মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি গণহত্যাকে স্বীকৃতির প্রস্তাব মার্কিন কংগ্রেসে
প্রকাশ : 2022-10-16 10:33:48১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি গণহত্যাকে স্বীকৃতির প্রস্তাব করেছেন দুজন মার্কিন আইনপ্রণেতা। প্রস্তাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে গণহত্যার স্বীকৃতি দেয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। সেইসঙ্গে একাত্তরের গণহত্যার জন্য পাকিস্তান সরকারকে বাংলাদেশের জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রস্তাব এবং যেসব অপরাধী এখনো বেঁচে আছে তাদের বিচার করার জন্যও আহ্বান জানানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি গণহত্যাকে স্বীকৃতির প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ বলছে, গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে কূটনৈতিক প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।
আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন আইনপ্রণেতাদের এমন প্রস্তাবে বসে থাকবে না পাকিস্তান। সে দেশের অপচেষ্টা ঠেকাতে বাংলাদেশকে আরো অনেক বেশি তৎপর হতে হবে। গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে ভারত-ভূটানসহ বন্ধুরাষ্ট্রগুলোকে সঙ্গে নিয়ে এগুতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে গত শুক্রবার কংগ্রেসম্যান রো খান্না এবং কংগ্রেসম্যান স্টিভ চ্যাবট একাত্তরে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশে চালানো গণহত্যার নিন্দা জানিয়ে স্বীকৃতি দেয়ার দাবিতে প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রস্তাবের রেজুলেশন শিরোনাম হচ্ছে- ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যার স্বীকৃতি’।
একাত্তরে পাকিস্তানের স্বশস্ত্র বাহিনী বাঙালি ও হিন্দুদের ওপর যে সহিংসতা চালিয়েছে তাকে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানানো হয় রেজুলেশনে।
এছাড়া পাকিস্তানকে বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার জন্য এবং যেসব অপরাধী এখনো বেঁচে আছে তাদের বিচার করার জন্যও আহ্বান জানানো হয় এতে। ১৯৭০ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নির্বাচনে জয়লাভ এবং পরবর্তীতে ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর সঙ্গে তার আলোচনা ব্যর্থ হয় জানিয়ে রেজুলেশনে বলা হয়, জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তার জেনারেলদের
বলেছিল ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা করো এবং বাকিরা আমাদের হাত চাটবে। এতে আরো বলা হয়, ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে এবং সামরিক বাহিনী ও উগ্র ইসলামিক দলের সহায়তায় অপারেশন সার্চলাইট শুরু করে।
রিপাবলিকান দলের সদস্য স্টিভ চ্যাবট টুইটে লিখেন, ‘১৯৭১ সালের বাংলাদেশে চালানো গণহত্যার ঘটনা ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না। আমার ওহিও অঙ্গরাজ্যর সহকর্মীর সহযোগিতায় বাঙালি ও হিন্দুদের ওপর চালানো নৃশংসতা বিশেষ করে যার কিছু কিছু ক্ষেত্রে গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে, তাকে স্বীকৃতি দেয়ার আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছি।’
এরপরের টুইটে স্টিভ চ্যাবট লিখেন, ‘গণহত্যার শিকার লাখো মানুষের স্মৃতিকে আমাদের বছরের পর বছর ধরে মুছে যেতে দেয়া উচিত নয়। এ গণহত্যার স্বীকৃতি ঐতিহাসিক রেকর্ডকে সমৃদ্ধি করবে। এটা হলে দেশবাসীকে শিক্ষিত করবে। সঙ্গে সঙ্গে অপরাধীদের এই বার্তা দেবে- এ ধরনের অপরাধ সহ্য করা হবে না কিংবা কেউ ভুলে যাবে না।’
অন্যদিকে রো খান্না টুইটে লেখেন, ১৯৭১ সালে বাঙালি গণহত্যার স্মরণে প্রথম প্রস্তাব তোলেন স্টিভ চ্যাবট। এ প্রস্তাবে আমাদের সময়ের সবচেয়ে বিস্মৃত গণহত্যার শিকার লাখো জাতিগত বাঙালি এবং হিন্দু নিহত হয়েছেন কিংবা বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি গণহত্যাকে স্বীকৃতির প্রস্তাব আমাদের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক দিক মন্তব্য করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ভোরের কাগজকে বলেন, তারা বাংলাদেশের গণহত্যাকে উপলব্ধি করে; এই পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় সম্পর্কে তাদের প্রস্তাবকে আমরা স্বাগত জানাই। তাদের এই প্রস্তাবে আবারো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের মতো নিষ্ঠুর অপরাধের বিষয়টি সামনে এসেছে। মন্ত্রী বলেন, দুই মার্কিন আইনপ্রণেতার এই প্রস্তাবকে সামনে রেখে আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা আরো বাড়বে। বন্ধুরাষ্ট্রসহ প্রতিটি রাষ্ট্রের সমর্থন আদায়ে আমাদের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
