বিবিসিকে পাকিস্তান আইএসপিআরের মুখপাত্র, ‘ভারত আগুন নিয়ে খেলছে’

প্রকাশ : 2025-05-24 12:00:48১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

বিবিসিকে পাকিস্তান আইএসপিআরের মুখপাত্র, ‘ভারত আগুন নিয়ে খেলছে’

বিবিসি: পাকিস্তান আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী মনে করেন, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ হলে তা ‘বোকামি’ হবে। কারণ, এটা এমন একটা পথ, যা দুই দেশের জন্য ‘পারস্পরিক ধ্বংস’ ডেকে আনতে পারে। তাঁর মতে, ‘এটা [পারমাণবিক যুদ্ধ) একটা অভাবনীয় এবং অযৌক্তিক ধারণা।’

দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনার পর সম্প্রতি বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শরিফ চৌধুরী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, পাকিস্তান শান্তি চায়। কিন্তু যদি চাপিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে তাঁরা যুদ্ধের জন্য সব সময় প্রস্তুত।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধ সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে শরিফ চৌধুরী অভিযোগ তুলেছেন, ভারত যেভাবে ‘ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে’ এবং ‘ন্যারেটিভ’ (আখ্যান) ছড়াচ্ছে, তাতে বর্তমান আবহে ‘যেকোনো সময় স্ফুলিঙ্গ দেখা যেতে পারে।’
শরিফ চৌধুরীর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, বাস্তবে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধের কোনো আশঙ্কা কি আছে? নাকি প্রতিরোধ গড়ে তুলতেই এই প্রসঙ্গ আনা হচ্ছে?

উত্তরে শরিফ চৌধুরী বলেন, ‘ভারত আগুন নিয়ে খেলছে।’ দুই দেশের সংঘর্ষের আবহে ভারতের তৈরি আখ্যানকেই এ জন্য দায়ী করেন তিনি।

শরিফ চৌধুরী জানিয়েছেন, পাকিস্তান ও ভারত দুই দেশই পরমাণু শক্তিধর দেশ। তাদের মধ্যে সামরিক সংঘাত একেবারে বোকামি। এটা অকল্পনীয়। এটা একটা অযৌক্তিক ধারণা। কিন্তু আপনারা দেখছেন, বেশ কিছুদিন ধরেই ভারত এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করছে, যেখানে সামরিক সংঘাতের সুযোগ তৈরি হয়।

ভারতের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলেছেন শরিফ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, কয়েক বছর পরপর (ভারতের পক্ষ থেকে) মিথ্যা আখ্যান তৈরি করা হচ্ছে এবং সেই আখ্যানও সেকেলে। গোটা পৃথিবী এখন জানতে পেরেছে, প্রথম দিন থেকেই ভারতের যে অবস্থান ছিল, তা ভিত্তিহীন। এমনটা কয়েক বছর অন্তর অন্তর পুনরাবৃত্তি করা হয়। আসল কথা হলো, ওরা [ভারত) আগুন নিয়ে খেলছে।’

পাকিস্তানের আইএসপিআরের মহাপরিচালক বলেন, সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে পাকিস্তান ‘অত্যন্ত পরিপক্বতা’র সঙ্গে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং উত্তেজনা বৃদ্ধি রোধ করেছে। ভারতে ঘটা কোনো ‘চরমপন্থী’ ঘটনায় যদি পাকিস্তানের কোনো নাগরিকের জড়িত থাকার প্রমাণ থাকে, ‘আমাদের সেই প্রমাণ দেওয়া উচিত। আমরা নিজেরাই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর চলতি মাসের ছয় ও সাত তারিখের মধ্যবর্তী রাতে ভারতের দিক থেকে পাকিস্তানের কয়েকটা এলাকায় বিমান হামলা চালানো হয়। যে লক্ষ্যবস্তুগুলোকে নিশানা করা হয়েছিল, সেগুলো ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটি’ বলে জানিয়েছিল ভারত।

