বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিল নয়, যে ম্যাচের টিকিটের চাহিদা তুঙ্গে
প্রকাশ : 2025-12-13 11:04:13১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
২০২৬ বিশ্বকাপের জন্য শুক্রবার থেকে তৃতীয় ধাপের টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। তারপর থেকে টিকিটের উচ্চমূল্য নিয়ে সমর্থকগোষ্ঠীর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে ফিফা। তবে টিকিট কেনার জন্য সমর্থকদের মধ্যে যে তাড়না দেখা গিয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে টিকিটের চড়া দাম মাঠে বসে তাদের খেলা দেখায় প্রভাব ফেলবে। ফিফা জানিয়েছে, প্রথম ২৪ ঘণ্টায় তারা ৫০ লাখ টিকিটের জন্য আবেদন পেয়েছে।
বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা বলছে, এই সংখ্যা প্রমাণ করে ‘বিশ্বজুড়ে টিকিটের চাহিদা অসাধারণ পর্যায়ে পৌঁছেছে।’ গত সপ্তাহে ৪৮ দলের টুর্নামেন্টের গ্রুপ চূড়ান্ত হয়েছে। তাকে এই আসরের জন্য প্রথমবার নির্দিষ্ট ম্যাচ ধরে ধরে টিকিটের আবেদন করতে পারছেন উৎসুক সমর্থকরা।
যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত এই আসরের জন্য ২০০টিরও বেশি দেশের ভক্ত-সমর্থকরা টিকিট কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে। ‘র্যান্ডম সিলেকশন ড্র’ এর মাধ্যমে বৃহস্পতিবার থেকে ভক্তরা ম্যাচ, টিকিট ক্যাটাগরি ও প্রতি ম্যাচের জন্য টিকিট সংখ্যা বাছাই করে আবেদন করতে পারছে। তবে সবাই যে টিকিট পাবেন এমন নয়। আগামী বছরের ১৩ জুন পর্যন্ত চলবে এই পর্যায়ের টিকিট বিক্রি। যাদের টিকিটের আবেদন গ্রহণ করা হবে, তাদেরকে ফেব্রুয়ারিতে ইমেইলে জানিয়ে দেওয়া হবে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে টাকা কাটা যাবে।
ফিফা বলছে, তৃতীয় পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি চাহিদা দেখা গেছে তিনটি আয়োজক দেশ থেকে। তারপর কলম্বিয়া, ইংল্যান্ড, ইকুয়েডর, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, স্কটল্যান্ডম জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও পানামার মতো দেশগুলো থেকে বেশি টিকিটের আবেদন পড়েছে।
গ্রুপ পর্বের লড়াইয়ের মধ্যে পর্তুগাল ও কলম্বিয়া ম্যাচের টিকিটের জন্য সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে প্রথম ২৪ ঘণ্টায়। আগামী ২৭ জুন মায়ামিতে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোদের প্রথম ম্যাচ। চাহিদায় থাকা অন্য ম্যাচগুলো হলো ব্রাজিল বনাম মরক্কো, মেক্সিকো বনাম সৌদি আরব, ইকুয়েডর বনাম জার্মানি এবং স্কটল্যান্ড বনাম ব্রাজিল।
২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপের আসর শুরুর আর মাত্র ৬ মাস বাকি। প্রথম রাউন্ডে যে দামে টিকিট বিক্রির কথা জানিয়েছিল ফিফা, তা থেকে ভোল পাল্টে ফেলেছে তারা। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ ইউরোপের ফুটবলভক্তরা।
সংবাদ সংস্থা এপি বলছে, গ্রুপপর্বে যে দামে ফিফা টিকিট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিল তার সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির মিল নেই। বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ এই সংস্থার মতে– গ্রুপপর্বে সর্বনিম্ন টিকিটের দাম ৬০ ডলার বা ৭৩১৮ টাকা। অথচ সাত বছর আগে বিশ্বকাপের স্বাগতিক হওয়া নিয়ে বিডিংয়ের সময় প্রথম রাউন্ডের টিকিট সর্বনিম্ন ২১ ডলার করার কথা জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র সকার কর্তৃপক্ষ।