কেন গণহত্যার স্বীকৃতি প্রয়োজন? : বিশ্লেষকদের মতে, সব বিচারেই পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশের গণহত্যা বিশ্বের ইতিহাসে বৃহৎ গণহত্যা। একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সামরিক অভিযানে প্রাণ হারিয়েছেন ৫০ হাজার নিরীহ মানুষ। সংখ্যার দিক থেকে বড় গণহত্যা চালায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের গেস্টাপো বাহিনী। পাঁচ বছরে তারা প্রায় ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করে। গেস্টাপো বাহিনীর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় বছরে গড়ে প্রায় ১২ লাখ মানুষ। আর বাংলাদেশ মাত্র ৮ মাস ২২ দিনে পাকসেনারা হত্যা করে ৩০ লাখ মানুষ। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষকদের মতে, ২৫ মার্চের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির কোনো সুযোগ নেই। এখনো সুযোগ আছে একাত্তরের গণহত্যার পুরো নয় মাসের স্বীকৃতির আদায়ের। সারাবিশ্বই গণহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার। সরকার আন্তরিকভাবে সচেষ্ট হলেই দাবি আদায় সম্ভব।
এ ব্যাপারে ‘১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’ ট্রাস্ট্রি, ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন ভোরের কাগজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা দেশে-বিদেশে দাবি আদায়ে কাজ করছি। সরকারি পর্যায়ে লবি আরো জোরদার হওয়া উচিত। তবে ঝুঁকি রয়েছে। স্বীকৃতির কয়েকটি বিষয় রয়েছে। বাংলাদেশের ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার স্বীকৃতি আদায় সম্ভব। এর দুটি দিক। একটি একাডেমিক। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিসহ অনেকেই এক্ষেত্রে কাজ করছে। দেশে এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের গণহত্যা নিয়ে পড়ানো হচ্ছে। ফলে বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে। দ্বিতীয় দিকটি হচ্ছে কূটনৈতিক দিক। সরকারকে এক্ষেত্রে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে, গবেষণা সেন্টারে, পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। এনসাইক্লোপিডিয়াতে বাংলাদেশের গণহত্যার বিষয়টি অন্তর্ভুক্তি দরকার। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়কে আরো অনেক বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। বাংলাদেশের গণহত্যার বিষয়টি ডিজিটালাইজড করে গুগলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ করা প্রয়োজন যেন এক চাপেই গণহত্যার চিত্র ওঠে আসে। নয় মাসের গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ে আমাদের লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে।
উদ্যোগ ঘরে-বাইরে : বেসরকারিভাবে ১৯৯৩ সাল থেকে ২৫ মার্চ গণহত্যার কালরাত্রিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের স্মরণে সমাবেশ ও আলোর মিছিল আয়োজন এবং ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস ঘোষণার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। ২০০৬ সালে আন্তর্জাতিকভাবে চেষ্টা শুরু করে তারা। তবে ২০০১ সালে ইউনেস্কোর কাছে বাংলাদেশের গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ের বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে প্রথম তুলেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের গবেষক এবং ওয়ার ক্রাইম ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির প্রধান ডা. এম এ হাসান। ২০০৪ সালে ২৫ মার্চকে গণহত্যা প্রতিরোধ দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার আবেদন জানান তিনি। জবাবে ইউনেস্কো জানিয়েছিল, স্বীকৃতির জন্য বাংলাদেশকে জাতিসংঘে তা তুলে ধরতে হবে। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সম্মতিক্রমে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে পাস করতে হবে। ২০০৯ সালে তিনি সরকারের কাছে তা তুলে ধরলেও সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। একই দাবিতে ২০০৭ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ইউনেস্কো এবং গণহত্যার ভিকটিম বিভিন্ন দেশে চিঠি লিখে, আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে কথা বলে নিজস্ব প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। ওই চিঠির ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালের মার্চে আর্মেনিয়া থেকে পাল্টা চিঠি দিয়ে বাংলাদেশে দিবসটি কীভাবে পালন করা হয় এবং এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত পাঠানোর জন্য বলা হয়েছিল। এ প্রেক্ষাপটে নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে তখন জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হয়, বাংলাদেশে এখনো দিবসটি ঘোষণা হয়নি। তবে বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষ গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে নানা কর্মসূচি পালন করে থাকে।
