রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দান বাংলাদেশের মানবিকতার উদাহরণ: জার্মান প্রেসিডেন্ট
প্রকাশ : 2021-03-23 21:21:17১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীর আয়োজনে যুক্ত হয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করলেন জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ভাল্টার স্টাইনমায়ার।
‘মুজিব চিরন্তন’-এর সপ্তম দিনের আয়োজনে মঙ্গলবার জার্মানির প্রেসিডেন্টের শুভেচ্ছা বার্তা পড়ে শোনানো হয়। যুক্তরাজ্যের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শুভেচ্ছা বার্তাও পড়ে শোনান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। এদিন ইউনেসকোর মহাপরিচালক অড্রে আজুলের ভিডিও বার্তাও প্রচার করা হয়।
দিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে পৌঁছান। এ সময় ছোট বোন শেখ রেহানা তাঁর সঙ্গে ছিলেন। অন্য দিনের মতোই মুজিব চিরন্তন টাইটেল অ্যানিমেশন ভিডিও ও থিম সং দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। পরে শুভেচ্ছা বার্তাগুলো উপস্থাপিত হয়। আলোচনা পর্বের পর ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
জার্মানির রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, গণতান্ত্রিক পন্থায় বাংলাদেশ এখন উন্নতির পথে রয়েছে। উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার রয়েছে। দারিদ্র্য দূর করে সফলতা অর্জন করেছে। আর তা সম্ভব হয়েছে দেশের নিজস্ব উদ্ভাবনী নীতির মাধ্যমে। বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি এবং মানবিক তৎপরতার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে বিশেষ করে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দানের মাধ্যমে।
তাঁর মতে, বর্তমান বৈশ্বিক সংকট এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা সম্ভব হবে কেবল একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে।
ইউনেসকোর মহাপরিচালক অড্রে আজুলে তাঁর বক্তব্য শুরু করেন বাংলায় ‘প্রিয় সুধীবৃন্দ’ বলে। তিনি বলেন, বৈশ্বিক সংকটের এই সময়ে বাংলাদেশ ও ইউনেসকোর মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই সম্পর্কের মূলে রয়েছে শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞানভিত্তিক সহযোগিতা। এ অবস্থায় বিশ্বের মানুষকে আরও ইতিবাচক মনোভাবের পরিচয় দিতে হবে।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ স্মরণ করে তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে বঙ্গবন্ধু যেভাবে মানবাধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছেন, অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তার ফলেই এসেছিল মুক্তি।
এর আগে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর স্বাগত বক্তব্য ও থিমভিত্তিক একটি ভিডিও দেখানো হয়। মঙ্গলবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘নারী মুক্তি, সাম্য ও স্বাধীনতা’। বঙ্গবন্ধুর একজন নেতা হয়ে ওঠা, বাংলার মানুষের বন্ধু হয়ে ওঠার পেছনে তাঁর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের যে অবদান, তা ভিডিওতে তুলে ধরা হয়।
মহিবুল হাসান বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, নারীদের পেছনে ফেলে রেখে দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। তাঁর সময়ে প্রথম নারী বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে নারীদের পুলিশে নিয়োগ দিয়েছিলেন। তিনি সরকারি চাকরিতে ১০ শতাংশ নারীদের জন্য কোটা বরাদ্দ রেখেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত-লাঞ্ছিত নারীদের তিনি সম্মানিত করেছিলেন।
আলোচনায় জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণকে গুরুত্বপূর্ণ সোপান হিসেবে বিবেচনা করেছেন বঙ্গবন্ধু। তিনি নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন চেয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, নারীদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া সোনার বাংলা গড়া সম্ভব নয়। ১৯৭২ সালের সংবিধানের ২৮ এর (২ নং) অনুচ্ছেদে নারীর ক্ষমতায়নের ভিত রচনা করেছে। ১৯৭২ সালে সংবিধানে নারীদের জন্য ১৫টি আসন সংরক্ষিত করার মধ্য দিয়ে যে ধারাবাহিকতার সূচনা করেছিলেন, সে ধারায় এখন জাতীয় সংসদে ৫০টি সংরক্ষিত আসন রয়েছে। বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের বীরাঙ্গনা হিসেবে মর্যাদা দেন। যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের পুনর্বাসন করেন বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। বঙ্গবন্ধুর নারী উন্নয়ন ভাবনায় কোনো সংকীর্ণতা ছিল না। তিনি বিভিন্ন ভাষণে তাঁর সংগ্রামে সহধর্মিণীর ভূমিকা তুলে ধরে বলেছিলেন নারীকে তার স্থান দিতে হবে। স্পিকার বঙ্গবন্ধুর রচিত বইয়ের লেখা থেকে উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধু লিখেছেন বিয়েতে যে ছেলে অর্থ চাইবে, কোনো মেয়ের তাকে বিয়ে করা উচিত না।