মুন্সিগঞ্জে ঘনঘন লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন!

প্রকাশ : 2022-08-09 16:53:58১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

মুন্সিগঞ্জে ঘনঘন লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন!

মুন্সীগঞ্জ শহরে দুই ঘণ্টা করে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের রুটিন ঘোষণা করলেও লোডশেডিং করা হচ্ছে গড়ে ছয় থেকে ৭ ঘণ্টার বেশি। আর গ্রাম এলাকায় লোডশেডিং হচ্ছে শহরের প্রায় দ্বিগুণ। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে  বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের জীবন।সবেচেয়ে বেশি ভোগান্তি রয়েছে নিন্মবিত্ত ও শিক্ষার্থীরা।

মুন্সীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সুত্রে জানাযায়,মুন্সিগঞ্জে পিক আওয়ার(বিকেল ৫ টা থেকে রাত ১১) বিদ্যুতের চাহিদা ১৬০-১৬৫ মেগাওয়াট। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে গড়ে ৯৬-৯৭ মেগাওয়াট।অফ পিক আওয়ার(রাত ১১ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত) বিদ্যুতের চাহিদা ১০৫ মেগাওয়াট। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে গড়ে ৬১ মেগাওয়াট। কয়েক দিনের গরমে পিক আওয়ারে চাহিদা বেড়ে ১৭০ মেঘাওয়াট হয়েছে। চাহিদার তুলনায় ঘাটতি অর্ধেকের কাছাকাছি। 

চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের সরবরাহ কম হওয়ায় ঘন ঘন হচ্ছে লোডশেডিং। এতে ভোগান্তি বেড়েছে গ্রাহকদের।

শহরের উত্তর ইসলামপুর এলাকার এস এসসি পরিক্ষার্থী মো.সাব্বির হোসেন সোমবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে বলেন, গত রোববার দিনের সময় তিনবার এক ঘন্টা করে, সন্ধ্যায় একবার দেড় ঘন্টা, রাত পৌনে ১২ টা থেকে রাত ৩ টা পর্যন্ত দুইবার সোয়া ঘন্টা করে  দুইবার লোডশেডিং হয়েছে।এভাবে প্রতিদিন ৫-৭ বার লোডশেডিং চলছে।সন্ধ্যায় গরমে ঘরে বসে পড়তে পারিনা।রাতে ঘুমাতে পারিনা।সকালে ঘুম থেকে উঠে আবারো বিদ্যুৎ পাইনা।এভাবে কেমন করে পড়াশোনা করি।

শুধু সাব্বির নয়, এমন অবস্থা সাব্বিরের মত জেলার সব শিক্ষার্থী। লোডশেডিংয়ে  রাতের বেলা তারা ঘুমাতে পারছেন না। সকালে বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে মারাত্মকভাবে পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে তাদের। 

পঞ্চসার এলাকার নাজমা বেগম।তার দ্বিতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া একছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।তিনি বলেন,দিনের বেলা বিদ্যুৎ থাকেনা। বাচ্চাদের নিয়ে অনেক কষ্ট আছি। হাত পাখায় কতক্ষণ বাতাস করা যায়!বাচ্চারা সন্ধ্যায়পড়াশোনা করতে পারেনা। ঘনঘন লোডশেডিংয়ে রাতেও ঘুমাতে পারেনা। এজন্য সকালে ঘুম থেকে উঠে স্কুলে যেতে পারে না। এভাবে বাচ্চাদের পড়াশোনা নষ্ট হচ্ছে। এটা আর সয্য করা যাচ্ছেনা।
 
সদর উপজেলার দক্ষিণ চরমসুরা এলাকার নুরজাহান বেগম বলেন,তার ঘরে অসুস্থ স্বামী শাশুড়ি ও  স্কুল পড়ুয়া পঞ্চম শ্রেণির এক ছেলে রয়েছে। প্রতিদিন, দিনের সময় পাঁচ থেকে ছয় বার বিদ্যুৎ থাকেনা। এক-একবার বিদ্যুৎ গেলে এক থেকে দেড় ঘন্টার আগে বিদ্যুৎ আসে না। প্রচন্ড গরমে অসুস্থ মানুষ গুলো আরো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। রাতে চার-পাঁচবার বিদ্যুৎ থাকেনা। রাতে যে একটু ঘুমাবো তাও পারছিনা।

রাত জেগে থাকা ছেলেটি পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছে না। এভাবে একটি দেশ চলতে পারেনা। লোডশেডিংয়ে ভোগান্তিতে আছেন দিনমজুর শ্রেণির মানুষ জন। তাদের অবস্থা আরও শোচনীয়। 

রাজমিস্ত্রি, রিক্সা, ভ্যান চালক এবং বিভিন্ন পণ্যের ফেরিওয়ালা সহ অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, লোডশেডিং শহর থেকে গ্রাম সবজায়গায় ছড়িয়ে গেছে। শহরে যাদের টাকা আছে তাদের ঘরে চার্জার ফ্যান,নয়তো আইপিএস আছে। বিদ্যুৎ গেলে তারা সেটি দিয়ে কোনরকমে ঘুমাতে পারে।আমাদের মত গরিবদের অবস্থা নাজেহাল। না ঘুমিয়ে রাত কাটিয়ে দেই। সকাল বেলা কাজে বের হতে পারিনা। ঘুমঘুম চোখে,দুর্বল শরীরে কাজ করতে পারিনা। এ দিক দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। কাজ কম করলে বাড়িতে খাবার জোটে না। সব মিলিয়ে আমরা যে  পরিস্থিতির মধ্যে আছি তা আমাদের মত মানুষ ছাড়া আর কেউ জানে না। 

মুন্সীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহা ব্যবস্থাপক এ এইচ এম মোবারক উল্লাহ  বলেন,গরম বাড়লে চাহিদার বাড়ে।তবে চাহিদার তুলনায় আমাদের বিদ্যুৎ প্রাপ্তি কম। এ কারণে অনেকটা বাধ্য হয়েই আমাদের ঘনঘন লোডশেডিং করাতে হচ্ছে।  শহরে জেলখানা, হাসপাতাল এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে।  এতে গ্রামের তুলনায় শহরে কিছুটা লোডশেডিং কম করাতে হচ্ছে।

 ভোগান্তির বিষয়ে বলেন, সাধরণ,মধ্যবিত্তসহ সব পেশার মানুষের যেমন দুর্ভোগ বেড়েছে,আমরাও কম ভোগান্তিতে নেই। ঘনঘন লোডশেডিং করাতে গিয়ে আমাদের যন্ত্রপাতি ও নষ্ট হচ্ছে।