বিসিএস ক্যাডারে চাকুরী পাওয়ার পেছনে আমার মায়ের ভুমিকা

প্রকাশ : 2021-06-05 19:38:38১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

বিসিএস ক্যাডারে চাকুরী পাওয়ার পেছনে আমার মায়ের ভুমিকা

আমার নানা বৃটিশ আমলে ঢাকা কোর্ট এর পেশকার ছিলেন।সেই সুবাদে আমার মা বিচারক/ম্যাজিস্ট্রেটদের শান শওকত, সুযোগ সুবিধা ও ক্ষমতার বিষয়ে একটি সম্যক ধারনা ছোটবেলা থেকেই পেয়েছিলেন।আমার মা ৭ম শ্রেণী পাশ ছিলেন।কম বয়সেই বিবাহ হয়।

আমার বাবা চাকুরী জীবি ছিলেন।তেমন উল্লেখ করার মত নয়।ভাই বোনেরা এসএস সি/এইচএসসি অবধি পড়াশুনা করে চাকুরী ও ব্যবসা শুরু করে।আমি প্রাথমিকে পড়াকালীন সময়েই পিতা/মাতার দৃষ্টিতে পড়ি। পড়ালেখায় বেশ মনোযোগী ছিলাম।

আমার বাবা আমাকে এলাকার সবচেয়ে ভাল স্কুল "মালখানাগর হাই স্কুল"এ তৃতীয় শ্রেণিতে এডমিশন করে দেন।আমি সেদিন খুবই আনন্দিত ও পুলকিত  হয়েছিলাম।

বাৎসরিক পরীক্ষায় আমি প্রথম হয়ে ক্লাস ফোরে প্রমোশন পেলাম।ক্লাস ফোরে অধ্যয়নকালীন সময়ে একটি অনুষ্ঠানে তৎকালীন মুনসীগঞ্জ মহকুমা প্রশাসক জনাব হেদায়েতুল হক(পরে সচিব এবং রেক্টর,পিএটিসি ছিলেন)আমাদের বিদ্যালয়ে একটি অনুসঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এসেছিলেন।

তাঁকে বরণ করার জন্য তিনটি গেইট বানানো হয়েছিল।আমরা তাঁকে নেচে গেয়ে বাদ্য বাজনা বাজিয়ে এবং ফুল ছিটিয়ে বীরের বেশে বরণ করেছিলাম।
   
 রাতের খাবার সময় আমার মাকে ঘটনাটির বিস্তারিত বললাম।আমার নানার পেশকারের চাকুরীর বদৌলতে এসডিও বা মহকুমা প্রশাসক এর পদ ও ইহার গুরত্বের বিষয়ে আগেই ধারনা ছিল বিধায় আমাকে একটি উচুমানের ধারনা দিলেন।

আমি আমার মাকে গলায় জরিয়ে ধরে বললাম "মা আমি বড় হয়ে এসডিওই হব।"আমার স্নেহময়ী মা আমাকে আদর করে চুমু খেয়ে বলছিলেন "হ্যাঁ বাবা তুমি বড় হয়ে এসডিওই হবে।"
   
দিন যেতে লাগলো। পড়াশুনা শেষ হয়ে গেল।   এবার এসডিও হওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুতি নেয়ার পালা।বেশ কয়েকটি চাকুরীও পেয়ে গেলাম।আমার মা চাকুরীগুলিতে তেমন  সন্তুষ্ট হতে পারলেন না।তিনি প্রায়ই সেই এসডিও হওয়ার কথা  আমাকে মনে করিয়ে দিতেন।

১৯৮২ সনে সেই সুযোগ এসে গেল।১৯৮২ সনের অক্টোবর মাসে রাত জেগে দুই মাসব্যাপী বিসিএস পরীক্ষা দিলাম।লিখিত পরীক্ষায় পাশ করলাম।আমার মা সব সময় আমাকে উৎসাহ দিয়ে যেতে লাগলেন।

সাইকোলজি টেস্টে ও উত্তীর্ণ হলাম।মৌখিক পরীক্ষার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে লাগলাম।মায়ের উৎসাহ,যত্ন ও সার্বক্ষণিকভাবে দেখভাল তো ছিলই।

মায়ের আশীর্বাদ ও প্রবল ইচ্ছাকে মহান আল্লাহ মঞ্জুর করলেন।আমি বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে চাকুরী পেলাম। এ খবর মায়ের নিকট পৌছামাত্র মা চীৎকার করে  কেদেছিলেন।তাঁর কান্না শুনার পর পাড়া প্রতিবেশীরা আমাদের বাড়িতে জড়ো হয়।কান্নার কারন জিজ্ঞাসার জবাবে আমার মা সেদিন আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন"আমার জনু আজ ম্যজিস্ট্রেট হইছে।"
    
 দীর্ঘ ৩৩ বছর চাকুরী করেছি।এসডিও হতে পারিনি।এসডিও হওয়া সম্ভব ও ছিল না।কেননা প্রেসিডেন্ট হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ ১৯৮৪ সনে ৩রা ফেব্রুয়ারি সমস্ত মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করেন।এসডিও না হতে পারলেও ইউএনও হয়েছিলাম।
      
চাকুরী জীবনে আমার মাকে আমার সাথে রেখেছি।দিনাজপুরে চাকুরীকালীন সময়ে আমার মাকে জেলা প্রশাসক জনাব এম আমিনুল ইসলাম ও জনাব মো:সাখাওয়াত হোসেন খুব সন্মান ও শ্রদ্বা করতেন।এ দুজন আজ আর বেচে নেই।

আমি আমার মায়ের উৎসাহ,দোআ ও অনুপ্রেরণায় ম্যাজিস্ট্রেট হতে পেরেছিলাম।
  
আমার পরমশ্রদ্বাশীল মা আজ আর বেচে নেই।তিনি ২০১০ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি ইন্তেকাল করেন।আমার মায়ের এবং সকলের মায়ের জন্য দোআ কামনা করছি।সকলকে সালাম ও শুভেচ্ছা।

 লেখক-সাবেক যুগ্মসচিব।