যেভাবেই হোক কিশোর গ্যাং কালচার নিয়ন্ত্রণে আনতেই হবে
প্রকাশ : 2021-10-02 15:19:18১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, যেভাবেই হোক কিশোর গ্যাং কালচার নিয়ন্ত্রণে আনতেই হবে। এটার জন্য দরকার জনসচেতনতা। আমাদের তরুণ প্রজন্মকে কোনোভাবে আমরা ব্যর্থ হতে দিতে পারি না।
শনিবার (২ অক্টোবর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে ‘কিশোর গ্যাং বৃদ্ধির কারণ’ নিয়ে ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। বিতর্ক প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।
র্যাব ডিজি বলেন, ২৭২ জনের বেশি কিশোর গ্যাং সদস্যকে আমরা আটক করেছি। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, জলদস্যুর নির্মূলে আমরা অনেক কাজ করছি। সমাজের মূল ধারায় জলদস্যু ও জঙ্গিবাদে জড়িতদের নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। অনেকে জলদস্যু ও জঙ্গিবাদের পথ থেকে ফিরে এখন স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, আমাদের গর্ব পারিবারিক বন্ধন। পারিবারিক বন্ডিংয়ের কারণে অনেক নেতিবাচক কাজে আমরা জড়াতে পারি না। এরপরও অনেক কিছু ঘটছে। কিশোররা কেন গ্যাং কালচারে জড়াচ্ছে তা খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের সবারই অনেক দায়িত্ব আছে। সবার যথাযথ ভূমিকাটা পালন করতে হবে।
২৭২ জনের বেশি কিশোর গ্যাং সদস্যকে আটকের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ কিশোর অপরাধীদের এজন্যই গ্রেফতার করতে হয়েছে যাতে কিশোর গ্যাং কালচার, কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, জলদস্যু নির্মূলে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। সমাজের মূলধারায় জলদস্যু ও জঙ্গিবাদে জড়িতদের নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। তাদের অনেকে এখন স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনকে জলদস্যু মুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছেন। সুন্দরবনে জলদস্যুতা বন্ধে র্যাব অনেক কাজ করছে। সুন্দরবনে এখন সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। আমাদের তরুণ প্রজন্মকে বিচ্যুত পথে যেতে দেওয়া যাবে না। আভিযানিক কার্যক্রমের পাশাপাশি আমাদের সচেতনতার কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, যেখানেই কিশোর গ্যাং কালচার রয়েছে সেখানে কিন্তু আমাদের তরুণ কিশোররা বিপথে পা বাড়াচ্ছে। আমাদের সামাজিক যে স্বাভাবিক আচার-আচরণ, তার বাইরে গিয়ে তারা বিচ্যুত পথে যাচ্ছে। আমরা নিশ্চয়ই মাথা ব্যথার জন্য মাথা কাটা নয়, মাথা ব্যথার ওষুধ দেব। বিচ্ছিন্নতাবোধ থেকে বের হতে হবে। দেশে বই পড়া খেলাধুলা আমাদের বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য কিন্তু সমাজের নারী-পুরুষ কিশোর-তরুণ সবারই দরকার আছে। সবাই মিলেই আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলা।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, আমাদের দেশেও এক সময় বিদেশের লোকজন কাজ করতে আসবে। আগামী ২০ বছরের মধ্যে বিদেশের মতো আমাদের দেশেও একজন ক্লিনিং লেডিও কর্মস্থল থেকে নিজ গাড়িতে সাই করে বাড়ি ফিরবেন।
র্যাব ডিজি বলেন, আমাদের কিশোর-তরুণরা যেন গর্বিত নাগরিক হয়, কোনো অপরাধে যেন না জড়ায়৷ তবেই সুন্দর, উন্নত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব। আমরা যা করতে পারিনি আমাদের আগামী দিনের প্রজন্ম যেন তা করতে পারে সেজন্য সবার ঐকান্তিক চেষ্টা, সহযোগিতা ও সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, এক সময় দেশের কিশোর-তরুণদের মধ্যে নানারকম খেলাধুলা, শিল্প-সংস্কৃতিসহ সমাজকল্যাণমূলক কাজের প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যেত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে কিশোর অপরাধ। তৈরি হচ্ছে গ্যাং কালচার। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাড়ায়-মহল্লায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা হাতাহাতি, মারামারি এমনকি খুনের ঘটনাও ঘটাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহারের কারণে কিশোর গ্যাং কালচার নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।
তিনি বলেন, টিকটকসহ বিতর্কিত বিভিন্ন অ্যাপসের অপব্যবহারের মাধ্যমে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফাঁদে ফেলা হচ্ছে অনেক কিশোরী-তরুণীকে। আর্থিক প্রলোভনে ফেলে এসব কিশোরীদের তারকা বানানোর স্বপ্ন দেখানো হয়। নিচু মানের ও অশালীনতাপূর্ণ কন্টেন্টের বেশি ব্যবহার দেখা যায় টিকটক, লাইকিসহ বেশ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সুস্থ বিনোদন ও সমাজের ইতিবাচক চিত্র উপস্থাপনের জন্য অ্যাপসগুলো তৈরি হলেও এর ব্যাপক অপব্যবহার হচ্ছে। ফলে দেখা যাচ্ছে আমাদের দেশে কিছু কিছু শিশু-কিশোর থেকে আরম্ভ করে বড়রা পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহারে আসক্ত হয়ে পড়ছে। তবে শুধুমাত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার নয়, ত্রুটিপূর্ণ সমাজব্যবস্থা, শিথিল সামাজিক বন্ধন, পারিবারিক বন্ধনের ঘাটতি, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ, সন্তানকে সময় না দেওয়া, সামাজিক অবক্ষয়, সঙ্গদোষ, মাদকের সহজলভ্যতাসহ নানা কারণে কিশোর-তরুণরা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।
হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে অবস্থানরত ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সী কিশোরদের ২০ শতাংশ হত্যা এবং ২৪ শতাংশ নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার আসামি বলে জানা যায়। এরা চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক সেবন, অস্ত্র ব্যবহার ইত্যাদি জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত। কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন সময়ে নানা দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু কিশোর গ্যাংয়ের মূল উৎপাটন করতে হলে তাদের পৃষ্ঠপোষকদের আইনের আওতায় আনতে হবে।