মুজিববর্ষে দাবি একটাই, লৌহজং রক্ষায় বাঁধ চাই 

প্রকাশ : 2021-05-11 13:59:25১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

মুজিববর্ষে দাবি একটাই, লৌহজং রক্ষায় বাঁধ চাই 

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাস রচিত হয় বিক্রমপুরের গাঁওদিয়া গ্রামের জেলেদের অবলম্বনে। মানিক বাবুর মাতুলালয় ছিল বিক্রমপুরে। কালজয়ী এই উপন্যাসে চিত্রিত হয় পদ্মাপাড়ের মানুষের দুঃখ-দুর্দশার বাস্তব চিত্র। পদ্মা যেমন তাঁর মোহনীয়তা দিয়ে মুগ্ধ করে, তেমন বিধ্বংসী রূপে কেড়ে নেয় মানুষের ঠিকানা। 

পদ্মার অপর নাম কীর্তিনাশা। রাজা রাজবল্লভের কীর্তি পদ্মার ভাঙ্গনের মুখে পড়ে ধ্বংস হয় বলে পদ্মার আরেক নাম কীর্তিনাশা। মহারাজা রাজবল্লভের জন্মস্থান তদকালীন বিক্রমপুর পরগণায়। কীর্তিনাশা রাজবল্লভের কীর্তির সাথে গ্রাস করেছে হাজারো মানুষের স্বপ্নের বসতভিটা ও কৃষি জমি। পদ্মা পৃথিবীর অন্যতম খরস্রোতা নদীর মধ্যে অন্যতম। আমাজন নদীর পরেই বিশ্বের সবচাইতে বেশি পানি প্রবাহিত হয় পদ্মা নদী দিয়ে। পদ্মার স্রোতে ভেসে যায় মানুষের আবেগে জড়িত বসতবাড়ি, সরকারি স্থাপনা। পদ্মার ভাঙ্গনের শিকার পদ্মা তীরবর্তী জনপদের অন্যতম মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলা। পদ্মার ভাঙ্গনে লৌহজং-এর মানচিত্র ক্রমশ অপসৃয়মাণ। লৌহজং নামের উৎপত্তি হয় দিখলী বাজারের লোহার ব্যবসাকে কেন্দ্র করে। ১৯৯৪ সালে পদ্মার ভাঙ্গনে পদ্মাগর্ভে পতিত হয় বাংলাদেশের অন্যতম নৌ-বন্দর দিঘলী। 

সমগ্র বাংলাদেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হলেও ঢাকার নিকটবর্তী এই জনপদের মানুষের ভাগ্যে জুটেছে কেবল অবহেলা। ২০০৪ সালে লৌহজং-এর প্রাণকেন্দ্র ঘৌড়দৌড় বাজার ভাঙ্গনের কবলে পরে এবং এর সিংহ ভাগ নদীতে বিলীন হয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি এই যে, ২০০৪ সালের পরে এ অঞ্চলে নদী শাসনের কাজ হয়েছে নগণ্য। বর্ষা মৌসুমে ফি-বছর এ জনপদের মানুষ তাদের ভিটে হারায়। যশলদিয়া, কান্দিপারা, খড়িয়া, ব্রাহ্মণগাঁও, বেজগাঁও, গাওদিয়া, ডহরি গ্রামের মানুষ প্রতিবছর পদ্মার ধ্বংসলীলা প্রত্যক্ষ করলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কিংবা প্রশাসনের ভাঙ্গন প্রশমনে কোন উদ্যোগ গ্রহণ দৃশ্যমান নয়। 

পদ্মা সেতুকে ঘিরে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবল সম্ভবনা থাকলেও তা বাস্তবে প্রতীয়মান হয়নি। পদ্মার জাজিরা প্রান্তে নদী শাসন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিকল্পনা দৃশ্যমান হলেও, লৌহজং প্রান্তের মানুষ দুর্দশার শিকার। গতবছর পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের মাত্র দুই কিলোমিটার দূরের শিমুলিয়া ঘাটে নদী ভাঙ্গন প্রত্যক্ষ করেছে মানুষ। যেই পদ্মার চরে আন্তর্জাতিক মানের অলিম্পিক স্টেডিয়াম হওয়ার কথা ছিল, সেই বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল আজ সরলরেখায় পরিণত হয়েছে। পদ্মার চরের প্রায় দুই হাজার পরিবার ভিটেহীন হয়েছে। এই চরে গবাদিপশু পালন এবং সবজি চাষের সম্ভবনায় পরিপূর্ণ থাকলেও সেই চরকে রক্ষায় কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ফলে এ অঞ্চলে সবজি ও গরুর দুধের দাম আকাশচুম্বী। 

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ডানে মেদেনীমন্ডল এবং বামে লৌহজং-এর রাস্তার অবস্থা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। শিমুলিয়া থেকে বালিগাঁও পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার রাস্তা যাতায়াতে এক ঘন্টার উপর সময় লেগে যায়। রাস্তা কোথাও মসৃণ নয়। ঘৌড়দৌড় এবং মালিরঅংক বাজারে অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে হালকা বৃষ্টিতে হাটু পানি জমে যায়। উক্ত সড়কে বেইলি ব্রিজের কারণে প্রতি শুক্রবার ঢাকার যানজট ভোগ করে লৌহজংবাসী। খাল দখলের কারণে প্রতি বছর বন্যায় পানিবন্দী হয় মানুষ, সেই সাথে ব্যহত হয় মাছে প্রজনন এবং জমিতে পলি না জমার কারণে কমছে ফসলের উৎপাদন। 

ঢাকার নিকটবর্তী হওয়ায় এবং সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার সুযোগে লৌহজং উপজেলা হতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম অর্থনৈতিক অঞ্চল।  শিমুলিয়া থেকে দীঘিরপাড় পর্যন্ত বাঁধ এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি। বাঁধ হলে নদী ভাঙ্গন বন্ধ হবে, ফলে পদ্মার তীরে গড়ে উঠবে পর্যটন। সেই সাথে পরিকল্পিত উন্নয়ন এবং সড়ক ব্যবস্থায় উন্নয়ন হলে বিনিয়োগকারীদের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠবে এই লৌহজং উপজেলা। এতে এ অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান হবে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। 

তাই যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে লৌহজংবাসীর চাওয়া দ্রুত বাঁধের কাজ বাস্তবায়ন, সড়কের উন্নয়ন, খাল অবমুক্তকরণ এবং সমন্বিত পরিকল্পিত উন্নয়ন। মুজিব বর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে লৌহজং-এর জনগনের দাবি একটি টেকসই বাঁধ।

বাঁধ আমাদের প্রাণের দাবি, বাঁধ আমাদের অধিকার
টেকসই বাঁধের অভাবে, লৌহজং-এ আসবে হাহাকার।
বাঁধে বাঁচবে বাপের ভিটা, ত্বরান্বিত হবে উন্নয়ন
বাঁধের জন্য লৌহজংবাসী, চেষ্টা করো প্রাণপণ। 
মুজিববর্ষে আমাদের দাবি একটাই 
বাপের ভিটা রক্ষায়, পদ্মায় বাঁধ চাই।