মোল্লাকান্দিতে নৌকা-বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের দিনভর সংঘর্ষে গোলাগুলি

প্রকাশ : 2021-11-14 20:39:51১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

মোল্লাকান্দিতে নৌকা-বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের দিনভর সংঘর্ষে গোলাগুলি

আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মুন্সীগঞ্জের চরাঞ্চলের মোল্লাকান্দি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও  বিদ্রোহী (¯^তন্ত্র) প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ, ও বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। রোববার সকাল ৯টা থেকে সংঘর্ষ শুরু হলে তা ৭টি গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে দিনভর দফায় দফায় সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে। সন্ধ্যা ৬টার দিকেও থেমে থেমে দু’পক্ষের মধ্যে হামলা পাল্টা হামলা চলছে বলে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এদিকে দিনভর সংঘর্ষে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ৩০ সমর্থক আহত হয়েছে। ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে শতাধিক বসতঘর ও ২টি দোকানে। এছাড়া একটি মটরসাইকেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয় বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকরা। এ ঘটনায় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৩ জনকে আটক করেছে। বর্তমানে সংঘর্ষ থামলেও এবং পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রনে থাকলেও পুরো ইউনিয়নে দু’পক্ষে উত্তেজনা অব্যাহত থাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যে কোন সময় আবারও দুই প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে মোল্লাকান্দি ইউনিয়নে একাধিক পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকালে মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের নোয়াদ্দা গ্রামে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রিপন হোসেনের উঠান বৈঠক করার কথা ছিল। এ উঠান বৈঠক পন্ড করতে রোববার সকাল ৯টার দিকে আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মহসিনা হক কল্পনার কর্মী ও সমর্থকরা ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী মেজবাহউদ্দিন ঢালীর এলাকা মুন্সীকান্দি ও ঢালীকান্দি গ্রামে হামলা চালায়। এ হামলায় কমপক্ষে ৩০টি বসতঘর ও ২টি দোকান ভাংচুর ও ১টি মটরসাইকেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয় বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকরা। এ সময় মুর্হুমুহু ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনার জের ধরে ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নোয়দ্দা, লক্ষীদিবি, মহেশপুর, ঢালীকান্দি, আনন্দপুর, বেহেরকান্দি গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও  বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের কর্মী সমর্থকরা আনুমানিক ৩ শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ২০ সমর্থক আহত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করেন। গ্রামবাসী জানায়, কিছুক্ষন থেমে থাকলেও দুপুরের দিকে আবারও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা আবারও সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে ওঠে। এবার ইউনিয়নের ৩টি ওয়ার্ডের ৮টি গ্রামে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের  মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। উভয়পক্ষ একে অপরকে ঘায়েল করতে অগনিত গুলিবর্ষণ ও শতশত ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। অসংখ্য ককটেলের বিস্ফোরণের বিকট শব্দে গ্রামগুলেঅতে বসবাসরত নারী ও শিশুরা আতঙ্কে ঘরের দড়জা-জানালা বন্ধ করে নিরাপদে আশ্রয় নেয়। ৩টি ওয়ার্ডের ৮টি গ্রামে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি হামলায় দুই প¶ের শতাধিক ঘরবাড়ি ভাংচুর হয়েছে বলে জানা গেছে।

মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রিপন হোসেন পাটোয়ারী বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী মহসিনা হক কল্পনা সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মোল্লাকান্দির শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করতে রোববার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী মেজবাহউদ্দিন ঢালীর এলাকা মুন্সীকান্দি ও ঢালীকান্দি গ্রামে হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ৩০টি বসতঘর ও ২টি দোকান ভাংচুর করেছে।

জানতে চাইলে মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বিদ্রোহী প্রার্থী মহসিনা হক কল্পনা জানান, নৌকা মার্কার কর্মী সমর্থকদের নানা কর্মকান্ডে নির্বাচনি প্রচারণা চালাতে পারছে না। শুক্রবার তার কয়েক’শ কর্মী সমর্থকদের গ্রামছাড়া করেছে।

আ’লীগ নেতাকর্মীরা জানায়, গত ৬ নভেম্বর মোল্লাকান্দির পূর্ব মাকহাটী গ্রামে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে মোল্লাকান্দিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। এরমধ্যে শনিবার মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বিদ্রোহী প্রার্থী মহসিনা হক কল্পনা নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রিপন হোসেন পাটোয়ারির লোকজন শুক্রবার বিকেলে হামলা চালিয়ে মারধরসহ তার কর্মী-সমর্থকদের গ্রামছাড়া করার অভিযোগ করেন। তবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে বিদ্রোহী প্রার্থীর অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবী করেন মোল্লাকান্দি আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরহাদ খাঁন।

স্থানীয় সচেতন মহল ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন দিন যত ঘনিয়ে আছে, সদরের মোল্লাকান্দি ও চরকেওয়ার ইউনিয়নে নির্বাচনি সহিংসতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)  আবু বকর সিদ্দিক জানান, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রোববারের সংঘর্ষের ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।  

এ প্রসঙ্গে মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন দে বলেছেন, পুলিশ কঠোর ভুমিকায় নেমেছে। আইন-শৃক্সখলা পরিস্থিতি অবনতির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে।