মাদারীপুরে ভুঁইফোঁড় সংগঠনের বির্তকিত নেতা দর্জি মনিরকে নিয়ে গুঞ্জন

প্রকাশ : 2021-08-12 16:20:12১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

মাদারীপুরে ভুঁইফোঁড় সংগঠনের বির্তকিত নেতা দর্জি মনিরকে নিয়ে গুঞ্জন

কিভাবে হলেন জাতীয় নেতা, কেনই বা গ্রেপ্তার করা হলো দর্জি মনিরকে। এনিয়ে তার নিজ গ্রাম মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের জায়গীর গ্রামে চলছে ব্যাপক গুঞ্জন। দর্জি মনিরের ঘরের বেড়ার সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতার সাথে ‘ওঠা-বসার’ ছবি ঝুঁলছে। অথচ তাকে চিনেন না মাদারীপুর জেলার আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা। সদ্য গ্রেপ্তার হওয়া আওয়ামীলীগের নাম ভাঙিয়ে ‘বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ’ নামে ভুঁইফোঁড় সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি দর্জি মনির খানের বাড়ীর কথা। অথচ দর্জি মনিরের নিজ গ্রাম কালকিনি উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের জায়গীর  গ্রাম মাদারীপুরের নিভৃতপল্লী । এ জায়গীর গ্রামে মানুষের কাছে দর্জি মনির এক বির্তকিত ব্যক্তির নাম। 

সরেজমিনে মনির খানের বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, মাদারীপুর জেলা সদর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের জায়গীর গ্রামে একটি আধা-পাকা ভাঙ্গা-চূড়া রাস্তার পাশে মনির খান ওরফে দর্জী মনিরের  বাড়ী। টিনশেড আর কাঁচা মাটির তৈরি একটি দো-চালা ঘর । ঘরে ঢুঁকতেই থরে থরে সাজানো একের পর এক ছবি। কোনটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে হাস্যজ্জ্বল ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছে মনির। কোনটায় দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে কুশল বিনিময় করছেন। কোন ছবিতে নেতাদের মাথার উপরে হাত উঁচু করে দাড়িয়ে আছেন তিনি। এমন দৃশ্য পুরো বেড়া জুড়ে। অভিযোগ উঠেছে, এসব ছবির প্রায়টিই কম্পিউটারের কারসাজিতে তৈরি করা হয়েছে। কিছু কিছু ছবিতে স্পষ্টই বোঝা যায় কৃত্রিম কাজের চিহ্ন। 

জায়গীর গ্রামের একাধিক লোকজন ও তার আত্মীয়-স্বজন জানান, জায়গীর গ্রামের খান বাড়ীতে হারুণ খানের ঘরে মনির খানের জন্ম হয়। মনিরের বয়স প্রায় ৪২ বছর। তার দুই ভাই ও তিন বোন রয়েছে। এছাড়া তার আরো ৫ চাচা রয়েছে। এর মধ্যে মনিরের বাবাই বড়। তারা এলাকায় কিছুটা প্রভাবশালী হওয়ায় ছোট থেকেই মনির কিছুটা ডানপিটে স্বভাবের। ফলে ২০-২২ বছর বয়সেই বিয়ে করেন। তার কিছু দিন পরে স্ত্রী নাসিমা বেগমকে নিয়ে ঢাকা চলে যান। এরপর মাঝে মাঝে গ্রামের বাড়ীতে আসতেন। তবে স্থানীয় রাজনীতির সাথে কখনোই জড়াননি। মাঝে মাঝে স্থানীয় সূর্যমুখী বাজারে চা-পান খেতেন। বাজারের একটি জায়গা দখল করার চেষ্টারও অভিযোগ রয়েছে মনিরের বিরুদ্ধে।