এ ব্যাপারে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির ভোরের কাগজকে বলেন, তাদের জবাব এলো, যা বাংলাদেশ জাতীয়ভাবে পালন করে না, তা আন্তর্জাতিকভাবে কেন জাতিসংঘকে পালন করতে হবে? পরে আর্মেনিয়ার প্রস্তাব অনুযায়ী, ৯ ডিসেম্বর গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘ। ২০১৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ যেদিন ৯ ডিসেম্বরকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা করে সেদিন বাংলাদেশও উপস্থিত ছিল। কিন্তু কোনো ভেটো দেয়নি, একবারও বলেনি, গণহত্যা দিবস হওয়া উচিত ২৫ মার্চ। কারণ বিশ্বের কোথাও একদিনে এত বড় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়নি। অথচ তখন বাংলাদেশ নীরব ছিল। এদিকে ওই নৃশংস ঘটনার স্মরণে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণা করা হয়। ওই বছর থেকে ২৫ মার্চকে রাষ্ট্রীয়ভাবে গণহত্যা দিবস পালন করে আসছে বাংলাদেশ। এছাড়া আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নেয়ার জন্য একটি বিল পাস করা হয়।
এদিকে গত ২ জানুয়ারি একাত্তরের নির্মম এই হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশন। সেইসঙ্গে বাংলাদেশকে সহায়তা ও সমর্থন দিতে এবং সত্যের অন্বেষণ ও বিচারের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে থেকে পাকিস্তানকে চাপ প্রয়োগেরও আহ্বান জানায় প্রতিষ্ঠানটি। ৬ ফেব্রুয়ারি গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে মার্কিনভিত্তিক সংস্থা জেনোসাইড ওয়াচ। ৪ অক্টোবর জেনেভায় জাতিসংঘ ভবনে অনুষ্ঠিত ইউরোপভিত্তিক প্রবাসী সংগঠন বাসুগ সেমিনারে একাত্তরের গণহত্যাকে অবিলম্বে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য জাতিসংঘসহ বিশ্ব স¤প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান প্রবাসী বিশিষ্ট নাগরিকরা।
এমন পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন আইনপ্রণেতাদের প্রস্তাব আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে মন্তব্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, এটি অত্যন্ত ইতিবাচক দিক। বাংলাদেশ ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস ঘোষণা করেছে। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি গণহত্যাকে স্বীকৃতির প্রস্তাব বাংলাদেশের বড় ধরনের কূটনৈতিক সাফল্য। এটি একদিকে বাংলাদেশে নয় মাসে যে গণহত্যা হয়েছে, এর স্বীকৃতি আদায়কে ত্বরান্বিত করবে; অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কিছু মহলে যে বিভ্রান্তি রয়েছে, পাকিস্তানের একটি ষড়যন্ত্র ছিল এটিকে গৃহযুদ্ধ হিসেবে আখ্যায়িত করা, সেই বিকৃত ইতিহাসকে নিরসন করবে। পশ্চিমা স্বীকৃতি মানুষের মধ্যে বেশি গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করে, এটি স্বাভাবিক। গণহত্যার বিচার আমাদের অন্যতম আকাক্সক্ষা ছিল। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে এই স্বীকৃতির ফলে পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টিও সামনে আসবে। গণহত্যার বিষয়টিকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হতো। ৭১ এর ত্যাগ-তিতিক্ষা, গুরুত্ব বিশ্ববাসী নতুন করে বুঝতে পারবে।
প্রয়োজন সর্বোচ্চ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি : জাতিসংঘের কনভেনশন অন দ্য প্রিভেনশন এন্ড পানিশমেন্ট অব দ্য ক্রাইম অব জেনোসাইডে গণহত্যার পাঁচটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- কোনো গোষ্ঠীর মানুষকে হত্যা, তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে চরম ক্ষতিসাধন, জীবনমানের প্রতি আঘাত ও শারীরিক ক্ষতিসাধন, জন্মদান বাধাগ্রস্ত করা এবং শিশুদের অন্য গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেয়া। এই পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের একটি থাকলেই গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত হবে। এই পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে প্রথম চারটি বৈশিষ্ট্যই বাংলাদেশের হত্যাযজ্ঞে রয়েছে। তাই এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না পাওয়ার কোনো কারণ নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এক্ষেত্রে মার্কিন আইনপ্রণেতাদের প্রস্তাবকে সামনে রেখে পাকিস্তানি বাহিনীর পুরো নয় মাসের অত্যাচারের স্বীকৃতি আনা সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর স্বীকৃতি।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির ভোরের কাগজকে বলেন, এই প্রস্তাব আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। দাবি আদায়ে সহায়ক হবে। তিন বছর আগে আমি যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের ১৪ জন কংগ্রেসম্যানের সঙ্গে একাত্তরের গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, জামায়াত নিয়ে কথা বলেছিলাম। তখন তারা বলেছেন, আমরা এ ব্যাপারে আরো উদ্যোগী হলে তারা আমাদের পাশে দাঁড়াবেন। দুজন আইনপ্রণেতা কথা বলেছেন, এই সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে। এজন্য কূটনৈতিক তৎপরতা আরো বাড়াতে হবে। এটি দীর্ঘমেয়াদি বিষয়। পাকিস্তান তাদের লবিং অব্যাহত রেখেছে। আমাদের সরকারের উচিত হবে, ভারত, ভূটানসহ বন্ধুরাষ্ট্রগুলোকে সঙ্গে নিয়ে জোরাল লবিং করা।