ব্যাংক হিসাব ও বাড়ি জব্দে এস কে সিনহা বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে চিঠি পাঠাবে দুদক
প্রকাশ : 2023-02-28 12:30:31১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
অভিযোগ রয়েছে, কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা ক্ষমতা অপব্যবহারের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ উপার্জন করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে তার ছোট ভাই অনন্ত কুমার সিনহার অ্যাকাউন্টে দুই লাখ ৮০ হাজার ডলার পাচার করেন। এই টাকায় সেখানে তিনতলা বাড়ি কেনা হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার সঠিক তদন্তের স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রে এসকে সিনহা ও অনন্ত সিনহার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বাড়ি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গত ২০ ফেব্রুয়ারি এই আদেশ দেওয়া হয়। বাড়ি ও ব্যাংক হিসাব জব্দের জন্য এখন যুক্তরাষ্ট্রে চিঠি পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এসকে সিনহা ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় বিদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বাড়ি জব্দের আবেদন করা হয়েছিল। আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেছেন।’
জব্দ হওয়া তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হলো- ম্যাসাচুসেটসের সিটিজেন ব্যাংক বস্টনে পারসোনাল চেকিং অ্যাকাউন্ট, ম্যাসাচুসেটসের বস্টনে সেফ ডিপোজিট বক্স ও ভ্যালে ন্যাশনাল ব্যাংকে অনন্ত কুমার সিনহার অ্যাকাউন্ট। এছাড়া সম্পত্তি হিসেবে নিউ জার্সির প্যাটারসনের জ্যাসপার স্ট্রিট্রের ১৭৯ ঠিকানায় অবস্থিত বাড়িটি জব্দ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বাড়ি জব্দ চেয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান আদালতে আবেদন করেন। এরপর দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল শুনানি করেন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান আদালত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বাড়ি জব্দের আদেশ দেন।
আবেদনে বলা হয়, সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা অবৈধ উপায়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদ ও সম্পত্তি অর্জন করেছেন। তার একটি অংশ যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হয়েছে।
পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘বিদেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বাড়ি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আদেশটি কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আদেশটি ইংরেজিতে লিখে বিদেশে পাঠানো হবে। সেখানে ইন্টারপোল, এফবিআই বা অন্য কোনও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহযোগিতা নেওয়া হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রে এস কে সিনহার তিনতলা বাড়ির সন্ধান পাওয়ার পর ২০২২ সালের ৩১ মার্চ দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি করেন সংস্থার উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। মামলায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়। এ মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৬ এপ্রিল দিন ধার্য রয়েছে। এ মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, এস কে সিনহা প্রধান বিচারপতি থাকার সময় অপরাধলব্ধ অর্থ হুন্ডিসহ বিভিন্নভাবে আমেরিকায় পাচার করেন। পরে তার ছোট ভাই অনন্তের অ্যাকাউন্টে এসব অর্থ স্থানন্তর হয়। দুই লাখ ৮০ হাজার ডলার এস কে সিনহা তার ভাইয়ের নামে বাড়িটি কেনেন। ২০১৮ সালের ১২ জুন এ বাড়িটি কেনা হয়।
এর আগে ফারমার্স ব্যাংক থেকে চার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে অর্থ আত্মসাত ও পাচারের অভিযোগে দুদকের করা মামলার পৃথক দুই ধারায় এসকে সিনহার ১১ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম কারাদণ্ডের এই আদেশ দেন। পাশাপাশি তাকে ৪৫ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাসের সাজা দেওয়া হয়। এছাড়া তার অ্যাকাউন্টে অবরুদ্ধ থাকা ৭৮ লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেওয়া হয়। এছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে মোট সাত কোটি ১৪ লাখ ৫ হাজার ৮৬৫ টাকা সম্পদ অর্জন করে ভাই ও আত্মীয়ের নামে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তর করেন এসকে সিনহা। এ ঘটনায় দুদকের করা আরেকটি মামলা তদন্তধীন।
২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন এস কে সিনহা। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং কিছু পর্যবেক্ষণ লেখেন তিনি। এরপর সমালোচনার মুখে ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে ছুটিতে যান তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। পরে বিদেশ চলে যান তিনি। সেখান থেকেই তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে বিচারিক ক্ষমতার কার্যকাল শেষ হওয়ার ৮১ দিন আগেই তিনি পদত্যাগ করেন।