মুন্সীগঞ্জে ২১ ইউপিতে ভোটগ্রহণ শুরু
প্রকাশ : 2021-11-28 09:55:34১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
রোববার মুন্সীগঞ্জ সদরের ৯টি ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার ১২টিসহ দুইটি উপজেরার মোট ২১টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট গ্রহণ শুরু। এ লক্ষ্যে শনিবার দুুপুর থেকে মুন্সীগঞ্জ সদর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলা চত্ত্বর থেকে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের হাতে সরঞ্জামাদি বুঝিয়ে দিয়েছেন জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং রিটানিং কর্মকর্তারা। পরে পুলিশের কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ২১টি ইউপির প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। অন্যদিকে রাত পোহালেই রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। কিন্তু এই নির্বাচন ঘিরে রয়েছে সহিংসতার আশঙ্কা। শনিবার নির্বাচনের আগের দিনও টঙ্গিবাড়ীর কামারখাড়া ইউনিয়নে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া সদরের পঞ্চসার ইউনিয়নে কর্মী সমর্থকদের উপর হামলা, ক্যাম্প ভাংচুর ও মামলার বেড়াজালে ফেলে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী গোলাম মোস্তফাকে চাপের মধ্যে ফেলেছে আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন। এমন একাধিক কারনে আজ রোববার নির্বাচনের দিনও বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব এলাকার ভোটাররাও রয়েছে শঙ্কায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতিমধ্যে তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচন ঘিরে মুন্সীগঞ্জ সদর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের সন্ত্রাস, সংঘাত, সংঘর্ষ, সহিংসতা ও গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনায় সদরের চরকেওয়ার ইউনিয়নে ২ জনের মৃত্যু ও গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে ২০ থেকে ৩০ জন। ভাংচুর ও লুটপাট হয়েছে একাধিক বাড়ীঘর। আর যে মাত্রায় সহিংসতা হয়েছে, সেটা দেখেই নির্বাচনের দিনও সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে কেউ এই সহিংসতার দায়িত্ব নিচ্ছে না। পরস্পরকে দায়ী করে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বক্তব্য রাখছেন। ফলে এসব ঘটনায় জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও জেলা নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তারা বিব্রত এবং উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। অধিকাংশ সংঘাত ও সংঘর্ষ আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে হয়েছে বলে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
এছাড়া গত ২৫ নভেম্বর মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার শিলই ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল হাশেম লিটনের ক্যাম্পে আগুন দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিদ্রোহী প্রার্থী পারভেজ মৃধার কর্মী সমর্থকরা মিছিল নিয়ে প্রথমে হুমকি-ধামকি দিয়ে ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে চেয়ার-টেবিল ভাংচুর করে। পরবর্তীতে রাত পৌনে ১২টার দিকে মিছিল নিয়ে যাওয়ার পথে ক্যাম্পে আগুন জালিয়ে চেয়ার টেবিল পুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে। ২৬ নভেম্বর বজ্রযোগিনী ও বেতকা ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
অপরদিকে রামপাল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকের ও ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকদের পাল্টাপাল্টি হামলায় নির্বাচনী ক্যাম্প ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই পক্ষের কমপক্ষে ৬ জন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। সিপাহীপাড়ায় ঘোড়া মার্কার ক্যাম্প ও মধ্য কাজী কসবায় নৌকা মার্কার ক্যাম্পে ভাংচুরের এ ঘটনা ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সহিংসতার প্রসঙ্গে নির্বাচন কর্মকর্তারা বলেছেন, সহিংসতা হচ্ছে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেক চেষ্টা করেও তা ঠেকাতে পারছে না। আর সহিংসতা ঠেকাতে সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও জেলা নির্বাচন অফিসের উদ্যোগে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নিয়ে প্রতিটি উপজেলায় মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। জেলা পুলিশ নির্বাচনি এলাকা গুলোতে পথসভা করেছে। কয়েকটি ইউনিয়নে সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মাঠ পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য তৎপর ছিল।
এদিকে আজ রোববার মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার ৯ টি ইউনিয়ন ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলার ১২ টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করণের লক্ষ্যে মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন পিপিএম পথসভা করেছেন। পুলিশ সুপার পথসভায় বলেছেন, সুষ্ঠু ও শান্তিকপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণের লক্ষ্যে জেলা পুলিশের কার্যপরিধি বাড়ানো হয়েছে। নির্বাচনী আচরণ-বিধি অমান্য করে কোনরূপ ঝামেলা বা আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সাধারণ ভোটাররা যাতে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দমত প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন সে বিষয়ে ভোটারদের প্রতি উৎসাহ ও আশ্বাস দেন।
মুন্সীগঞ্জ সদর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল বলেছেন, ২৮ নভেম্বরের ইউপি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ হবে। কেউ ভিন্ন পথে নির্বাচনে আসার চেষ্টা করবেন না। ভিন্ন পথে যদিও কেউ নির্বাচিত হন। তাহলে নির্বাচনের পরেও তার নির্বাচিত পদ বাতিল হয়ে পূনরায় নির্বাচন হবে।
২১টি ইউনিয়নে মোট প্রার্থী ৯০১ জন
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, আজ রোববার (২৮ নভেম্বর) মুন্সীগঞ্জ সদর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার ২১টি ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত হবে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। এসব ইউনিয়নে অংশগ্রহণ করছে মোট ৯০১ জন প্রার্থী। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন ১০৯ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৬শ’ ৭৩ জন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে প্রার্থীর সংখ্যা ২শ’ ১৯ জন।
সূত্র জানায়, মুন্সীগঞ্জ সদরের ৯টি ইউনিয়নে ২ লাখ ২১ হাজার ১৩৭ জন ভোটার এবং টঙ্গিবাড়ী উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৬৬৫ জন ভোটার নিজ নিজ এলাকার ভোট কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।