মোংলায় রাব্বি ক্লিনিকের অপচিকিৎসায় সদ্য ভুমিষ্ট কন্যা শিশুর মৃত্যু
প্রকাশ : 2021-07-01 19:55:25১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
মোংলায় এক সন্তান সম্ভাবা অপরিপক্ক মায়ের জোর পুর্বক সিজার করানোর অভিযোগ উঠেছে একটি ক্লিনিকের মালিকের বিরুদ্ধে। বেশী টাকার লোভে এমনো আরো অনেক ঘটনা ঘটিয়েছে পৌর শহরের মাদ্রাসা রোডস্থ রাব্বি ক্লিনিক নামের এ প্রতিষ্ঠানের মালিক এনামুল হক। মঙ্গলবার দুপুরে সিজার করানোর পর পরই জন্ম নেয়া শিশুটি অপরিপক্ক দেখে অন্যত্র নেয়ার জন্য দ্রæত ক্লিনিক থেকে বের করে দেয় বলে অভিযোগ করেন শিশুটির বাবা আল আমিন শেখ। বুধবার (৩০ জুন) বিকালে খুলনা শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় শিশুটি মারা যায়। এব্যাপারে ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও শিশুটির বাবা আল আমিন শেখ বুধবার সন্ধ্যায় কান্না জড়িত কন্ঠে জানায়, ২৯ জুন সকাল ১০টার দিকে মোংলা মাদ্রাসা রোড এলাকায় মুক্তা ভবনে অবস্থিত রাব্বি ক্লিনিক এন্ড ডায়াগণস্টিক সেন্টারে আল্ট্রাসনোগ্রাম করানোর জন্য যান আমার প্রসুতি স্ত্রী মিনারা বেগম। সেখানে প্রথমে এক ডাক্তারের মাধ্যমে আল্ট্রাসনোগ্রাম করায় ক্লিনিক মালিক এনামুল হক। পরিক্ষা-নিরিক্ষা শেষে দ্রæত সিজার করানোর পরামর্শ দেন ক্লিনিক মালিক এনামুল। এসময় তারা সিজারে রাজি না হলে পরবর্তীতে বাচ্চা প্রসবে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে বলে ডাক্তারের বরাত দিয়ে জানান তিনি। ক্লিনিক মালিকের কথায় সমস্যার কথাশুনে সিজারের প্রস্তুতি নেয় প্রসুতি মিনারা বেগম। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সিজারের মাধ্যমে বাচ্চা প্রসাব হওয়ার পর দেখতে পায় শিশুটি অপরিপক্ক ও শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয় ভুমিষ্ট শিশুটির। এক পর্যায় সদ্য ভুমিষ্ট শিশুটিকে অন্যাত্র চিকিৎসা করানোর জন্য পরামর্শ দিয়ে ক্লিনিক মালিক সেখান থেকে বের করে দেয় বলে অভিযোগ করে শিশুটির বাবা আল-আমিন শেখ। কোন উপায় না পেয়ে দুপুর ১২টার দিকে সেখান থেকে শিশুটিকে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে তার স্বজনরা। শিশুটির অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রæত অক্সিজেন পরানো অবস্থায় তাকে খুলনা শিশু হাসপাতালে রেফার করে মোংলা উপজেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেখানে দীর্ঘ ২৪ ঘন্টা চিকিৎসা শেষে বুধবার বিকাল ৫টার দিকে চিকিৎসাধিন অবস্থায় শিশুটি মারা যায় বলে জানায় শিশুটির বাবা।
এর আগেও বহু অভিযোগ রয়েছে ক্লিনিক মালিক এনামুলের বিরুদ্ধে। রাব্বি ক্লিনিক এন্ড ডায়াগণস্টিক সেন্টারে ক্লিনিক মালিক এনামুলের ত্রুটিপূর্ণ সিজারে প্রসূতি ও নবজাতকের জীবনবিপন্নের প্রতিবাদে গত ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রয়ারী খুলনা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনও করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার মোংলার বাসিন্দা মোঃ রাজু নামের এক বাবা। সিজারের সময় ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ বিশেষ পেটের মধ্যে থেকে যাওয়ায় প্রসুতির পায়খানা ও প্রসাবের নালী ছিদ্র করে ফেলে ডাক্তার ও ক্লিনিক মালিক এনামুল।
এদিকে, এবারের ঘটনায় ক্লিনিক মালিক এনামুল হককে বাঁচাতে একটি প্রভাবশালী মহাল তৎপর হয়ে ওঠে বলেও অভিযোগ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় অনেকেই। এক পর্যায় জোর পুর্বক সিজার করানোর অভিযোগ থেকে বাঁচতে শিশুটির অসহায় পরিবারের কাছ থেকে মুচলেকা রেখে টাকা দিয়ে খুলনা শিশু হাসপাতাল থেকে মৃত শিশুটিকে ছাড়িয়ে আনার জন্য লোক পাঠায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।
মৃত শিশুটির বাবা আল আমিন আরো বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় আমার কাছ থেকে জোর পুর্বক মুচলেকা রেখেছে এনামুলসহ অপরিচিত কয়েকজন লোক। আমি গরিব ও অসহায়, রাব্বি ক্লিনিকে অপচিকিৎসায় মৃত্যু কোলে ঢলে পড়ছে আমার কন্যা শিশুটির তাজা প্রাণ। নিরুপায় হয়ে আমাদের মতো গরীব মানুষগুলো ছুটে যাই সেই মৃত্যু কূপ রাব্বি ক্লিনিক এ্যান্ড ডায়াগণস্টিক সেন্টারে। সীমাহীন ভুল চিকিৎসার পরও এযাত্রায় আমার স্ত্রী প্রাণে বেঁচে গেলেও আমার শিশুটিকে বাঁচানো গেলোনা।
এব্যাপারে মোংলা রাব্বি ক্লিনিক এ্যান্ড ডায়াগন্যাস্টিক সেন্টারে সিজার করানো সহযোগী ডাঃ মৌমুমী মৌ জানান, রাব্বি ক্লিনিকে সিজার করানো ওই প্রসুতির সহযোগী ডাক্তার হিসেবে আমি ছিলাম। কিন্তু পরিক্ষা-নিরিক্ষা করার পর সিজার করানো প্রয়োজন বলে তাকে সিজার করানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। জন্ম নেয়া শিশুটি অসুস্থ দেখা দেয়ায় তাকে অন্য হাসপাতালে নেয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
রাব্বি ক্লিনিকের মালিক এনামুল কবির বলেন, ২৯ জুন সকালে মিনারা বেগম নামের এক প্রসুতি মা আমার ক্লিনিকে আসে। অসুস্থ থাকায় সে ও তার স্বজনদের পক্ষ থেকে সিজার করানোর জন্য বললে ডাক্তার ডেকে সিজার করানো হয়েছে। তবে ভুমিষ্ট শিশুটি অসুস্থ অবস্থায় জন্ম নিলে দ্রুত তাকে খুলনা শিশু হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে, তবে আমার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ মিথ্যা বলে জানায় এনামুল।
মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার বলেন, মানুষ অসহায় অবস্থায় পড়ে ডাক্তারের কাছে যায় ভাল চিকিৎসার জন্য কিন্তুু ডাক্তার বা ক্লিনিক প্রতিষ্ঠানের যদি অপচিকিৎসায় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় অথবা বিপদে পড়ে তবে তার দায়ভার তাদেরই নিতে হবে। ইতি পুর্বে ওই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ রয়েছে তাই আজকের বিষয়টি নিয়ে কেউ অভিযোগ করলে কঠোর ব্যাবস্থা নেয়ার আশ্বাস এ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার।