বেড়েই চলছে নদ-নদীর পানি, প্লাবিত নিম্নাঞ্চল
প্রকাশ : 2021-08-23 10:07:13১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
উজানের ঢলে দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা, পদ্মা এবং ব্রহ্মপুত্রের পানি বেড়ে যাওয়ায় একের পর এক নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। একদিনের মধ্যে সিরাজগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, পাবনা, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি কিছুটা বাড়লেও কাজীপুর পয়েন্টে কমেছে। সেইসঙ্গে জেলার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া অভ্যন্তরীণ সকল নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
টানা কয়েক দিন যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এসব এলাকার হাজারো মানুষ। এছাড়া গো-চারণ ভূমি তলিয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন জেলার গো-খামারিরা। পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন স্থানে যমুনা নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টের দায়িত্বে থাকা গেজ মিটার (পানি পরিমাপক) আব্দুল লতিফ সংবাদ মাধ্যমকে জানান, সোমবার (২৩ আগস্ট) সকাল ৬টা পর্যন্ত যমুনার পানি শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কাজীপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টের দায়িত্বে থাকা গেজ মিটার (পানি পরিমাপক) ওমর ফারুক জানান, সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত যমুনার পানি কাজীপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এছাড়া, যমুনার মথুরা পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার এবং আরিচা পয়েন্টের পানি ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিতহচ্ছে।এতে জেলার অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে প্লাবিত হচ্ছে সেখানকার নিম্নাঞ্চল ও ফসলি জমি।
ধরলা নদীর কুড়িগ্রাম পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। ফলে জেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে সাত হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নীলফামারীতে তিস্তার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও দুর্ভোগ কমেনি।
পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টের পানি ৪২ থেকে বেড়ে ৪৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নতুন করে এই নদীর সুরেশ্বর পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। আত্রাই নদীর বাঘাবাড়ি পয়েন্টের পানি ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বউছে। গড়াই নদীর কামারখালি পয়েন্টের পানি কিছুটা কমে এখন বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত উজান থেকে আসা পুঞ্জীভূত পানি ঢল হয়ে ভাটি এলাকা বাংলাদেশের দিকে আসছে। বিশেষ করে গঙ্গা, পদ্মা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় পানি দ্রুত বাড়ছে। আগামি এক সপ্তাহ পানি আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, এ বছর এখনও পুরোদমে বন্যা শুরু হয়নি। তবে, এখন যেভাবে নদনদীর পানি বাড়ছে, তাতে চলতি মাসের বাকি সময়ে উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, আগামি ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। দেশের আট জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।জেলাগুলো হল: কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও শরীয়তপুর। এসব জেলার নিম্নাঞ্চলে পানির উচ্চতা বেড়ে নতুন এলাকা প্লাবিত হতে পারে।
পর্যবেক্ষণে থাকা নদনদীর ১০৯টির মধ্যে ৫৮ পয়েন্টে পানি বেড়েছে, কমেছে ৪৫ ও অপরিবর্তিত রয়েছে ছয়টি পয়েন্টের পানি। আর আটটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামি ১০ দিনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামি সপ্তাহে ঢাকার আশেপাশের নদনদীর পানি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । তবে তা নদীগুলোর অববাহিকায় বিপৎসীমা অতিক্রমের সম্ভাবনা নেই।
এদিকে, সোমবারের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং বরিশাল ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে সিলেটে ৭৭ মিলিমিটার। আগামি দুদিন দিন বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।