লেখক বিল্লালকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল, জুতাপেটা করে পুলিশে দেওয়ার হুমকি দেন এবং রেজিস্ট্রি না করে চলে যান। আর ওই দিন রেজিস্ট্রি না করায় আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন দলিল গ্রহীতা মোশারফ হোসেন। তিনি বলেন, চলতি জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে সরকার জমি দলিলের ক্ষেত্রে উৎসে কর ৩ থেকে বাড়িয়ে ৬ শতাংশ করেছে। এর ফলে ৯১ লাখ ১০ হাজার টাকা মূল্যের একটি সাফ কবলা দলিল রেজিস্ট্রি করতে আগে যেখানে ২ লাখ ৭৩ হাজার টাকা লাগতো, সেখানে দ্বিগুণ অর্থাৎ ৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। অতিরিক্ত রেজিস্ট্রি ফি বাঁচাতে গত ২৫ জুন রবিবার ও ২৬ জুন সোমবার সাব-রেজিস্ট্রারকে অফিস করার জন্য অনুরোধ করা হলেও তিনি তা রাখেননি। বরঞ্চ নিজে না গিয়ে দলিল রেজিস্ট্রির ব্যাপারে কমিশনে অফিসের অ-তালিকাভুক্ত নকল নবিশ পলাশ চন্দ্র দাস ও টিসি (ট্যাক্স কালেক্টর) মোহরারকে মোহাম্মদ সাইদুল কবিরকে পাঠান। তারা কমিশন করতে গিয়ে দলিল দাতাদের নানা অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করে বিব্রত করেন এবং দলিল গ্রহীতাকে দলিলের নকল কপি ও দলিলের রশিদ না দিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবি করেন। 
     
এ দুজন ব্যক্তিকে দিয়ে সাব-রেজিস্ট্রার মিলি নানা অনিয়ম ও অপকর্ম করিয়ে নেন। এদের ছাড়া তিনি কিছুই বোঝেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। দলিল লেখক সমিতির আহবায়ক কামাল আহমেদ জানান, সর্বশেষ গত সোমবার বেশ কয়েকজন দলিল লেখক সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে গেলে তাঁদের মুখ দেখলেই তাঁর বমি আসে বলে ভর্ৎসনা করেন। নানা সময় তিনি সেবাগ্রহীতা ও সাধারণ মানুষের সামনে দলিল লেখকদের অপমানজনক কথা বলেন। তিনিসহ সমিতির সদস্যরা সাব-রেজিস্ট্রার, টিসি মোহরার সাইদুল কবির ও অ-তালিকাভুক্ত নকল নবিশ পলাশ চন্দ্র দাসের অন্যত্র বদলি দাবি করেন। এদের বদলি না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের কর্মবিরতি চলবে বলে জানান। 
 
সাব-রেজিস্ট্রার রাশিদা ইয়াসমিন মিলি তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, সব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। দলিল লেখকরা অনৈতিক সুবিধা পায় না বলে এসব রটাচ্ছেন। অসদাচরণ ও গালাগালির বিষয়টি অস্বীকার করেন। আর ২৫ জুন ও ২৬ জুন তিনি ছুটিতে ছিলেন বলে অফিসে আসেননি। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুল আউয়াল জানান, সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পত্রের অনুলিপি পেয়েছি। খোঁজ-খবর নিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হবে। লৌহজংয়ে সাব-রেজিস্ট্রারের প্রত্যাহারের দাবিতে দলিল লেখকদের কর্মবিরতি