ভারতীয় শিল্পপতিদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান শেখ হাসিনার
প্রকাশ : 2022-09-07 12:57:22১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক: ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে অবকাঠামো প্রকল্প, উৎপাদন, জ্বালানি ও পরিবহন খাতে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (০৭ সেপ্টেম্বর) নয়াদিল্লির হোটেল আইটিসি মৌরিয়াতে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই) আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারতীয় বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো সময় ও খরচ কমিয়ে ‘বাই-ব্যাক’ (Buy-Back) ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশে শিল্প স্থাপন করতে পারে।
শেখ হাসিনা জানান, ২০২১-২২ অর্থ বছরে বাংলাদেশে মোট বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ১৩৭০ দশমিক ৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যেখানে ভারত থেকে এসেছে মাত্র ১৫ দশমিক ৭৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ ১ দশমিক ১৫ শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিমুখী বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সুবিধা অর্জনে দুই দেশের ব্যবসায়িক সম্প্রদায় এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত করে সহযোগিতা আরও বাড়ানো প্র্রয়োজন।
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উদার নীতির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা, আকর্ষণীয় প্রণোদনা নীতি এবং ধারাবাহিক সংস্কারসহ এই অঞ্চলে বাংলাদেশের রয়েছে সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ নীতি।
বিনিয়োগ এবং দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে শিল্পায়নের প্রসার এবং বহুমুখীকরণ, কর্মসংস্থান, উৎপাদন এবং রপ্তানি বাড়াতে সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ২৮টি হাই-টেক পার্ক প্রতিষ্ঠা করার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
মোংলা এবং মিরেরশরাইয়ে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য দুটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করে উপস্থিত ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, এখানে উপস্থিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানাই। এটি দুই দেশের সদিচ্ছাকে কাজে লাগানোর পথ প্রশস্ত করবে এবং এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিয়ে আসবে।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধার কারণে বিশাল বাজার পাওয়ার সুযোগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা শুধুমাত্র ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে নয়, নেপাল, ভুটান এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে তাদের পণ্য রপ্তানি করতে সক্ষম হবে।
বৃহত্তর লাভের জন্য ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতার ক্ষেত্র বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, বৃহত্তর লাভের জন্য বাংলাদেশ-ভারত সহযোগিতাকে বাণিজ্যের বাইরে নিয়ে যাওয়া উচিত। এতে বিনিয়োগ, অর্থ, পরিষেবা, প্রযুক্তি স্থানান্তর অন্তর্ভুক্ত করা এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রেক্ষাপটে স্থাপন করা উচিত।
ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশের দিকে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার এবং এর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সস্তা খরচ এবং বিপুল ভোক্তার সুবিধা নেওয়ার সময় এসেছে।
তিনি বলেন, দুই দেশের ব্যবসায়ীদের আরও ঘনিষ্ঠ হওয়া এবং আমাদের জনগণের পারস্পরিক সমৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য যথাযথ ভূমিকা পালন করা উচিত। এর মাধ্যমে আমরা এ অঞ্চলে সমৃদ্ধি ও শান্তি আনতে সক্ষম হব।
বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের মোট দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে যথেষ্ট প্রবৃদ্ধি হয়েছে। যেখানে বাণিজ্যিক ভারসাম্য অনেকটাই ভারতের পক্ষে ছিল।
মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সক্ষমতার কথা তুলে ধরে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বর্তমানে উন্নত উৎপাদন ক্ষমতার সঙ্গে ভারতের বাজারে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহে বাংলাদেশ প্রস্তুত। ভারতীয় আমদানিকারকদের বাংলাদেশি পণ্যগুলো দেখার আমন্ত্রণ জানাই যেগুলো তারা দূরের দেশগুলো থেকে উচ্চমূল্যে আমদানি করছেন।
দুই দেশের মধ্যেকার সুসম্পর্কের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দুর্দান্ত ভালো সম্পর্ক রয়েছে। যেখানে দুই দেশের সম্পর্ক প্রতিবেশী কূটনীতির রোল মডেল হিসেবে পরিচিত।
তিনি বলেন, ৫৪টি অভিন্ন নদী এবং ৪ হাজার কিলোমিটারের বেশি সীমান্ত থাকা দুই দেশের মধ্যে বিরোধ নেই। বাংলাদেশ ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন ও বাণিজ্য অংশীদার।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেকার বিদ্যমান গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে বলে আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পর্যটক ও চিকিৎসা রোগী পায় এবং হাজার হাজার ভারতীয় শ্রমিক বাংলাদেশে কাজ করছেন। তারা উভয় দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সোমবার (০৫ সেপ্টেম্বর) নয়াদিল্লি আসেন প্রধানমন্ত্রী। সফর শেষে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ফিরবেন তিনি।