লকডাউনে পুঁজিবাজার: উত্থানে ফেরত সূচক, বেড়েছে লেনদেন
প্রকাশ : 2021-04-06 13:52:26১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
গত দুই দিনে কম যাওয়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দরেও ছিল উত্থান। একই সঙ্গে লেদনের হওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারে ছিল দর বৃদ্ধি ছোঁয়া।
দুই ঘণ্টার লেদনেদেই ব্যাপক বেড়েছে পুঁজিবাজারের সূচক। এর মধ্যে দিয়ে করোনাভাইরাস মহামারিতে দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার খুব ইতিবাচক অবস্থায় কেটেছে বিনিয়োগকারীদের।
সাত দিনের লকডাউনে পুঁজিবাজারের লেনদেন হচ্ছে দুই ঘণ্টা করে। লকডাউনের আগেরদিন রোববার সূচক ১৮১ পয়েন্ট পতন হয়। মঙ্গলবার সেই সূচক উদ্ধারের পাশাপাশি আরও বেড়েছে। আগের দিনের তুলনায় এ দিন সূচক বেড়েছে ১০৩ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট। লেনদেন হয়েছে ৫০০ কোটি টাকার।
গত দুই দিনে কম যাওয়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দরেও ছিল উত্থান। একই সঙ্গে লেদনের হওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারে ছিল দর বৃদ্ধি ছোঁয়া।
কেন আতঙ্ক
করোনাভাইরাস মহামরি বেড়ে যাওয়ায় মার্চ থেকেই গুজ্জন ছিল পুঁজিবাজারে, বন্ধ হবে লেনদেন। তার প্রভাবে সূচক ও লেনদেনে ছিল নেতিবাচক অবস্থা। এরমধ্যে সরকারও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করে। তারপরই আরও প্রকট হয় সেই আতঙ্ক।
পুঁজিবাজার বন্ধ হয়ে গেলে আটকে যাবে বিনিয়োগ। আর মার্জিন ঋণ নেয়া বিনিয়োগকারীরা পড়বেন সুদের ফাদে। এমন বিষয়টি যখন আলোচনায় তখন নতুন বিনিয়োগ থেকে সরে আসে সাধারণ বিনিয়োগকারী, এমনকি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও সরতে শুরু করে।
করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারের পক্ষ থেকে আরও কড়াকড়ি আরোপ করে দেয়া হয় সাত দিনের লকডাউন। শনিবার ঘোষণা দিয়ে সোমবার থেকে সরকার লকডাউন কার্যকর করে। সবচেয়ে খারাপ সময় গেছে রোববার। এ দিন পুঁজিবাজারে লেনদেন হলে সূচকের পতন হয় ১৮১ পয়েন্ট।
লকডাউন ঘোষণার দিন থেকেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে বরা হচ্ছিল, লকডাউনে বন্ধ হচ্ছে না পুঁজিবাজারের লেনদেন। ব্যাংকের সময়ের সঙ্গে সমন্বয় করে চালু রাখা হবে লেনদেন।
বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম এক কর্মশালায় রোববার বলেছিলেন, পুঁজিবাজারের লেনদেন বন্ধ হবে না। লেনদেনে যেসব শেয়ার বিক্রি হচ্ছে তা মূলত আতঙ্কিত হয়ে। তিনি আতঙ্ক না ছড়াতে সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান।
এরপর সন্ধ্যায় ব্যাংকের লেনদেনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে লকডাউন সময়কালে পুঁজিবাজারের লেনদেন দুই ঘন্টা করে নির্ধারণ করা হয়।
প্রথম দিনে লেনদেনে ৮৮ পয়েন্ট বেড়েছিল সূচক। আর লেনদেন হয়েছিল ২৩৬ কোটি টাকা। সেখান থেকে ঘুরে উল্লম্ফনের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়াল দ্বিতীয় দিনেই।
আতঙ্কে ভুল কেনা, ভুল বেচা
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ‘এতোদিন যে শেয়ার বিক্রি হয়েছে তার ছিল প্যানিক সেল। আতঙ্কে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করেছে। এখন পুঁজিবাজারে ভালো থাকায় আস্থা ফিরে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে ভুলে শেয়ার কিনে তা ভুলেই বিক্রি করে। যখন কোন কোম্পানির শেয়ার দর বাড়তে থাকে তখন অন্যের কথা শোনে বা নিজের ইচ্ছায় শেয়ার কিনে। ‘কিন্ত যখন শেয়ারের দর কমতে থাকে তখন আবার বিক্রি করে বের হয়ে যায়। এখানে লাভ হলো, কী লস হলো সেটা বিবেচনা করে না।’
এই বিশ্লেষক বলেন, ‘শেয়ার কিনে-বিক্রি করে বিশ্বের কোথাও কোন বিনিয়োগকারী কোটিপতি হয়নি। আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা বলে, তারা শেয়ার বাজারে ব্যবসা করে। ব্যবসা মানে তো কেনা-বিক্রি করা।‘কিন্ত শেয়ারবাজার হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের জায়গা। ব্যবসা করতে গেলেই লোকসান হবে।
আগ্রহ ছিল ব্যাংক, বিমায়
মঙ্গলবার লেনদেন তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বিমা ও নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ছিল বেশি। ফলে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে। লেনদেন হওয়া ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে মঙ্গলবার দর বেড়েছে ২৮টির, কমেছে তিনটির। অপরিবর্তিত পাঁচটির।
নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের তালিকাভুক্ত ২৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে ১৭টির। দর কমেছে দুইটির। আর ফ্লোর প্রাইসে আছে চারটি প্রতিষ্ঠানের।
বিমা খাত তালিকাভুক্ত ৫০টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৩৮টির। দর কমেছে ছয়টির। ফ্লোর প্রাইসে আছে ছয়টি কোম্পানির শেয়ার দর।তালিকাভুক্ত ৩৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৮টির। দর কমেছে দুটির, আর ফ্লোর প্রাইসে আছে সাতটি।
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১০৩ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২৮১ পয়েন্টে। আগের দিন সোমবার সূচক বেড়েছিল ৮৮ পয়েন্ট। ফলে দুই দিনে পুঁজিবাজারে সূচক বেড়েছে ১৯১ পয়েন্ট। যেখানে রোববার একদিনেই কমেছিল ১৮১ পয়েন্ট। এ হিসেবে বলা যায়, রোববার যে পরিমাণ সূচক পতন হয়েছিল দুইদিনে তা ফেরত এসেছে পুঁজিবাজারে।
এ ছাড়া ডিএসইর অন্য দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ২১ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২০৪ পয়েন্টে। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৪৩ দশমিক ৬০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৮৮ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৪০টির, কমেছে ১৫টির। দর পাল্টায়নি ৯১টির। মোট লেনদেন হয়েছে ৫০৮ কোটি টাকা। সোমবার ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছিল ২৩৬ কোাটি টাকা। ফলে এক দিনের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ২৭২ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মঙ্গলবার সিএএসপিআই ২৯৭ দশমিক ১১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ২৬১ পয়েন্টে। লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৪৬টির, কমেছে ১২টির। দর পাল্টায়নি ৩০টির। মোট লেনদেন হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা।