ব্যালন ডি’অরে আর ভোট দিতে পারবে না বাংলাদেশ
প্রকাশ : 2022-03-12 11:25:57১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
রবার্ট লেভানডফস্কির ব্যালন ডি’অর জয়ের স্বপ্নটা এবার আরেকটু উজ্জ্বল হচ্ছে। গতবার আলোচনায় থেকেও তিনের মধ্যে না থাকা করিম বেনজেমাও এবার একটু আশায় বুক বাঁধতে পারছেন। ফুটবলের ব্যক্তিগত অর্জনের সেরা স্বীকৃতি ব্যালন ডি’অর তাদের নিয়মে কিছু পরিবর্তন এনেছে। চারটি বড় পরিবর্তনের ফলে এবার এই পুরস্কারের মঞ্চে লিওনেল মেসি বা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোদের আধিপত্য কমার সম্ভাবনা অনেক বেড়েছে।
চারটি পরিবর্তনই বেশ বড়। তবে এর মধ্যে একটি পরিবর্তন প্রভাব ফেলবে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনেও। নতুন নিয়মে বাংলাদেশ থেকে আর ব্যালন ডি’অরে ভোট দেওয়া যাবে না। বিশ্ব ফুটবলে বাংলাদেশের অবস্থানই দেশের ক্রীড়া সাংবাদিকের কাছ থেকে এই সম্মান কেড়ে নিচ্ছে।
ফরাসি সাময়িকী ফ্রান্স ফুটবল ১৯৫৬ সাল থেকে বছরের সেরা ফুটবলারকে পুরস্কৃত করতে ব্যালন ডি’অর দিয়ে আসছে। একসময় শুধু ইউরোপের ফুটবলাররাই পেতেন এই পুরস্কার। সে নিয়মে বদল এসেছে নব্বইয়ের দশকে। তখন ইউরোপের বাইরের ফুটবলারদেরও বিবেচনায় নেওয়ার সুবাদেই পেলে-ম্যারাডোনারা না পেলেও লিওনেল মেসিকে এই মঞ্চে দেখার সুযোগ মিলেছে।
সর্বোচ্চ সাতবার ব্যালন ডি’অর জিতে অনন্য এক উচ্চতায় চলে গেছেন মেসি। তাঁর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো গত চার বছরে পিছিয়ে পড়েছেন, তিনি এ পর্যন্ত জিতেছেন পাঁচটি। এঁরা সবাই পুরস্কার জিতেছেন একটি পঞ্জিকাবর্ষে তাঁদের পারফরম্যান্সের সুবাদে। কিন্তু ব্যালন ডি’অরের নতুন নিয়মে বদলে যাচ্ছে সব।
১. ব্যাপ্তির পরিবর্তন
ব্যালন ডি’অরের শুরুর দিকে একটি পঞ্জিকাবর্ষের সেরা খেলোয়াড় খুঁজে বের করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এ পর্যন্ত সে নিয়মে কোনো পরিবর্তন আনেনি ফ্রান্স ফুটবল। জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স বিবেচনা করা হতো। এর ফলে ইউরোপিয়ান ফুটবলের দুটি মৌসুমের অর্ধেক বিবেচনায় আসত। প্রথম মৌসুমের জানুয়ারি থেকে জুলাই ও দ্বিতীয় মৌসুমের আগস্ট থেকে ডিসেম্বরের পারফরম্যান্স বিবেচনা করা হতো।
কিন্তু বর্তমান ফুটবলের বাস্তবতায় এবং অধিকাংশ বড় প্রতিযোগিতা আগস্টে শুরু হওয়ায় এবার থেকে বছর নয়, এক মৌসুমের পারফরম্যান্স বিবেচনা করা হবে। অর্থাৎ এ বছর ২০২২ ব্যালন ডি’অরে ২০২১-২২ মৌসুমের পারফরম্যান্সই শুধু বিবেচ্য হবে। কাতার বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স বিবেচিত হবে ২০২৩ ব্যালন ডি’ অরে। ফলে জাতীয় দলের পারফরম্যান্সের কারণে যাঁরা পিছিয়ে পড়তেন, যেমন লেভানডফস্কি, তাঁদের এবার জেতার সুযোগ অনেক বেড়ে যাচ্ছে।
২. যৌক্তিক খেলোয়াড় তালিকা