এরপর পাকিস্তানও পাল্টা বিমান হামলা চালায় এবং শেষ পর্যন্ত দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়।শরিফ চৌধুরী বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা শান্তিকে অগ্রাধিকার দিই, আমরা শান্তি ভালোবাসি। এখন পাকিস্তানে আমরা শান্তি উদ্‌যাপন করছি; কিন্তু আমরা সব সময় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত..। যদি যুদ্ধই প্রয়োজন হয়, তাহলে যুদ্ধই হবে।’

বর্তমান আবহে যুদ্ধ এখনো বিকল্প কি না, জানতে চাইলে শরিফ চৌধুরী বলেন, প্রকৃত সংঘাত এখনো রয়ে গেছে। এতে যেকোনো সময় স্ফুলিঙ্গ যোগ করা যেতে পারে।

পরিস্থিতির দিকে একবার লক্ষ্য করে দেখুন, ১০ মের পর থেকে অনেকগুলো দিন কেটে গেছে; কিন্তু ভারতে যে আখ্যানের প্রচার করা শুরু করেছিল, তা এখনো চলছে।ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ রাজনীতি’র দিকে আঙুল তুলে শরিফ চৌধুরী বলেন, ‘ভারত যেভাবে দর–কষাকষি করছে, সেটা মূলত তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির উন্নতির একটা প্রচেষ্টা বলেই মনে হচ্ছে। সেখানে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতৃত্বের আভাস খেয়াল করেছেন কি? তাঁরা বলছেন, তাঁদের দেশ সন্ত্রাস ও একটা সন্ত্রাসী ঘটনার হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে।’

পাকিস্তান ভারতের ছয়টি সামরিক উড়োজাহাজ ভূপাতিত করেছে বলে দাবি করেছেন শরিফ চৌধুরী। দেশটি চাইলে ভারতের আরও সামরিক উড়োজাহাজ ভূপাতিত করতে পারত; কিন্তু দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে তা করেনি বলে দাবি করেন দেশটির এই সামরিক কর্মকর্তা।

পেহেলগামের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে প্রশ্নগুলো ওঠা উচিত, তা তোলা হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ভারত সরকারের কেউ পেহেলগামের ঘটনা নিয়ে কঠিন প্রশ্নগুলো তুলছেন না। নিরাপত্তার এত বড় গাফিলতি কীভাবে হলো, সেই বিষয় নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলছে না।

শরিফ চৌধুরী বলেন, এ ঘটনার নেপথ্যে যে কারণ রয়েছে, সেগুলো বোঝার আগ্রহ কারও মধ্যে নেই। যারা নিপীড়ন এবং অবিচারের কথা বলছেন, তাঁদের কণ্ঠস্বর শুনতে তাঁরা (ভারত) প্রস্তুত নয়। এ ঘটনাগুলো সেই অবিচারেরই ফলাফল, যা তাঁরা নিজেরাই করেছেন।

দুই দেশের মধ্যে ‘ব্যাক চ্যানেল’ যোগাযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে শরিফ চৌধুরী বলেন, এই প্রশ্নের উত্তর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিতে পারবে। তিনি বলেন, ‘রাজনীতি ও কূটনীতির বিষয়গুলো আমাদের আওতায় পড়ে না। আমরা অংশীদার হতে পারি; কিন্তু এসব বিষয়ে আমরা প্রধান ভূমিকা পালন করি না।’

ভারতের সামরিক উড়োজাহাজ ভূপাতিত করা নিয়েও কথা বলেছেন শরিফ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান অত্যন্ত দায়িত্বশীলভাবে এই সংঘর্ষের মোকাবিলা করেছে। ৬ ও ৭ মে রাতে আমরা আমাদের প্রতিরক্ষার্থে তাদের কড়া জবাব দিয়েছি এবং তাদের ছয়টি বিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছি। আমরা চাইলে এর চেয়ে বেশি সংখ্যক বিমান ভূপাতিত করতে পারতাম; কিন্তু আমাদের নেতৃত্ব খুব দায়িত্বশীল ছিল এবং তারা পরিপক্ব দৃষ্টিকোণ থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।’

