মুন্সীগঞ্জে আ'লীগের দু'পক্ষে দফায় দফায় সংঘর্ষ: ককটেল বিস্ফোরণ-ভাঙচুর, দুই গ্রাম পুরুষশূন্য

প্রকাশ : 2021-04-25 08:51:07১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

মুন্সীগঞ্জে আ'লীগের দু'পক্ষে দফায় দফায় সংঘর্ষ: ককটেল বিস্ফোরণ-ভাঙচুর, দুই গ্রাম পুরুষশূন্য

আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মুন্সীগঞ্জ সদরের চরাঞ্চলের চরকেওয়ার ইউনিয়নেরর ছোট মোল্লাকান্দি ও খাসকান্দি গ্রামে আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার বিকেল থেকে শনিবার ভোর সকাল পর্যন্ত কয়েক দফায় হামলা পাল্টা হামলা ও সংঘর্ষের সময় শতাধিক ককটেল বিস্ফোরন, গুলিবর্ষণ ও বাড়ীঘর ভাংচুর করা হয়েছে। খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণকালে হিমশিম খেয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে দুই গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করলেও কৃষি জমিতে গিয়ে দু’পক্ষ একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চালিয়েছে বলে গ্রামবাসী জানিয়েছে। সর্বশেষ শনিবার ভোর সকালে পুলিশ সর্তক অবস্থানে থাকায় খাসকান্দি গ্রামের সামছুদ্দিন হালদার গ্রুপের লোকজন প্রতিপক্ষ নজির হালদার গ্রুপের লোকজনের উপর ছোট মোল্লাকান্দি গ্রামে হামলা চালাতে ব্যর্থ হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আ’লীগ নেত্রী জেসমিস আক্তার জ্্ুই। বর্তমানে পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত দু’পক্ষের লোকজন আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় শনিবার সকাল থেকে ছোট মোল্লাকান্দি ও খাসকান্দি গ্রাম এখন পুরুষশূণ্য। বর্তমানে গ্রামে বৃদ্ধ পুরুষ, নারী ও শিশুরা অবস্থান করছে। গ্রাম দু’টিতে এখন নিরব-নিস্তব্ধ ও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ওই গ্রাম দু’টির কয়েক শতাধিক পরিবার এক অজানা আতঙ্কে রয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

গ্রামবাসী জানিয়েছে, তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত হলেও নেপথ্যে রয়েছে আসন্ন ইউপি নির্বাচন এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও বজায় রাখা। মূলত এ কারনেই গত এক বছরে দুই পক্ষের মধ্যে ৮ দফা সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত এবং অর্ধশতাধিকের বেশী বাড়ীঘর ভাংচুর হয়েছে। পাল্টাপাল্টি একাধিক মামলা আজও বিচারাধীণ। গ্রামবাসী আরও জানায়, গত বছর আলুর ট্রলি উঠানো-নামানো এবং ড্রেজার ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ছোট মোল্লাকান্দি ও খাসকান্দি গ্রামের হাওলাদার গোষ্ঠী ও বেপারী গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত হয়। খাসকান্দি গ্রামের হাওলাদার গোষ্ঠী দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে একে অপরকে ঘায়েল করতে গত বছরের ১৫ এপ্রিল থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত দুই মাসে ৩ দফা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ১৫ জুনের সংঘর্ষের খবর পেয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাকালে পুলিশের উপরও একাধিক ককটেল নিক্ষেপ করে। এতে আত্মরক্ষায় ৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে পুলিশ।

গ্রামবাসী ও পুলিশ জানায়, বিবদমান দু’পক্ষের এক পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছে সামছুদ্দিন হাওলাদার-মজিবুর বেপারী এবং অপর পক্ষে নেতৃত্বে রয়েছে নজির হাওলাদার ও মামুন হাওলাদার। আর নেপথ্যে দু’পক্ষের এক পক্ষকে শেল্টার দিচ্ছে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আফসারউদ্দিন ভুইয়া ও তার ছেলে সাদী ভুইয়া এবং অপরপক্ষকে শেল্টার দিচ্ছে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান জীবন। তাই এই দুই আ’লীগ নেতাকে নিয়ে শনিবার পুলিশ সুপার পৃথক বৈঠক করে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো আফসারউদ্দিন ভুইয়া বলেন, আসন্ন ইউপি নির্বাচনে তার ছেলে চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় পরাজয়ের ভয়ে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান জীবন একটি পক্ষকে শেল্টার দিয়ে ইউনিয়নের শান্ত পরিস্থিতিকে অশান্ত করে তুলেছে।

তবে এ অভিযোগ সঠিক নয় দাবী করে চরকেওয়ার ইউপি চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান জীবন বলেন, আ’লীগ নেতা আফসারউদ্দিন ভুইয়া ও তার ছেলে এলাকার বোমাবাজ, অস্ত্রবাজ ও মাদক ব্যবসায়ীদের শেল্টার দিয়ে চরকেওয়ার ইউনিয়নের বোমাবাজির আখড়া বানিয়ে ফেলছে।

সদর থানার ওসি আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, সংঘর্ষের ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একাধিক ককটেল উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা রুজু করেছে। এছাড়া বিবদমান দু’পক্ষ অভিযোগ দাখিল করলে তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা পুলিশ সুপার আব্দু মোমেন জানিয়েছেন, শনিবার দু’পক্ষের নেতৃত্বে থাকা সদর উপজেলা আ’লীগ সভাপতি আফসারউদ্দিন ভুইয়া এবং আ’লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান জীবনের সঙ্গে পৃথক ভাবে আলোচনা হয়েছে। তাদের দু’জনকে উত্তপ্ত পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রন করতে পুলিশকে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে।