রংপুরের কাউনিয়ার তেজপাতা দেশের চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে বিদেশে
প্রকাশ : 2025-11-09 18:01:05১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় রংপুরের কাউনিয়ায় বিভিন্ন ফসলের পাশাপাশি রাস্তার ধারে, ক্ষেতের আইলে, বাড়ির আঙ্গিনায় ও জমিতে বাণিজ্যিকভাবে তেজপাতা চাষে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন কৃষক। কাউনিয়ায় বিভিন্ন গ্রামের তেজপাতা এখন দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে টেপামধুপুরসহ বিভিন্ন গ্রাম গুলোতে রাস্তার ধারে, ক্ষেতের আইলে, বাড়ির আঙ্গিনায় ও জমিতে বাণিজ্যিকভাবে তেজপাতা চাষ হচ্ছে। টেপামধুপুরে তেজপাতা চাষ হয়েছে সবচেয়ে বেশী। টেপামধুপুর ইউনিয়ন এখন তেজপাতা ইউনিয়ন নামে পরিচিতি পেয়েছে। নিলামখরিদা সদরা, রাজিব, বাজেমসকুর, বিনোদমাঝি, বুড়িরহাট গ্রামসহ বিভিন্ন গ্রামে এখন নতুন দৃশ্য। গ্রাম গুলোতে প্রায় প্রতিটি রাস্তার ধারে, ধান ক্ষেতের আইলে, বাড়ি উঠানে দেখা মিলে তেজপাতার বাগান। নারী-পুরুষ সকলে মিলে তেজপাতার চাষ, পরিচর্যা ও সংগ্রহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। বিভিন্ন ফসলের পাশাপাশি এখন জায়গা করে নিয়েছে লাভজনক মসলা জাতীয় ফসল তেজপাতা। কম খরচে অধিক লাভের ফলে তেজপাতা চাষে আগ্রহও বাড়ছে কৃষকের।
নিলামখরিদা সদরা গ্রামের কৃষক শাখাওয়াত খাঁ জানান, তেজপাতা এখন লাভ জনক ফসল। অল্প খরচে বেশী লাভের আশার আলো দেখাচ্ছে তেজপাতা। তাদের উৎপাদিত তেজপাতা ইউনানি গ্রুপ, স্কয়ার গ্রুপ, প্রাণ, পুষ্টি, তীরসহ বিভিন্ন কোম্পানির কিনে নিয়ে যায়। ধান ক্ষেতের আইলে ও রাস্তার ধারে তিনি তেজপাতা চাষ করেছেন। অনেক কৃষক এখন আগ্রহী হয়ে উঠেছে। পাইকারি ব্যবসায়ী মোজাফফর বলেন, কাউনিয়া থেকে তেজপাতা কিনে ঢাকায় পাঠাই। ঢাকায় রপ্তানিকারকরা সৌদি আরব, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি করেন। কাউনিয়ার তেজপাতার মান ভালো থাকায় চাহিদা বেশি। সারা বছরই তেজপাতা বিক্রি করা য়ায়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বাগান থেকেই কাঁচা পাতা কিনে নেন, আবার কেউ কেউ পুরো মৌসুমের জন্য চুক্তিতে বাগান ভাড়া নেয়।
কৃষক খালেক জানান, ধান, পাট চাষের চেয়ে তেজপাতা চাষে পরিশ্রম ও খরচ কম। এছারাও বেকার পড়ে থাকা ক্ষেতের আইলে এটা চাষ করা যায়, জমির কোন ক্ষতি হয় না, এটি লাভজনক। একবার চারা রোপণ করলে জীবনের বেশিরভাগ সময় ফলন পাওয়া যায়। কৃষক মোহসিন জানান, তেজপাতা গাছের পাতা গরু বা ছাগল খায় না, ফলে ক্ষতির আশঙ্কা নেই। একবার চারা লাগালে চার বছর পর থেকে পাতা সংগ্রহ করা যায়। ব্যবসায়ী রফিকুল জানান, কাউনিয়া থেকে প্রতি সপ্তাহে তেজপাতা কিনে ঢাকায় পাঠাই। প্রতি কেজি ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি হয়। উপসহকারী কৃষি অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন, টেপামধুপুর ইউনিয়নে ধান ক্ষেতে, পুকুর পাড়, রাস্তার ধারসহ ৬০ হেক্টরের বেশি জমিতে তেজপাতা চাষ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তানিয়া আকতার জানান, বেলে দোআঁশ ও দোআঁশ মাটি তেজপাতা চাষের জন্য আদর্শ। অর্থকারী ও মসলাজাতীয় উদ্ভিদ তেজপাতার অনেক ভেষজ গুণ আছে। ভেষজ ওষুধ হিসেবে এটি ব্যবহার করা হয়। এ অঞ্চলের আবহাওয়া তেজপাতা চাষের জন্য উপযোগী। তেজপাতা চাষে কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। আমরা নিয়মিত মাঠপর্যায়ে সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।