ব্যালন ডি’অরের প্রক্রিয়া শুরু হয় তালিকা প্রস্তুতির মাধ্যমে (পুরুষের ক্ষেত্রে ৩০, মেয়েদের ক্ষেত্রে ২০, গোলকিপার ও তরুণদের ক্ষেত্রে ১০)। এ কারণে এবার তালিকা প্রস্তুতিতেও নজর দেওয়া হয়েছে। তালিকায় থাকা নামগুলো যেন তর্কাতীত, ন্যায্য ও প্রাসঙ্গিক মনে হয় সেটা নিশ্চিত করতে চাইছে ফ্রান্স ফুটবল। এত দিন এই পত্রিকার লেখকেরাই তালিকা দিতেন।
এবার ফ্রান্স ফুটবল ও লে’কিপের লেখকদের সঙ্গে এই পুরস্কারের দূত হিসেবে কাজ করা দিদিয়ের দ্রগবাও থাকবেন। এ ছাড়া গত কয়েক বছরে ভোটে ভালো পর্যবেক্ষণশক্তি দেখানোয় ছেলেদের ক্ষেত্রে ভিয়েতনামের সাংবাদিক থ্রুং আন এনগোচের কাছ থেকে ৩০ জনের নাম এবং মেয়েদের ফুটবলে চেক প্রজাতন্ত্রের ক্যারোলিনা হ্লাভাচকোভার কাছ থেকে ২০ জনের নাম চাওয়া হবে। সবার কাছ থেকে পাওয়া নাম থেকে চূড়ান্ত তালিকা দেওয়া হবে।
৩. শক্তিশালী ভোটার তালিকা
১৯৫৬ সালে মাত্র ১৬ জন ভোট দিয়েছিলেন ব্যালন ডি’অরে। সেটা বাড়তে বাড়তে ২০২১ সালে ১৭০-এ উঠে এসেছে। বিশ্বজুড়ে ব্যালন ডি’অরের প্রভাব বোঝায় এ তথ্য। কিন্তু বিচারকের সংখ্যা ১০ গুণ বাড়লেই কি বিচার ১০ গুণ ভালো হয়? নাকি এত বেশি বিচারকের সংখ্যা বিচারের মান কমিয়ে দেয়? এত বেশি বিচারকের ফলে যে ‘ছোট’ দেশগুলোর (যেসব দেশের বড় স্বাভাবিক ফুটবল সংস্কৃতি নেই বা ঐতিহাসিক অর্জন নেই এবং মূল প্রতিযোগিতাগুলো সেভাবে জায়গা পায় না) সাংবাদিকেরা এখানে অংশ নিচ্ছেন, তাঁদের সঠিক জ্ঞান বা অভিজ্ঞতার অভাব ভোটে বিরূপ প্রভাব ফেলছে না তো—এমন একটা ভাবনা ছিলই।
যেহেতু সব ভোটকেই সমান চোখে দেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেটা যে দেশ থেকে দেওয়া হোক না কেন, এ কারণে এবার বিচারকের সংখ্যা কমিয়ে একটা ‘অভিজাত’ সীমা টানা হবে। এর ফলে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ১০০ দেশের (মেয়েদের ক্ষেত্রে শীর্ষ ৫০ দেশ) সাংবাদিক ভোট দিতে পারবেন। এর ফলে অভিজ্ঞতার মানটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে এবং (বিরল) বিস্ময়কর ভোট প্রদানে লাগাম দেওয়া যাবে।
এ নিয়ম অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশ, ভারতসহ উপমহাদেশের কোনো দেশই ভোট দিতে পারবে না। এমনকি নিউজিল্যান্ডের মতো বিশ্বকাপ খেলা দেশের সাংবাদিকও বর্তমান র্যাঙ্কিংয়ের হিসাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন না। তবে মৌসুম শেষে র্যাঙ্কিংয়ে অদলবদলে অনেক পরিবর্তন আসবে। কিন্তু ১৮৬তম বাংলাদেশের পক্ষে এই মৌসুমে বাছাইপর্ব ও প্রীতি ম্যাচ খেলে শীর্ষ ১০০-তে ঢোকা অসম্ভব।
৪. পরিষ্কার নিয়ম
মাঝে মাঝেই ব্যালন ডি’অর বিজয়ীর নাম ঘোষণার পরই বিতর্ক ওঠে। এবার তাই শর্তগুলো আবার পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ব্যালন ডি’অর ব্যক্তিগত অর্জনের পুরস্কার। তাই এখানে খেলোয়াড়ের ব্যক্তিগত অর্জন প্রথমে বিবেচ্য হবে। দ্বিতীয়ত, ফুটবল দলীয় অর্জনেরও খেলা বলে দলগত সাফল্য বিবেচিত হবে। তৃতীয় ধাপে একজন খেলোয়াড়ের মান দেখা হবে, তাঁর খেলোয়াড়ি চেতনা দেখা হবে। তবে চতুর্থ ধাপে অতীতে একজন খেলোয়াড়ের অতীত অর্জনও বিবেচনা করা হতো, এবার থেকে সেটা আর থাকবে না। শুধু এই মৌসুমের পারফরম্যান্সই বিবেচ্য হবে।