মাদারীপুরে কৃষকের কাজে আসছে না দুই কোটি টাকার রেইনগজ মিটার

প্রকাশ : 2023-09-13 16:18:40১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

মাদারীপুরে কৃষকের কাজে আসছে না দুই কোটি টাকার রেইনগজ মিটার

মাদারীপুরে কৃষককে আবহাওয়ার আগাম বার্তা দেওয়ার দুই কোটি টাকার রেইনগজ মিটার কাজে আসছে না। জানাগেছে, বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় মাদারীপুর জেলার ৫টি উপজেলায় কৃষককে আবহাওয়ার আগাম বার্তা দেওয়ার জন্য দুই কোটি টাকা খরচ করে  ৬০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৬টিতে বসানো হয় রেইনগজ মিটার।  এই মিটারগুলোর প্রায় সবই এখন অকেজো।  কোনো কোনো ইউনিয়নের রেইনগজ মিটারের হদিসই নেই। তদারকির অভাবেই সরকারের এ উদ্যোগ কৃষকের কোনো কাজেই আসেনি। মাদারীপুর কৃষি বিভাগ বলছে, মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে তথ্য পাওয়ায় রেইনগজ মিটারের ব্যবহার হচ্ছে না। যদিও বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে মাদারীপুর কৃষি বিভাগ কর্তৃপক্ষ।

মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষকের ফসল রক্ষার জন্য কালকিনি উপজেলার আলীনগরে স্থাপন করা হয় একটি অত্যাধুনিক রেইনগজ মিটার। বছর না ঘুরতেই পুরো মিটারটি অকেজো হয়ে পড়ে। সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া এ যন্ত্রটিও ব্যবহারের অভাবে নষ্ট হয়ে আছে।

ঘটমাঝি ইউনিয়নের কৃষক কফিল উদ্দিন সরদার বলেন, আমরা জীবনে শুনিও নাই। মিটার গজের নাম। এটা দিয়ে কি করে তাও আমরা জানি না। এলাকায় কৃষি কর্মকর্তাকে তেমন দেখা যায় না।

মাদারীপুর কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কৃষককে আবহাওয়ার তথ্য সেবা দিতে রেইনগজ মিটার স্থাপন প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এ প্রকল্পের আওতায় মাদারীপুর জেলার ৬০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৬টি ইউনিয়নে প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে বসানো হয় আবহাওয়ার পূর্বাভাসের যন্ত্র। তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত, ঝড়ের পূর্বাভাস, আলোক ঘণ্টাসহ ১০টি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও তা কৃষকের মাঝে প্রকাশের জন্য যন্ত্রটিতে দেওয়া হয় ইন্টারনেট সংযোগ। রেইনগজ মিটার দেখাশোনা ও কৃষকের কাছে তথ্য প্রদানে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর প্রতিটি ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছে।

তবে সঠিক ব্যবহারের অভাবেই সরকারের এ উদ্যোগ ভেস্তে গেছে। এ ধরনের কোনো যন্ত্র সরকার স্থাপন করেছে, সেটি কখনো শোনেননি বলে জানান স্থানীয় কৃষক।

ঝাউদি ইউনিয়নের হোগলপাতিয়া গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের গ্রামে কোনো দিন কৃষি অফিসের লোক এসে বলেননি আবহাওয়ার ভালো কিংবা মন্দ খবর। সস্তা মেশিন ক্রয় করায় এগুলো দ্রæত নষ্ট হয়েছে বলেই আমি মনে করি।’

মাদ্রা এলাকার ফিরোজ হাওলাদার বলেন, আজ পর্যন্ত আমাকে এলাকায় কোনো আবহাওয়া অফিসের লোক কিংবা কেউ আহে নাই। কিভাবে এগুলো বুঝতে পারব বলেন স্যার।

ডাসার উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের কৃষক আলী হোসেন বলেন, ‘আমাগো ইউনিয়নে আবহাওয়া তথ্যের কোনো মেশিন আছে, সেই খবর কোনো দিনও পাইনি। আমরা তা জানিও না। কোনো কৃষি কর্মকর্তা এসে আমাদের আবহাওয়ার খবরও দেননা।’

মাদারীপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সন্তোষ চন্দ্র বলেন, ‘জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে স্থাপন করা রেইনগজ মিটারগুলোর এখন তেমন ব্যবহার নেই। অনেকগুলো নষ্ট ও অকেজো হয়ে গেছে। এগুলো যাতে সচল করা যায় সে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। তবে ডিজিটাল যুগে রেইনগজ মিটারের এখন তেমন প্রয়োজনীয়তা কৃষক অনুভব করেন না। তবুও সর্বশেষ রেইনগজ মিটারগুলোর কী অবস্থায় আছে আমরা খতিয়ে দেখব।’