মহানায়কের জন্মদিন
প্রকাশ : 2021-03-17 09:38:18১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নিয়েছিল একটি শিশু। সবাই তাকে আদর করে ডাকত খোকা। কিন্তু তখনও কেউ ভাবতে পারেনি, সে খোকাই একদিন এই দেশটির ভাগ্যনিয়ন্তা হয়ে উঠবে। শৈশব-কৈশোরো দুরন্ত খোকা যে এক সময় বাংলাদেশের পরাধীনতা ছিন্ন করার লড়াইয়ে প্রধান সিপাহ্সালার হবেন, তাও কেউ কল্পনা করেন নি। কিন্তু তিনি তা হয়ে ছিলেন, হতে পেরেছিলেন। টুঙ্গিপাড়ার সেই খোকা পরিণত হলেন বঙ্গবন্ধু’তে, আসীন হলেন এদেশের মানুষের জাতির পিতার সিংহাসনে। সে এক দুর্গম পথপরিক্রমা। বৃটিশ শাসনের কবল থেকে উপমহাদেশের মুক্তি অর্জনের সংগ্রামে শেখ মুজিব ছিলেন সাহসী ছাত্র-কর্মী। অবিভক্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালিন শীর্ষস্থানীয় নেতা হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর সাহচর্যে রাজনীতির কঠিন পথে তার পথচলা শুরু হয়েছিল। তারপর আর থামেনি। থামানোর চেষ্টা হয়েছিল বহুবার। কিন্তু রাজনীতি যার রক্তে বেঁধেছে বাসা, মানুষের মুক্তির স্বপ্ন যাঁকে তাড়িত করছিল দিবারাত্রি, তাকে থামায় সাধ্যি কার? তাই দেখা গেল বৃটিশ শাসনের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার পরও যখন পূর্ব বাংলার মানুষের মুক্তি এলো না, তিনি আবারও গর্জে উঠলেন। এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য প্রতিবাদী হলেন। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক-শোষক গোষ্ঠীর জুলুম-নির্যাতন উপেক্ষা করে তিনি রুখে দাঁড়ালেন। এক পর্যায়ে এসে তিনি দেখলেন, এভাবে এদেশের মানুষের মুক্তি আসবে না। তিনি স্বাধীনতার ডাক দিলেন। তাঁর আহ্বানে বাংলাদেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ নেমে পড়ল মুক্তির লড়াইয়ে। দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য হাতে তুলে নিল হাতিয়ার। শত্রুপক্ষ তাকে বন্দী করে নিয়ে গেল। কিন্তু তিনিই নেতা হয়ে থাকলেন মুক্তিকামী মানুষের হৃদয়ে। শারীরিকভাবে অনুপস্থিত থেকেও তিনিই নেতৃত্ব দিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে। অতঃপর স্বাধীনতা এলো এক সাগর রক্তের বিনিময়ে। মুক্ত স্বদেশে তিনি এলেন পঁচিশ দিন পরে। তাঁর সে ফিরে আসার দিনটি সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে ঈদোৎসবে পরিণত হয়েছিল। তিনি এলেন এবং জাতির পিতার অভিধায় অভিষিক্ত হলেন।
সদ্যস্বাধীন ও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে গড়ে তোলার এক ব্যাপক কর্মসুচি হাতে নিলেন তিনি। চোখে তাঁর আত্মনির্ভর বাংলাদেশের স্বপ্ন, যে স্বপ্ন তিনি আজীবন দেখে এসেছেন। এদেশের মানুষ খেয়েপরে সুখে থাকবে, প্রাণল খুলে হাসবে গাইবে এটাই ছিল তাঁর আজীবন স্বপ্ন। কিন্তু তিনি সে স্বপ্ন সফল করতে পারলেন না। তার আগেই ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট একদল ঘাতকের বুলেট তার হৃদস্পন্দন থামিয়ে দিল। যে মাটির স্বাধীনতার জন্য তিনি জীবনকে তুচ্ছ করে বীরদর্পে এগিয়ে গেছেন, সে মাটিই লাল হলো তাঁর বুকের তাজা রক্তে। পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম জঘন্য সে হত্যাকান্ড বাংলাদেশের স্বপ্নকেই যেন হত্যা করলো। কিন্তু তাঁকে মেরে ফেললেও ঘাতকরা তাঁর আদর্শকে মারতে পারেনি। বাঙালি জাতি তাঁর আদর্শের পতাকাকে উড্ডীন রেখে এগিয়ে গেছে সামনের দিকে। আজ তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় প্রবেশ করেছে। যে স্বপ্ন ছিল জাতির জনকের, তা তাঁরই কন্যার হাতে পূর্ণতা পাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি নাম নয়, একটি ইতিহাস। তিনি এই দেশের ইতিহাসের গতিপথকে ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। আদর্শ আর প্রত্যয়ের এক মোহনীয় বাঁশি ছিল তাঁর হাতে। সে বাঁশির সুরে বিমোহিত বাঙালি জাতি যে কোনো বিপদসঙ্কুল পথে যাত্রা করতে দ্বিধা করেনি। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ তারই প্রমাণ বহন করে। একটি তর্জনীর ইশারায় একটি জাতি কতটা উজ্জীবিত হতে পারে তারও প্রমাণ আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধ।
আজ সেই মহান নেতার ১০২তম জন্মদিন। এই শুভদিনে আমরা তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই, তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করি।