জার্মান সকার ফেডারেশন বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বে বিভিন্ন ক্যাটাগরির টিকিটমূল্য প্রকাশ করেছে। যেখানে সর্বনিম্ন ১৮০ ডলার [প্রায় ২২ হাজার টাকা) থেকে ৭০০ ডলার [৮৫ হাজার ৩৮৪ টাকা) পর্যন্ত নির্ধারিত হয়েছে দাম। এ ছাড়া ফাইনাল ম্যাচের টিকিট সর্বনিম্ন ৪১৮৫ ডলার [প্রায় ৫ লাখ ১১ হাজার টাকা) এবং সর্বোচ্চ ৮৬৮০ ডলার [১০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা)। বিশ্বকাপ টিকিটের এই উচ্চমূল্যের তালিকা ছড়িয়ে পড়তেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে সমর্থকরা। ফুটবল সাপোর্টার্স ইউরোপও [এফএসই) ফিফাকে ‘প্রতারক’ ও ‘চাঁদাবাজ’ বলে ক্ষোভ জানিয়েছে।
২০২৬ বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠানে ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো
গত সেপ্টেম্বরে অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে টিকিট ছাড়ার পর ফিফা জানিয়েছিল, গ্রুপপর্বে সর্বনিম্ন ৬০ ডলার এবং ফাইনালে ৫৭৩০ ডলারে টিকিট পাওয়া যাবে। তবে সেই দাম ‘ডায়নামিক প্রাইসিং’ পদ্ধতির সঙ্গে সমন্বয় করতে গিয়ে পরিবর্তন হতে পারে। এবারই প্রথম জাতীয় দেশগুলোর বিশ্বকাপে এই টিকিটমূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। ফিফার কাছ থেকে চার ক্যাটাগরিতে পাওয়া যাবে বিশ্বকাপের টিকিট। সবচেয়ে উন্নতমানের আসন মিলবে ক্যাটাগরি–১ এ।
জার্মান সকার ফেডারেশনের প্রকাশিত তালিকায় তিন ক্যাটাগরির টিকিটমূল্য দেখা যাচ্ছে। তিনবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি ২০২৬ আসরে ‘ই’ গ্রুপের প্রথম ম্যাচ খেলবে আগামী ১৪ জুন। হিউস্টনে ওই ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ প্রথমবার বিশ্বকাপে জায়গা পাওয়া কুরাসাও। জার্মান ফেডারেশনের তথ্যমতে– ওই ম্যাচে টিকিটের সর্বনিম্ন দাম ১৮০ ডলার বা ২২ হাজার টাকা। সেমিফাইনালে সর্বনিম্ন ৯২০ ডলার থেকে সর্বোচ্চ ১১২৫ ডলারে টিকিট কিনতে হবে। এ নিয়ে সমর্থকদের মাঝে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তৈরি হলে এপি এবং রয়টার্স যোগাযোগ করেছিল ফিফার সঙ্গে। তবে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
ফুটবল সাপোর্টার্স ইউরোপের [এফএসই) নির্বাহী পরিচালক রোনান ইভেইন রয়টার্সকে বলেছেন, ‘বিশ্বকাপের আবহ উপভোগ ও রোমাঞ্চ বাড়াতে সরাসরি মাঠে থেকে সমর্থকদের অবদান রাখা দীর্ঘ সময়ের ঐতিহ্য। কিন্তু ফিফা “মনুমেন্টাল বিট্রেয়াল” [বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণা) করেছে। ফিফা নির্ধারিত মূল্যতালিকা দেখে আমরা হতবাক হয়েছি। এই টুর্নামেন্ট থেকে যত বেশি সম্ভব পকেট ভারী করার চেষ্টা চলছে। আমাদের বিশ্বাস এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে টুর্নামেন্টের যে সংস্কৃতি সেটি ঝুঁকির মুখে পড়বে।’
তবে ফিফার বিবৃতি অনুযায়ী, টিকিটের যে চাহিদা তা সমর্থকগোষ্ঠীর বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছে।