ভারতে একদিনে নতুন রেকর্ড ৪ লাখ ১৪ হাজারের বেশি শনাক্ত
প্রকাশ : 2021-05-07 10:44:46১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
ভারতে গতকাল বৃহস্পতিবার এক দিনে করোনা রোগী শনাক্তে নতুন রেকর্ড হয়েছে। আজ শুক্রবার এনডিটিভি অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
ভারতে গতকাল ৪ লাখ ১৪ হাজার ১৮৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। ভারতে আগে কখনো এক দিনে এত রোগী শনাক্ত হয়নি।
গতকালের আগের দিন বুধবার ভারতে রেকর্ড ৪ লাখ ১২ হাজার ২৬২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। তার আগে দেশটিতে এক দিনে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত শুক্রবার, ৪ লাখ ১ হাজার ৯৯৩ জন।
গত মঙ্গলবার ভারতে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৩১৫ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। সোমবার শনাক্ত হয় ৩ লাখ ৫৭ হাজার ২২৯ জন। রোববার শনাক্ত হয় ৩ লাখ ৬৯ হাজারের বেশি রোগী। শনিবার শনাক্ত হয় ৩ লাখ ৯২ হাজারের বেশি রোগী।
ভারতে গতকাল এক দিনে ৩ হাজার ৯১৫ জন করোনায় মারা গেছেন। আগের দিন বুধবার দেশটিতে এক দিনে রেকর্ড ৩ হাজার ৯৮০ জন করোনায় মারা যান। ভারতে আগে কখনো এক দিনে এত রোগী মারা যাননি।
মঙ্গলবার দেশটিতে করোনায় রেকর্ডসংখ্যক ৩ হাজার ৭৮০ জন করোনায় মারা যান। আগের দিন সোমবার মারা যান ৩ হাজার ৪৪৯ জন। রোববার মারা যান ৩ হাজার ৪৫৫ জন। শনিবার মারা যান ৩ হাজার ৬৮৯ জন।
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ভারতে করোনায় সংক্রমিত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ১৪ লাখ ৯১ হাজার ৫৯৮। মোট প্রাণহানি ২ লাখ ৩৪ হাজার ৮৩ জনের।
গত মার্চের মাঝামাঝিতে ভারতে এক দিনে শনাক্ত করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ২০ হাজারের কাছাকাছি। তারপর দেশটিতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। ৩ এপ্রিল ভারতে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুই কোটির মাইলফলক ছাড়ায়।
গত ৩০ এপ্রিল ভারতে প্রথম এক দিনে চার লাখের বেশি মানুষের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। তার আগে টানা নয় দিন ধরে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ছিল তিন লাখের বেশি। তারও আগে ১৫ এপ্রিল থেকে দেশটিতে প্রতিদিন দুই লাখের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছিল। আর টানা এক সপ্তাহ ধরে ভারতে দুই হাজারের বেশি মানুষ করোনায় মারা যাওয়ার পর গত ২৭ এপ্রিল থেকে দৈনিক মৃত্যু তিন হাজারের ওপরে ওঠে। কয়েক দিন ধরে দেশটিতে গড়ে সাড়ে তিন হাজারের মতো মানুষ করোনায় মারা যাচ্ছেন।
বিশ্বের কোনো দেশে এক দিনে সর্বোচ্চসংখ্যক করোনা রোগী শনাক্তের রেকর্ড এখন ভারতের দখলে। গত ২২ এপ্রিলের আগপর্যন্ত এই রেকর্ড যুক্তরাষ্ট্রের দখলে ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে গত জানুয়ারিতে এক দিনে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৯৭ হাজার ৪৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।
ওয়ার্ল্ডোমিটারস শুরু থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনাবিষয়ক হালনাগাদ তথ্য দিয়ে আসছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারসের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৫ কোটি ৬৭ লাখ ৩ হাজার ১৪৬। বিশ্বে করোনায় মোট মারা গেছেন ৩২ লাখ ৬৯ হাজার ৬৭৩ জন।
ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৩ কোটি ৩৩ লাখ ৬৯ হাজার ১৯২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মোট মারা গেছেন ৫ লাখ ৯৪ হাজার ৬ জন।
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের পরেই রয়েছে ভারত। ভারতের পর রয়েছে ব্রাজিল। সম্প্রতি সংক্রমণের দিক দিয়ে ব্রাজিলকে টপকে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসে ভারত। ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৫০ লাখ ৯ হাজার ২৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ৪ লাখ ১৭ হাজার ১৭৬ জন।
বিবিসি বলছে, বিশ্বে বর্তমানে করোনার সংক্রমণের কেন্দ্র ভারত। ভারতে সংক্রমণের ‘বিস্ফোরণের’ জন্য করোনার ভারতীয় ধরনকে অনেকাংশে দায়ী করা হচ্ছে। এ ছাড়া সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যেও নির্বাচন অনুষ্ঠান, ধর্মীয় উৎসব ও খেলাধুলার আয়োজনকে দায়ী করা হচ্ছে।
দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করছিল, করোনার সংক্রমণ কমছে। তবে গত দুই দিনের পরিসংখ্যান বলছে ভিন্ন কথা। তা ছাড়া সংক্রমিত অনেকে করোনা পরীক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন না। এ কারণে তাঁরা হিসাবের আওতায় আসছেন না। মৃত্যুর অনেক তথ্যও সরকারি হিসাবে যুক্ত হচ্ছে না।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে—এমন আশঙ্কার কথা বিজ্ঞানীরা আগে জানালেও তাতে গুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে।
এনডিটিভির তালিকা অনুসারে, ভারতে করোনার সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রে। তারপর রয়েছে কর্ণাটক, কেরালা, উত্তর প্রদেশ, তামিলনাড়ু, দিল্লি, অন্ধ্র প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ। ছত্তিশগড়, রাজস্থান, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ ও হরিয়ানার পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক।
করোনা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতির মুখে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি টিকাদান কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। ১ মে থেকে সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে (১৮ বছরের ঊর্ধ্বে) টিকাদানের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ভারত। তবে বিভিন্ন রাজ্যের কর্তৃপক্ষ টিকার সংকটের কথা জানাচ্ছে। তা ছাড়া টিকা গ্রহণের হারও কম।
ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে আরম্ভ হয়। ভারতে করোনার সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করায় দেশটি তার সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। অক্সিজেন, জরুরি ওষুধ, হাসপাতালে শয্যার অভাবসহ নানা গুরুতর সংকটে দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম।
দেশটিতে করোনা রোগীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকায় চাপ সামাল দিতে হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে। হাসপাতালে পাওয়া যাচ্ছে না শয্যা। অনেকের অবস্থা গুরুতর হলেও হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন না। ঘরে রেখে তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে রোগীদের মৃত্যুর খবর আসছে। বিদেশ ও দেশের অন্য এলাকা থেকে অক্সিজেন এনে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে ভারতের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। ভারতের করোনা সংকটে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, সৌদি আরব, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি দেশ ও সংস্থা জরুরি চিকিৎসাসহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। বিদেশি সহায়তা ভারতে পৌঁছাচ্ছে।