মনির খানের প্রথম স্ত্রী নাসিমা বেগম বলেন, ‘আমার সাথে মনিরের বিয়ে হয় প্রায় ১৫ বছর আগে। তারপরে কয়েক বছর আমরা ঢাকাতে থাকতাম। তখন দেখতাম তিনি রাজনীতি করেন। এরপর সাত-আট বছর ধরে আমি বাড়ীতে আমার এক মেয়ে নিয়ে থাকি। মনির ঢাকাতে আবার বিয়ে করেছে। তিন-চার মাস পরে মাঝে মাঝে বাড়ীতে আসে। মাস গেলে বিকাশে সংসার খরচও পাঠায়। এরচে বেশি জানি না। শুনছি, ঢাকায় রাজনীতির কারণে গ্রেপ্তার হয়েছে। আমি সেসবের খবর রাখি না। তার ঢাকার স্ত্রী সব দেখা-শুনা করছে।’

এব্যাপারে ছোট চাচা শহিদুল ইসলাম খান জানান, কিছু দিন পর পর বাড়ীতে এসে ছবিগুলো মনির নিজেই ঘরে সাটিয়ে রেখে যেতেন। তার প্রথম স্ত্রী ও এক মেয়ে থাকেন বাড়ীতে। তাদের খোঁজ খবর নেন মাঝে মাঝে। তবে ঢাকাতেই তিনি আওয়ামীলীগের নেতা হয়েছেন। এলাকায় তেমন নাম-ডাক নেই বললেই চলে। তার গ্রেপ্তারের খবরে এলাকায় কোন উত্তাপ নেই। তবে মনির ঢাকাতে এমপি নির্বাচন করতে চাওয়াই কাল হয়ে দাড়িয়েছে। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার।

তবে স্থানীয় লোকজন মনিরকে চিনেন বির্তকিত ব্যক্তি হিসেবেই। মাঝে সাঝে এলাকায় এসে বির্তকিত কার্যক্রমের সাথে জড়িয়েছেন। তার গ্রেপ্তার হওয়ায় এলাকায় ব্যাপক গুঞ্জন উঠেছে। নাম প্রকাশে অনুচ্ছি এক ব্যক্তি বলেন, ‘মনির একটা টাউট প্রকৃতির লোক। মাঝে মাঝে এলাকায় এসে খালি ছবি টাঙাতো। বাজারের জায়গা দখলের চেষ্টা করেছিল একবার। পরে ধাওয়া খেয়ে ঢাকা গেছে। এমন লোকের তো আগেই গ্রেপ্তার হওয়া উচিত ছিল।’

মাদারীপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাহাবুদ্দিন আহম্মেদ মোল্লা বলেন, ‘যারা কোন দিন দলের সভা-সেমিনারে আসে না, তারা ঢাকাতে গিয়ে নিজেদের পাল্টিয়ে বড় নেতা হন। এরপর দালালি আর ধান্দামি করে কোটি কোটি টাকা কামান। এরা মূলক দল নয়, স্বার্থের জন্যে দল ব্যবহার করেন। এদের বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে সুদ্ধ অভিযান শুরু করেছেন, তাকে ধন্যবাদ জানাই।

এব্যাপারে কালকিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত মহিলা আসন-৪২ এর সংসদ সদস্য অধ্যাপিতা তাহমিনা সিদ্দিকী বলেন, মনিরদের মতো ব্যক্তিদের কারণে তৃণমূল পর্যায়ে দলের ভার্বমূর্তি ক্ষুন্ন হয়। এরা দলের জন্যে ক্যান্সারসরূপ। সংগঠনের সাথে এদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবী করছি। এই ছেলেকে মাঝে মাঝে দেখেছি, কালকিনির বর্তমান এমপি আব্দুস সোবাহান গোলাপের সাথে আসতো। এমপি আমাকে তাকে একটি কমিটিতেও রাখতে বলেছিল, কিন্তু আমি তার শিক্ষাগত যোগ্যতার কথা শুনে আর রাখিনি। এদের জন্যে দলের বদনাম হয়।’

উল্লেখ্য, গত ২ আগস্ট ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মনির খান ওরফে দর্জি মনিরকে গ্রেপ্তার করেন। তিনি চার দিন রিমান্ড শেষে বর্তমানে জেল-হাজতে রয়েছে। তার গ্রেপ্তারের খবরে এলাকায় আন্দন-উল্লাস করে এলাকাবাসী। দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করায় তার শান্তি দাবী করেন রাজনৈতিক মহল।