মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে প্রমত্তা বুড়াইল নদী

প্রকাশ : 2025-11-18 16:25:02১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে প্রমত্তা বুড়াইল নদী

মরতে বসেছে কাউনিয়ার প্রমত্তা বুড়াইল নদী। নদী দখল করে পুকুর বানানো, প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়াসহ অপরিকল্পিতভাবে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে এ নদীর বুকে। ফলে রংপুরের কাউনিয়ার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে বুড়াইল নদী। রংপুর থেকে সড়ক পথে নব্দীগঞ্জ পার হলে কাউনিয়ায় প্রবেশ দ্বারে ব্রিজ থেকে দেখা মেলে বুড়াইল নদীর। 

সরেজমিনে বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানাগেছে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার সরাই ইউনিয়নের বিলাঞ্চল নায়রার বিল থেকে উৎপত্তি হয়ে মহাসড়কের বুক চিরে পীরগাছা উপজেলার বড়দরগা এলাকায় গিয়ে আলাইকুমারী নদীর সাথে মিলিত হয়েছে বুড়াইল নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৪ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৩৬ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। এ নদীর প্রবাহ মৌসুমি। বর্ষাকালে অধিক বৃষ্টিপাত হলে নদীটির দু'কূল প্লাবিত হয়। স্থানীয়দের মতে, গত ৩০ থেকে ৪০ বছর আগে বুড়াইল নদীতে সারাবছর পানি থাকত। সেই সঙ্গে নদীর গভীরতা ছিল বেশ। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বুড়াইল নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ৮৩। স্থানীয়দের অভিযোগ-বুড়াইল নদীর শ্বাসরোধ করে বিলিনের চেষ্টা করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। বর্তমানে নদীটি ভয়াবহ দখলের শিকার হয়। প্রভাবশালীরা নদী দখল করে পুকুর বানিয়েছেন। নদীর প্রবাহ বন্ধ করে তৈরি করছেন মাছের প্রকল্প। পীরগাছার আমতলী বাজার এলাকায় সড়ক ঘেঁষে দেখা মেলে বুড়াইল নদীর। আমতলীর বাজার সংলগ্ন একটি কালভার্টের নিচ দিয়ে পীরগাছার দিকে প্রবাহিত হয়েছে এ নদী। তবে দেখে বোঝার উপায় নেই এটি নদী। প্রবাহ না থাকায় নদীপাড়ের মানুষের হাজার হাজার একর জমি বর্ষা মৌসুমে জলমগ্ন থাকছে। ফলে এক মৌসুমের ফসল কৃষকদের ঘরে উঠছে না। বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার যাতনা সইছেন ভুক্তভোগী নদী পাড়ের শতাধিক পরিবার। নদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়া নদীগুলো বাঁচাতে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। না হলে অচিরেই নদীমাতৃক এ দেশ নদীহীন দেশে পরিণত হবে। কাউনিয়ায় কুর্শা ইউনিয়নে গোড়াই এলাকায় বুড়াইল নদীর ওপরে একটি ব্রিজ নির্মান করেছে এলজিইডি। ব্রিজের নিচে পানি প্রবাহের জন্য করা হয়েছে দুটি গোলাকার মুখ। ফলে নদীর পানি প্রবাহে বিঘœ ঘটে। গোড়াই এলাকার হাজার হাজার একর ফসলী জমি পানিতে তলিয়ে যায়। ফসলি জমি বর্ষাকালে পরিণত হয় বিলে। গোড়াই এলাকার কৃষকের অভিযোগ আমাদের দুঃখ যেন দেখার কেউ নেই। জীববৈচিত্র রক্ষায় সরকারের উচিত নদীকে নদীর মতো চলতে দেওয়া। যারা নদী দখল করে জনদূর্ভোগ সৃষ্টি করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। বেরোবির শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, দখলদাররা বুড়াইল নদীর উজান ও ভাটিতে দু'দিকেই পাড় দিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ রেখেছেন। নদী দখল করিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তিসহ সরকারি সম্পদ বিনষ্টের জন্য জরিমানা করতে হবে। নদীপাড়ের মানুষ যদি না জাগে, তবে নদী রক্ষা করা যাবে না। এভাবে চলতে থাকলে নদীমাতৃক দেশ একদিন নদীহীন দেশে পরিণত হবে। কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মহিদুল হক জানান, জেলায় কালের বিবর্তনে ও অবৈধ দখলের কারণে অনেক নদী হারিয়ে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসক স্যারের সাথে পরামর্শ করে আশা করি দ্রুতই আমরা বিদ্যমান নদীগুলো সংরক্ষণ ও দখল-উচ্ছেদ করতে পারব।