মোংলায় ডুবে রয়েছে জাহাজের ভাগাড়
প্রকাশ : 2021-12-04 18:45:27১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে প্রায়ই বালুবাহী বাল্কহেড ও ফিটনেসবিহীন লাইটার জাহাজডুবির ঘটনা ঘটছে। ফলে ডুবে থাকা জাহাজের ভাগাড়ে পরিণত হয়ে হুমকিতে পড়েছে মোংলা বন্দর চ্যানেল। বিপন্ন হচ্ছে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হিসাবে, চলতি বছরে পশুর চ্যানেলে ডুবেছে সার, কয়লা ও পাথরবোঝাই ৫টি লাইটার জাহাজ এবং একটি বাল্কহেড। ২৭ ফেব্রয়ারি এমভি বিবি-১১৪৮, ৩০ মার্চ ইসফিয়া মাহিন, ১০ অক্টোবর এমভি বিউটি অব লোহাগড়া ও এমভি দেশবন্ধু এবং সর্বশেষ ১৫ নভেম্বর ডুবে যায় বাল্কহেড ফারদিন-১। এসব ঘটনার পর তদন্তে প্রমাণিত হয় সবকটি নৌযান ফিটনেসবিহীন ও আমদানি পণ্য পরিবহনের অনুপযোগী। সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর দায়িত্বে অবহেলা আর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ফিটনেসবিহীন লাইটার জাহাজ বন্দর চ্যানেলে চলাচল করতে দেওয়ায় একের পর এক ক্ষতিকর পণ্য নিয়ে লাইটারডুবির ঘটনা ঘটছে। মোংলা বন্দর র্কর্তৃপক্ষ বলছেন, বারবার লাইটার জাহাজডুবির ঘটনায় হুমকির মুখে পড়েছে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেল। অন্যদিকে পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা বলছেন, বিপন্ন হচ্ছে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য। মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছে সুন্দরবন অ লের পরিবেশ-প্রতিবেশ।
সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম জানান, মোংলা বন্দর চ্যানেলে সুন্দরবনের মধ্যে বারবার কয়লা, সার, তেল, ক্লিংকার ভর্তি জাহাজ ডুবছে। বিশেষ করে কয়লা বিষাক্ত পদার্থ। এতে সুন্দরবনের পানিসহ জলজপ্রাণী ও মাছের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি ম্যানগ্রোভ বনের প্রাণপ্রকৃতির খাদ্যচক্রের সমস্যা হচ্ছে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি কমাতে সুন্দরবনের মধ্যে পশুর চ্যানেল দিয়ে ফিটনেসবিহীন লাইটার জাহাজসহ নৌ-চলাচল বন্ধে নৌপরিবহন অধিদফতর ও বিআইডব্লিউটিএসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফখর উদ্দিন জানান, মোংলা বন্দর চ্যানেলে পণ্যবোঝাই লাইটার জাহাজডুবির পর প্রতিটি তদন্ত কমিটির রিপোর্টে দেখা গেছে, ফিটনেস না থাকা ও অতিরিক্ত পণ্যবোঝাইয়ের কারণে এসব লাইটার জাহাজ ডুবেছে। বারবার লাইটারডুবির ঘটনায় হুমকির মুখে পড়ছে মোংলা বন্দর চ্যানেল। বন্দর চ্যানেল সচল রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নৌপরিবহন অধিদফতর ও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, কেমিক্যাল ও রাসানিক পণ্যবোঝাই লাইটার জাহাজডুবিতে সুন্দরবনের গাছপালা, জলজপ্রাণীসহ প্রাণপ্রকৃতিতে কী ধরনের ক্ষতির হয়েছে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বন বিভাগের পাশাপাশি পরিবেশ অধিদফতর কাজ করছে।
নৌপরিবহন অধিদফতরের খুলনা অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আ লিক নৌযান সার্ভে ও রেজিস্ট্রেশনের মোংলার পরিদর্শক মো. আবুল কাশেম ফজলুল হক জানান, লাইটার জাহাজের পারমিট ও চালকদের সার্টিফিকেট দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। আর ওইসব লাইটার চলাচলে রুট নির্ধারণের কাজ বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ ফিটনেসবিহীন লাইটার জাহাজের রুট পারমিট বাতিল করলেই পশুর চ্যানেল রক্ষা করা সম্ভব।