লকডাউনের অজুহাতে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির
প্রকাশ : 2021-07-30 11:32:33১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
লকডাউনের অজুহাতে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির। বেড়েছে প্রতিটি সবজির দাম। একই অবস্থা মাছের বাজারেও। কিছুটা অপরিবর্তিত আছে মুদি পণ্যের বাজার। ব্যবসায়ীদের দাবি, লকডাউনে পণ্য সরবরাহ কম, বেড়েছে পরিবহন খরচ। আর ক্রেতাদের ভাষ্য, এসব কেবলই অজুহাত।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর কারওয়ানবাজার, মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ বাজার, মিরপুর-১ নম্বর বাজার ও ভ্রাম্যমাণ বাজার ঘুরে নিত্যপণ্যের দরের এমন চিত্র দেখা গেছে।
লকডাউনের প্রথম সপ্তাহে সবজির দাম এক লাফে বেড়ে যায়। এ সপ্তাহেও কয়েকটি সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে। কমেনি মাছের দামও।
বিক্রেতাদের দাবি, রাজধানীতে নিত্যপণ্যের সবজি আসে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে। ঢাকার কাছাকাছি নবাবগঞ্জ, কেরাণীগঞ্জ থেকে কিছু সবজি আসে। তবে চলমান লকডাউনে পণ্য সরবরাহ কিছুটা কম। ফলে দামও কিছুটা বেশি।
কারওয়ানবাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো. শফি বলেন, ‘মাল (সবজি) আসে কম। ওই দিকে দামও বেশি। আবার ট্রাক ভাড়া বাড়ছে। তাই সবজির দাম বেশি।’
একই অজুহাত অপর সবজি ব্যবসায়ী মিলন মিয়ার। তিনি বলেন, ‘লকডাউনে আগের মত মাল পাই না। কম আহে। মাল কম থাকলে দামও বাড়েই। সাপ্লাই বেশি থাকলে দাম কম থাকে।’
ক্রেতাদের ভাষ্য, নিত্যপণ্যের বাজারে দাম বাড়ার বিষয়টি অনেকটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কারণে-অকারণে, বিভিন্ন অজুহাতে পণ্যের বাড়তি মূল্য হাঁকছেন ব্যবসায়ীরা। সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধকে অজুহাত বানিয়ে ক্রেতাদের পকেট কাটছেন ব্যবসায়ীরা।
মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ বাজারে সবজি কিনতে আসা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘কোন সবজিটার দাম কম? প্রতিদিনই এদের জিনিসপত্রের দাম বাড়ে।’
দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারের ঘাড়েও দোষ চাপিয়েছেন কেউ কেউ। আনোয়ার হোসেন নামে একজন ক্রেতার অভিযোগ, বাজারগুলোতে মূল্য তালিকার বোর্ড নিয়মিত লেখা হয় না। ফলে দামের বিষয়ে একটা অনাস্থা থেকেই যায়।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আনোয়ার হোসেন শিয়া মসজিদ বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী কিনতে এসে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এই বাজারে একটা মূল্য তালিকার বোর্ড ছিল। গত কয়েক বছর ধরে তা লেখা হয় না। আশপাশের অন্যান্য বাজারেও একই অবস্থা। সরকারের তো শুধু রমজান আসলে বাজারের কথা মাথায় আসে। সারা বছর কেন বাজার মনিটরিং হয় না?’
এদিকে সবজির বাজারের চড়া দরের প্রভাব পড়েছে দিনমজুর শ্রেণির মানুষের উনুনে। রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকায় ভ্রাম্যমাণ সবজির দোকানে সবজি কিনতে এসেছেন সালেহা বেগম। দাম বেশি হওয়ায় সবজি না কিনেই ফিরতে হয়েছে তাকে।
সাহেলা জানান, গৃহকর্মীর কাজ করেন তিনি। কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় তার কয়েকটি কাজ হাত ছাড়া হয়েছে। কমেছে আয়। ফলে বেশ কষ্ট করেই চলতে হচ্ছে তাকে। তার উপর বাজার দরের উর্ধগতি তার জন্য বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সালেহা বলেন, ‘ছয়ডা বাসায় কাম করতাম। চারডা থেকেই করোনার লাইগা না কইরা দিছে। দুইডা কাম আছে। অল্প কয়ডা ট্যাকা পাই। এই ট্যাকা দিয়া চলা যায় না। তাও অনেক কষ্ট কইরা চলতাছি। শাক-সবজির যেই দাম! এর লাইগা দিনে সবজি কিনি না, রাইতে কিনি। রাইতে দাম একটু কম থাকে।’
সবজির দর
গত শুক্রবার বাজারভেদে কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছিল কাঁচা মরিচের দাম। দাম উঠেছিল ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে কাঁচামরিচ।
গাজর বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে। যা গত সপ্তাহে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ১৩০ থেকে ১৮০ টাকা গুনতে হচ্ছে এক কেজি টমেটোর জন্য।
বেগুন বিক্রি হচ্ছে কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৯০ টাকা, ঝিঙা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে এক কেজি বরবটির জন্য, ঢেড়স বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, একই দাম পটলের। পেঁপে ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
আকার ও মানভেদে এক হালি কাঁচকলার জন্য ক্রেতার পকেট থেকে যাচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত।
বাজারে গোল আলু বিক্রি হচ্ছে ২২ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে।
মাছের বাজার
গত সপ্তাহে কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল রুই মাছের দাম। সপ্তাহে কেজি ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। রুই বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে। পাবদা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকায়, মৃগেল ২২০ থেকে ৩৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০ থেকে ২২০ টাকা, রূপচাঁদা বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজি দরে।
গত সপ্তাহে কেজিতে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল চিংড়ির দাম। মান ও আকারভেদে এ সপ্তাহে চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে হাজার টাকা কেজি দরে।
মাংসের বাজার
বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে দেড়শো টাকা কেজি দরে। লেয়ার মুরগি ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, ২০০ থেকে ২৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে সোনালি মুরগি।
গরুর মাংস আগের মতই ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।