মাদারীপুরে ‘চায়না দোয়ারি’র দৌরাত্মের ফলে হুমকির মুখে মৎস্য সম্পদ

প্রকাশ : 2022-08-05 11:01:34১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

মাদারীপুরে ‘চায়না দোয়ারি’র দৌরাত্মের ফলে হুমকির মুখে মৎস্য সম্পদ

মাদারীপুরে হুমকির মুখে মৎস্য সম্পদ ।‘চায়না দোয়ারি’র দৌরাত্মের ফলে মৎস্য শুন্য হয়ে যাবে এ অঞ্চল। জেলার বিভিন্ন খাল-বিল ও নদী নালাসহ  বিভিন্ন জলাশয়ে ‘চায়না দোয়ারি’ নামে এক প্রকার ঘন জালে সয়লাব হয়ে গেছে। জলাশয়ে এই বিশেষ ধরণের জাল পেতে অবাধে মাছ শিকার করছে জেলে ও মৎস্য শিকারীরা। এই জালে ধরা পড়ছে সব ধরণের ছোট-বড় মাছ ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মাছের পোনা। ফলে বড় ধরণের হুমকির মুখে পড়ছে মৎস্য সম্পদ। এ ধারা অব্যাহত থাকলে একেবারে মৎস্য শূণ্য হয়ে পড়বে মাদারীপুর জেলার মৎস্য ভান্ডার। কর্তৃপক্ষ মাঝে মধ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ‘চায়না দোয়ারি’ জব্দ ও অভিযুক্তদের জরিমানা করলেও থামছে জেলে ও মৎস্য শিকারীদের দৌরাত্ম। এখনই ‘চায়না দোয়ারি’ দিয়ে মাছ ধরা বন্ধ না করা হলে মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে সরকারের কোনো উদ্যোগ কাজে আসবে না।   

সংশ্লিষ্ট সূত্র, নদীপাড়ের বাসিন্দা ও মাদারীপুর জেলার বিভিন্ন  এলাক্রা জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি ‘চায়না দোয়ারি’ জাল দিয়ে মাছ শিকার করছে অসাধু মৎস্য শিকারীরা। প্রায় ৬০ থেকে ৮০ ফুট লম্বা একেকটি চায়না দোয়ারি জালের দাম ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। লোহার ৪টি শিক দিয়ে খোঁপ-খোঁপ আকারে থাকে এই 'চায়না দোয়ারি'তে। অতি সূ² ঘন চায়না দোয়ারি জালের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো নদ-নদী, বিল-বাওর বা অন্যান্য জলাশয়ে মাটির সাথে লম্বা-লম্বিভাবে লেগে থাকে এবং দু'দিক থেকে মাছ ঢুকতে পারে। চায়না জালের এ ফাঁদে মাছ ধরতে মাছের কোন খাবার বা টোপ দিতে হয় না। ফলে চিরায়িত মাছ ধরার যেসব কৌশল দিয়ে মাছ ধরে যারা জীবিকা নির্বাহ করে; তারা হতাশ এমন পদ্ধতিতে। সহজে মাছ ধরা পড়ে বলে এতে আয় বেশি, অন্যদিকে পরিশ্রমও কম। তবে গত কয়েক বছরে মৎস্য বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতায় সে পরিস্থিতি থেকে কিছুটা উন্নতি হলেও থেমে নেই নির্বিচারে মাছ শিকার। নদ-নদীতে থাকা মিঠা পানির সব ধরণের দেশি মাছ সূ² এই ‘চায়না দোয়ারি’ জালে ধরা পড়ছে। বিশেষ করে নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধির এই প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা চিংড়ি, পুঁটি, টেংরা, কৈ, শিং, মাগুর, তেলাপিয়া, বেলে, বোয়াল, শোল, টাকিসহ প্রাকৃতিক সব মাছ এই সর্বশেষ প্রযুক্তির চায়না দোয়ারি জালে নিধন করা হচ্ছে। এমনকি মাছের ডিমও ছেঁকে ওঠে এই চায়না দোয়ারি জাল থেকে। সেই সাথে কুচিয়া, ব্যাঙ, সাপসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণিও মারা পড়ছে। এই পদ্ধতিতে মাছ শিকার অব্যাহত থাকলে মিঠা পানির দেশি মাছ দ্রুত বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। মৎস্য সম্পদ ধ্বংসের সর্বশেষ সংযোজন 'চায়না দোয়ারি' বা ঘন জাল। এখনই এর ব্যবহার বন্ধ না করা হলে মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে সরকারের কোনো উদ্যোগ কাজে আসবে না বলে মনে করেন সচেতন মহল। 


 
মাদারীপুর সদর উপজেলার  সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তপন মজুমদার বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসন ও আইন শৃক্সখলা রক্ষাবাহিনীর সহযোগিতায় নিষিদ্ধ ‘চায়না দোয়ারি’র বিরুদ্ধে মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, উদ্বুদ্ধকরণ সভা,  মোবাইল কোর্ট ও অভিযান অব্যাহত আছে। 

বৃহস্পতিবার (৪ আগষ্ঠ) সকালে মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার ফাসিয়াতলা হাটে কালকিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার পিংকি সাহা ও কালকিনি  সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সন্দীপন মজুমদার এর যৌথ অভিযানে কালকিনি থানা পুালিশের সহায়তায়  ফাসিয়াতলা বাজারের দুটি দোকান থেকে ৩ লাখ টাকার চায়না দুয়ারী ও ২০ লাখ টাকার কারেন্টজাল উদ্ধার করে ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে উদ্ধারকৃত জাল বিনষ্ট করেন। 

মাদারীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবুল কৃষ্ণ ওঝা বলেন, ‘অবৈধ ‘চায়না দোয়ারি’ খাল-বিল ও নদী নালাসহ  বিভিন্ন জলাশয়ের মৎস্য সম্পদের জন্য হুমকি স্বরূপ। জেলার সর্বত্র মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, ব্যানার স্থাপন, উদ্বুদ্ধকরণ সভা,  ১৬টি মোবাইল কোর্ট ও ১৫টি অভিযান করেন। এ সময় প্রায় ৭৩ লক্ষ ১০ হাজার টাকার ১৪শ ৪৭টি   ‘চায়না দুয়ারি’ আটক ও বিনষ্ট করা হয়েছে। ৪টি মামলা দায়ের করে ৩২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। চায়না দোয়ারি দিয়ে মাছ শিকার একটা বেআইনি কাজ। এর বিরুদ্ধে জেলা ব্যাপী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে। কোনভাবেই নিষিদ্ধ ‘চায়না দোয়ারি’ দিয়ে মাছ ধরতে দেওয়া হবে না।’

এছাড়াও ১ লক্ষ ১২ হাজার ৭শ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে যার মুল্য আনুমানিক ২৯ লক্ষ টাকা। এবং ৩টি ভেসাল ও ৩টি ভেসজাল জব্দ করা হয় যার মূর‌্য আনুমানিক ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।