যন্ত্রপাতি এসেছে ৬ মাস, তবু আইসিইউ পায়নি বাগেরহাট
প্রকাশ : 2021-07-03 20:21:26১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
করোনাভাইরাস মহামারীর চাপ সামলাতে চলতি বছরের প্রথম দিকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে দশ শয্যার আইসিইউ ইউনিটের জন্য সরঞ্জাম বরাদ্দ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রায় ছয় মাস ধরে সেসব যন্ত্রপাতি পড়েই রয়েছে। বাগেরহাটের ১০০ শয্যার সদর হাসপাতালটির পাশে আরেকটি পাঁচতলা ভবন করে আড়াইশ শয্যায় উন্নীত করা হয় কয়েক বছর আগে। কিন্তু প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ না দেওয়ায় ভবনটি একপ্রকার খালি পড়ে ছিল।
সিভিল সার্জন কে এম হুমায়ুন কবির বলছেন, জনবল আর অবকাঠামোর অভাবে তারা আইসিইউ চালু করতে পারছেন না। হাসপাতালের ষষ্ঠতলায় নতুন অবকাঠামো করে সেখানে আইসিইউ চালুর পরিকল্পনা চলছে এখন। কিন্তু সেজন্যও অন্তত এক বছর সময়ের প্রয়োজন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ওই ভবনটিতে ৫০ শয্যার কোভিড ডেডিকেটেড ইউনিট চালু করে স্বাস্থ্য বিভাগ। সেখানেই করোনাভাইরাসের নমুনা পরী¶া এবং আক্রান্ত অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে এখন। কিন্তু হাসপাতালে আইসিইউ না থাকায় সঙ্কটাপন্ন রোগীদের পাঠাতে হয় খুলনায়। শ্বাসকষ্টের রোগীদের একমাত্র ভরসা সেন্ট্রাল অ·িজেন ইউনিট।
সিভিল সার্জন হুমায়ুন কবির বলেন, চলতি বছরের শুরুতে এ হাসপাতালের জন্য ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিটের সরঞ্জাম বরাদ্দ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।“সেসব হাতে পেয়েও প্রশিক্ষিত জনবল ও অবকাঠামো সংকটের কারণে চালু করা সম্ভব হয়নি। অবকাঠামো নির্মাণের জন্য দরপত্র দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে।”তিনি জানান, পাঁচতলা হাসপাতাল ভবনের ওপরে ষষ্ঠ তলায় আইসিইউ ইউনিট হবে। ষষ্ঠতলা নির্মাণের জন্য দরপত্র দিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ। কাজ শেষ হতে অন্তত এক বছর সময় লাগবে বলে তারা ধারণা করছেন। তারপর জনবল পাওয়া সাপেক্ষে আইসিইউ ইউনিটটি চালু করা যাবে।
গতবছর সংক্রমণের প্রথম ঢেউ এবং এবছর এপ্রিলে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রেণে থাকলেও মে মাসের শেষ দিকে জেলায় রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যু বাড়তে শুরু করে। এখনও জেলায় দৈনিক নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্ত রোগীর হার ৪০ থেকে ৫০ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করছে। সব মিলিয়ে বাগেরহাটে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ১৫৪ জনের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, তাদের মধ্যে ৯১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সিভিল সার্জন বলেন, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম কোভিড রোগী শনাক্ত হওয়ার পরপরই বাগেরহাটে তারা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলেন। সংক্রমণের প্রথম ঢেউ শুরুর পর হাসপাতালে রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা রাখা হয়। এখন ছোট বড় মিলিয়ে ১৫০টি অক্সিজেন সিলিন্ডারের মজুদ রয়েছে।“রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে আমরা সরকারের কাছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ইউনিটের দাবি জানালে সরকার ব্যবস্থা করে দেয়। ৫০ শয্যার কোভিড ইউনিটের প্রতিটি বেডের সঙ্গে অক্সিজেনের সংযোগ রয়েছে। এছাড়া ছয়টি হাইফ্লো নেইজল ক্যানুলা রয়েছে।”তিনি জানান, চলতি বছরের শুরুর দিকে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ট্যাঙ্ক স্থাপনের কাজ শেষ হয়। জুন মাসের প্রথম দিকেই সেখান থেকে অক্সিজেনের পাচ্ছেন রোগীরা। সেন্ট্রাল অক্সিজেন ট্যাঙ্কে সাত হাজার লিটার অক্সিজেন রাখা যায়। স্বাভাবিক ব্যবহার হলে আগামী তিন মাস পর্যন্ত ওই অক্সিজেনে চলার কথা।
অক্সিজেনের সঙ্কট আপাতত না থাকলেও জনবলের সঙ্কট আছে জানিয়ে বাগেরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মো. মিরাজুল করিম বলেন, ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে গত দুই দশক ধরে একশ শয্যার হাসপাতাল পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমান সরকারের সময়ে তা আড়াইশ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। কিন্তু সেই অনুপাতে কর্মী নেই।
মূল হাসপাতালে সিনিয়র ও জুনিয়র কনস্যালটেন্টের ১২টি পদের বিপরীতে রয়েছেন পাঁচজন। ১৫ জন মেডিকেল কর্মকর্তার বিপরীতে রয়েছেন ৩ জন।
আর ৫০ শয্যার কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল চালুর পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সেখানে ২২ জন চিকিৎসক এবং ৫০ জন নার্স দিয়েছে। তারাই সেখানে নিয়মিত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।