ভারতে জ্ঞানবাপী মসজিদের নিচে পূজা শুরু করল হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা
প্রকাশ : 2024-02-01 14:08:24১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
ভারতের উত্তর প্রদেশের বারানসির জ্ঞানবাপী মসজিদের বেসমেন্টে হিন্দুদের পূজা করার অনুমতি দিয়েছে সেখানকার একটি আদালত। মন্দিরের ওপর প্রাচীন এই মসজিদ নির্মিত হয়েছে বলে হিন্দুদের দাবির পর কিছুদিন আগে মসজিদটির বেসমেন্ট সিলগালা করে দেয়া হয়েছিল। গতকাল বুধবার স্থানীয় সময় দুপুরের দিকে বারানসির আদালত হিন্দুদের এক পিটিশনের শুনানি শেষে মসজিদের বেসমেন্টে পূজা করার অনুমতি দিয়ে রায় ঘোষণা করেছে।
স্থানীয় আদালত পূজা করার জন্য বারানসির এই মসজিদের প্রাঙ্গণটি খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর এক হিন্দু পুরোহিতের পরিবারের সদস্যরা সেখানে পূজা শুরু করে। বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল এক জেলা আদালত প্রশাসনকে মসজিদের প্রাঙ্গণটি খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পরে এক হিন্দু পুরোহিতের পরিবারের সদস্যরা বারানসির জ্ঞানবাপী মসজিদের বেসমেন্টে প্রার্থনা শুরু করেছেন। ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরপরই উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদবের নির্দেশে ৩০ বছর আগে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
এর আগে বারানসির জ্ঞানবাপী মসজিদের বেসমেন্টে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজা করার অনুমতি দেয় সেখানকার একটি আদালত। বুধবার স্থানীয় সময় দুপুরের দিকে বারানসির আদালত হিন্দুদের এক পিটিশনের শুনানি শেষে মসজিদের বেসমেন্টে পূজা করার অনুমতি দিয়ে রায় ঘোষণা করে। আদালতের বিচারক আগামী সাত দিনের মধ্যে মসজিদে বসানো প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং হিন্দুদের উপাসনার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আদালত বলেছেন, পার্শ্ববর্তী বিশ্বনাথ মন্দিরের পুরোহিতদের নেতৃত্বে জ্ঞানবাপীতে হিন্দুদের পূজা-অর্চনা অনুষ্ঠিত হবে।
আদালতে বারানসির চার হিন্দু নারী জ্ঞানবাপী মসজিদের বেসমেন্টে উপাসনা করার অনুমতি চেয়ে পিটিশন দায়ের করেছিলেন। তাদের আইনজীবী বিষ্ণু শংকর জৈন বলেন, ‘হিন্দু পক্ষকে সেখানে প্রার্থনার অনুমতি দেয়া হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসনকে সব ব্যবস্থা সম্পন্ন করতে হবে। সাত দিনের মধ্যে সেখানে পূজা শুরু হবে। সেখানে সবারই প্রার্থনা করার অধিকার রয়েছে।’
এনডিটিভি বলছে, কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের ঠিক পাশে অবস্থিত মসজিদের নিকটবর্তী এই এলাকাটিতে গত রাতে উন্মত্ত কার্যকলাপ হতে দেখা গেছে। এসময় হিন্দু ভক্তরা ‘ব্যাস কা তেহকানা’ নামে মসজিদের বেসমেন্টের সেলারে পূজা করতে মসজিদে পৌঁছাতে শুরু করে। রাষ্ট্রীয় হিন্দু দল নামে একটি হিন্দু সংগঠনের সদস্যদের মসজিদের কাছে একটি সাইনেজে ‘মন্দির’ শব্দটি লাগাতে দেখা গেছে।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বৃহস্পতিবার ভোর ৩টার দিকে সেখানে পূজা শুরু হয়। যেকোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
