ভারতের সঙ্গে ১৪ দিনের জন্য চলাচল বন্ধ 

প্রকাশ : 2021-04-25 19:02:10১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

ভারতের সঙ্গে ১৪ দিনের জন্য চলাচল বন্ধ 

করোনার প্রাদুর্ভাব ব্যাপক আকার ধারণ করায় ভারতের সঙ্গে আগামীকাল সোমবার থেকে স্থলপথে চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার। এই ঘোষণা ১৪ দিনের জন্য বলবৎ থাকবে। 

আজ রোববার বিকেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তাঁর সভাপতিত্বে আজ আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আগে থেকেই ভারতের সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। 

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘ভারতে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই ১৪ দিন মানুষের যাতায়াত বন্ধ থাকলেও পণ্যবাহী যানবাহন চলবে।’ ‘এটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিদ্ধান্ত; আমরা শুধু বাস্তবায়ন করছি’, যোগ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

আজ রোববার ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, দেশটিতে একদিনে রেকর্ড সংখ্যক তিন লাখ ৪৯ হাজার ৬৯১ জনের করোনা ধরা পড়ে। এদিন সারা দেশে মারা গেছে দুই হাজার ৭৬৭ জন। ১৫ এপ্রিলের পর থেকে দেশটিতে প্রতিদিন দুই লাখেরও বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালগুলো রোগীতে উপচে পড়েছে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় অনেক হাসপাতাল রোগী ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, সেখানে মৃতদের দাহ করার জন্য চিতা খালি পাওয়া যাচ্ছে না। কবর দিতে গিয়েও ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।

মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্বজুড়ে কোথাও একদিনে এত রোগী আর শনাক্ত হয়নি। নতুন শনাক্তদের নিয়ে ভারতে মোট কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা এক কোটি ৬৯ লাখ ৬০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। দেশটিতে করোনায় মৃতের মোট সংখ্যা এক লাখ ৯২ হাজার ৩১১ জনে দাঁড়িয়েছে। গত দুই সপ্তাহের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, আজ পর্যন্ত আক্রান্তের হার বেড়েছে প্রায় ১৩০ ভাগ। মোট সংক্রমণের হিসেবে মৃত্যুর হার এক দশমিক ১৩ শতাংশ।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের তিন দিক থেকে স্থলসীমান্ত রয়েছে। এ ছাড়া জলপথেও ভারতের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়। তবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চলাচল হয় স্থলপথে; পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মতোই অবস্থা পশ্চিমবঙ্গেও। সেখানে বিমানসভা নির্বাচনও চলছে। করোনার কারণে শেষ দুই দফায় প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো দলীয় সমাবেশ-সভা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে ১৪ হাজার ২৮১ জন। আর এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৫৯ জনের। গত দুই সপ্তাহের তুলনায় এ রাজ্যে আক্রান্তের হার বেড়েছে ২৫৩ শতাংশ। আর এখানে সংক্রমণের হিসেবে মৃত্যুর গড় হার এক দশমিক ৪৯ ভাগ।    

এদিকে বাংলাদেশেও করোনার বাড়বাড়ন্ত চলছে। করোনা শুরুর পর থেকে এখন সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা মোকাবিলা করছে বাংলাদেশ। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১ হাজার ৫৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া দেশে নতুন করে আরও দুই হাজার ৯২২ জন আক্রান্ত হয়েছে।

এই অবস্থার মধ্যেই গতকাল শনিবার বিএনপির পক্ষ থেকে ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত বন্ধের দাবি করা হয়েছিল। এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর কারণ উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘করোনার ভয়ঙ্কর প্রকোপে পর্যুদস্ত সেবা পরিস্থিতি। এরই মধ্যে ভারত বিশ্বে সংক্রমণের হারে সবার ঊর্ধ্বে। দেশটিতে সংক্রমণ মারাত্মক, সেখানকার পরিস্থিতি মারাত্মক। আমি ভারতের এ বিষয়টি এ কারণে উল্লেখ করছি যে, ভারতের সঙ্গে আমাদের এখনো প্রচুর পরিমাণে ব্যবসায়িক সম্পর্ক এবং স্থলপথে আমাদের নাগরিকদের যাতায়াত আছে। বিশেষ করে মেডিকেল ভিসা বা অন্যান্য কারণে।’

‘আমরা যেটা দেখছি সেটা হচ্ছে যে, পশ্চিমবাংলায় সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি হয়েছে। সেজন্য আমরা মনে করছি, স্থলপথে যে সীমান্তগুলো আছে এই সীমান্তগুলো একেবারে বন্ধ করা দরকার। এরই মধ্যে বলা হয়েছে, বাইরে থেকে যারা বিমানে করে আসবেন, তাদের মাত্র তিনদিন কোয়ারেন্টিন করতে হবে। এটা আমি বিশ্বের কোথাও শুনিনি’, যোগ করেন বিএনপির মহাসচিব।