মৃত্যুই মনে করিয়ে দেয়, মানুষ হয়ে বাঁচতে হবে: চঞ্চল চৌধুরী
প্রকাশ : 2021-06-08 21:51:00১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
‘একমাত্র মৃত্যুই পারে সবকিছু মুছে দিতে, মৃত্যুর চেয়ে বড় কোনো সমাপ্তি নেই।’ আজ মঙ্গলবার দুপুরে নিজের ফেসবুকে কথাগুলো লিখেছেন অভিনয়শিল্পী চঞ্চল চৌধুরী। হঠাৎ করে মৃত্যু নিয়ে কথাবার্তা কেন; কারণ জানতে চাইলে এই অভিনয়শিল্পী বললেন, ‘জীবনে তো কম সময় পার করলাম না। মৃত্যুর কথা মনে হয়, তাই দু-চার লাইন লিখে রাখি। বোধের জায়গা থেকে মাথায় যা আসে, তা–ই লিখি। কখনো কখনো ফেসবুকে পোস্ট করি।’
কথায় কথায় চঞ্চল জানালেন, সাম্প্রতিক অনেক ঘটনা, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের মৃত্যু, করোনায় আক্রান্ত পরিচিতজনের পরপারে পাড়ি জমানো—এসব তাঁকে বেশ ভাবিয়েছে। কয়েক দিন আগে ঘনিষ্ঠ বন্ধু অভিনয়শিল্পী শাহনাজ খুশির মায়ের মৃত্যুটাও তাঁকে নাড়া দিয়েছে।
চঞ্চল বললেন, ‘মৃত্যু একমাত্র সত্য, এটা আমাদের প্রতিদিন নানাভাবে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। ফেসবুক খুললেই প্রতিদিন পাঁচ-সাতজন পরিচিত, আত্মীয়স্বজন বা তাঁদের পরিচিতজনের মৃত্যুর খবর দেখতে পাই। গতকালও আমার এক আত্মীয় মারা গেছেন। এ রকম খবর প্রতি মুহূর্তে আসছে। চোখের সামনে এত মৃত্যু দেখতে হচ্ছে, যেন মৃত্যুই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। আমাদের মস্তিষ্কে এটা আর আলাদাভাবে কোনো অনুভূতি দেয় না!’
স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে এখন ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করলেও জীবনের বড় একটা সময় পাবনার কামারহাটে কাটিয়েছেন চঞ্চল চৌধুরী। গ্রামে থাকার সময় মৃত্যু নিয়ে তাঁর উপলব্ধি কেমন ছিল, কথায় কথায় তা–ও জানালেন চঞ্চল। বললেন, ‘আমরা যখন গ্রামে ছিলাম, মৃত্যু এখনকার চেয়ে কম দেখেছি। এক-দুই কিংবা ছয় মাসে একজনের মৃত্যুর খবর পেতাম। গ্রামের সবাই নড়েচড়ে বসত। হাটবাজারেও মৃত্যুটা নিয়ে কেমন যেন আতঙ্কও ছড়িয়ে পড়ত। কারও জানাজা হতো, কাউকে শ্মশানে নেওয়া হতো। দূরদূরান্ত থেকে অনেকে আসত শেষযাত্রায় মারা যাওয়া ব্যক্তিকে বিদায় জানানোর সঙ্গী হতে। তখন মানুষের মধ্যে মৃত্যুচিন্তাটা ছিল অনেক বেশি। কিন্তু এখন তা অনেক কম দেখি। তবে মৃত্যুভাবনাটা আমার মাথায় বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন সময় আসে। মৃত্যুর কথা ভাবতে ভাবতে ওই দুটি লাইন মাথায় এল, এরপর ফেসবুকে পোস্ট করলাম।’
চঞ্চল বললেন, ‘এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই, আমি যেদিন মারা যাব, সব হিসাব–নিকাশ সেদিন চুকে যাবে। মৃত্যুর পর কতজন মাতামাতি করল, তা তো আমি জানতে পারছি না। আমার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে জীবনের সবকিছু মুছে দিয়ে গেলাম। জীবনের অনেক কিছুই আমরা শুরু করি, শেষ করি। শেষ করি আবার শুরু করি। কিন্তু মৃত্যুর পর আর নতুন করে কিছু শুরুর সুযোগ নেই। মৃত্যুই সবকিছুর সমাপ্তি। মানুষটি কোথায় গেল, কী অবস্থায় আছে, পরের জীবনের এসব খবর আর আমরা কেউ জানি না।’
চঞ্চল জানালেন, মৃত্যু মানুষের যেকোনো সময় হতে পারে। সৃষ্টিকর্তা কার কপালে মৃত্যু কীভাবে লিখে রেখেছেন, কেউ জানে না। চারপাশে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব অনেকে অসুখ–বিসুখে আক্রান্ত। সব সময় ভয় হয়, কে যে কখন চলে যান। তাঁর মা–বাবা গ্রামে থাকেন। তাঁদের বয়স অনেক বেশি। বাবার বয়স ৯০ প্লাস আর মায়ের ৮০ প্লাস। তাঁদের সঙ্গে প্রতিদিন ভিডিও কলে কথা বলেন। ফোনেও কথা বলেন। সব ভাইবোনের সঙ্গে কথা বলেন। বোন–দুলাভাইয়ের অনেকেও নানান অসুখ–বিসুখে ভুগছেন। মনে হয়, কপালে যে কী আছে, সৃষ্টিকর্তাই জানেন। কার আগে যে কে চলে যাবেন, তা–ও জানেন না। চঞ্চল বলেন, ‘আমার মা–বাবা জীবিত, অথচ আমার বড় দুলাভাই আজ থেকে সাত বছর আগে মারা গেছেন। তিনি আমার মা–বাবার সন্তানতুল্য। করোনার কারণে মৃত্যুভয়টা আরও বেশি হয়। এখন তো আমরা ধরেই নিয়েছি, বাংলাদেশে প্রতিদিন ৩০-৪০-৫০ জনের মৃত্যুর খবর পাবই।’
প্রত্যেক মানুষের মৃত্যুর কথা মনে করা উচিত বলে মনে করেন চঞ্চল চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘মৃত্যুর কথা মনে থাকলে, মানুষের কল্যাণে কাজ করার ইচ্ছা তৈরি হবে। সৎ পথে থাকা যাবে, অন্যায় করার ইচ্ছা হবে না। অথচ আমরা প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে ভুলে গিয়ে স্বার্থপরের মতো যা খুশি তা–ই করছি। এই অবস্থা চলতে থাকলে ভালো মানুষ জাদুঘরেও পাওয়া যাবে না। বেশির ভাগ মানুষের এখন মনুষ্যত্বের বালাই নেই। সে জায়গায় একমাত্র মৃত্যুই মনে করিয়ে দেয়, তোমাকে মানুষ হয়ে বাঁচতে হবে। মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে।’