মসজিদটির বেসমেন্টে চারটি সেলার রয়েছে। তাদের মধ্যে একটি সেলার পুরোহিতদের একটি পরিবারের দখলে ছিল। তারা সেখানে বাস করত। সোমনাথ ব্যাস নামে ব্যাস পরিবারের একজন সদস্য ১৯৯৩ সালে এটি বন্ধ করে দেওয়ার আগে সেলারে পূজা করেছিলেন।
সেই পরিবারের সদস্য শৈলেন্দ্র পাঠক আদালতে আবেদন জানান, বংশগত পুরোহিত হিসাবে তাদের এই কাঠামোতে প্রবেশ করতে এবং সেখানে পূজা করার অনুমতি দেওয়া উচিত। এরপর আদালত গতকাল জেলা প্রশাসনকে এক সপ্তাহের মধ্যে সেলারের ভেতরে যেন পূজা অনুষ্ঠিত হয় তা নিশ্চিত করতে বলেছেন।
মসজিদ কমিটি জানিয়েছে, তারা এলাহাবাদ হাইকোর্টে আদালতের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করবে। তাদের কৌঁসুলি মেরাজউদ্দিন সিদ্দিকী বলেন, ‘রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য এটা ঘটছে। বাবরি মসজিদের ঘটনায় যা করা হয়েছিল, এখানেও একই পন্থা অবলম্বন করা হচ্ছে।’
এর আগে, ভারতের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ আর্কিওলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার (এএসআই) মসজিদটিতে আদালতে নির্দেশ জরিপ পরিচালনা করে। পরে সেখানে হিন্দু দেবতার মূর্তির ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে বলে জানায় এএসআই। দেশটির এই জরিপসংস্থার প্রতিবেদনে মসজিদটির কাঠামোর কিছু অংশে মন্দিরের স্তম্ভ ব্যবহার করা হয়েছিল বলে দাবি করা হয়।
গত ডিসেম্বর মাসে এলাহাবাদের হাইকোর্ট জ্ঞানবাপী মসজিদ কমিটির সব পিটিশন খারিজ করে দেয়। মসজিদ কমিটি সেখানে মন্দির পুনর্নিমাণ কাজকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এসব পিটিশন দায়ের করেছিল। এর মধ্যে উত্তর প্রদেশের সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড ১৯৯১ সালে দায়ের হওয়া মামলার কার্যক্রম বারানসির কোর্ট পরিচালনা করতে পারে কি না, সেই বিষয়েও চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল। হাইকোর্ট মসজিদ কমিটির সব পিটিশনের শুনানি শেষে খারিজ করে দিয়েছে।
জ্ঞানবাপী মসজিদ হল ভারতের উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে অবস্থিত একটি মসজিদ। ১৬৬৯ সালে এটি আওরঙ্গজেব দ্বারা নির্মিত হয়।এই স্থানে হিন্দু দেবতা শিবের উদ্দেশ্যে একটি বিশ্বেশ্বর মন্দির ছিল। ১৬শ শতাব্দীর শেষের দিকে মহারাষ্ট্রের বারাণসীর প্রাক-বিখ্যাত ব্রাহ্মণ পণ্ডিত নারায়ণ ভট্টের সাথে আকবরের একজন প্রধান দরবারী ও মন্ত্রী টোডরমল এটি নির্মাণ করেন। ১৬৬৯ সালের সেপ্টেম্বরে আওরঙ্গজেব মন্দিরটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন; এবং এই জায়গায় একটি মসজিদ নির্মাণ করেন, সম্ভবত কিছু সময় পরে আওরঙ্গজেব নিজেই নির্মাণ করেন।পণ্ডিতরা আওরঙ্গজেবের এই ধ্বংসের প্রাথমিক প্রেরণা হিসেবে ধর্মীয় উগ্রতার পরিবর্তে রাজনৈতিক কারণকে দায়ী করেন।
এএসআই-র রিপোর্ট নিয়ে জানতে ক্লিক করুন
সা/ই