শরিফ চৌধুরী জানান, পাকিস্তান খোলাখুলিভাবে এই হামলার পরে ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করেছে। পাকিস্তান নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং ভারত তাদের প্রতিক্রিয়ামূলক পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত করতে পারেনি।

শরিফ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা কি থেমে গিয়েছিলাম? ভারত কি পাকিস্তানকে প্রতিক্রিয়াস্বরূপ জবাব দেওয়া থেকে ৬ ও ৭ মের রাতে আটকাতে পেরেছে? না, পারেনি। কারণ, একমাত্র তাদেরই থামানো যায়, যাদের থামানো যেতে পারে।’

গত ৯ ও ১০ মের মধ্যবর্তী রাতে ভারত–শাসিত কাশ্মীরের প্রতিরক্ষা স্থাপনায় হামলা চালানোর কথা উল্লেখ করে পাকিস্তান আইএসপিআরের মহাপরিচালক বলেন, ‘পাকিস্তান সেই রাতে সিদ্ধান্তমূলকভাবে, সুসংহত এবং আনুপাতিক জবাব দিয়েছিল।

আমাদের কাছে যে প্রচলিত সামরিক শক্তি রয়েছে, তার সীমিত ব্যবহার করে এই প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। এটা ছিল আমাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতার একটা ছোট কিন্তু খুবই কার্যকর প্রদর্শন। আর দেখেছেন, তখনই ভারত পিছু হটতে শুরু করেছে। হঠাৎ তারা সংলাপের কথা বলতে শুরু করে এবং উত্তেজনা প্রশমনের ইচ্ছা প্রকাশ করে।’

দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি আলোচনা কে শুরু করেছিল এবং তা কবে শুরু হয়েছিল—এই প্রশ্নের উত্তরও জানতে চাওয়া হয়েছিল পাকিস্তান আইএসপিআরের মহাপরিচালকের কাছে। তিনি দাবি করেন, ৬ ও ৭ মে রাতে হামলার পর ‘ভারতের ডিজি মিলিটারি অপারেশনস পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ করে আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করে। আমরা এটা স্পষ্ট করে দিয়েছিলাম যে আমরা আমাদের প্রতিক্রিয়া দেওয়ার পরই কথা [আলোচনা) বলব।’

শরিফ চৌধুরী  বলেন, ‘১০ মে সকালে আমাদের তরফে উত্তর [ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ) আসে। এরপর আপনারা নিজেরাই দেখেছেন, তাদের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ভারতীয় টিভি চ্যানেলে এসে বলছেন, পাকিস্তান আর হামলা না চালালে তারাও আর সংঘর্ষ বাড়িয়ে তুলতে চায় না।’ এর পরই যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার প্রসঙ্গ টানেন শরিফ চৌধুরী। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সব সময় বলে এসেছি, আমরা শান্তিপ্রিয় রাষ্ট্র। উত্তেজনাকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলাম আমরাই। তাদের [ভারতের) কাছ থেকে অনুরোধ [উত্তেজনা প্রশমনের) তো ছিলই, আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীরাও এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিল।’

‘প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বকে এ ক্ষেত্রে কৃতিত্ব দেওয়া উচিত এবং বিষয়টা প্রশংসনীয়। অন্যাদেরও একই ইচ্ছা ছিল এবং ভারতও প্রকাশ্যে বলেছিল, তারা আর উত্তেজনা বাড়াতে চায় না। তাই আমরা বললাম, ঠিক আছে, [যুদ্ধবিরতি) কেন নয়?’
পাকিস্তানের এ সামরিক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বকে এ ক্ষেত্রে কৃতিত্ব দেওয়া উচিত এবং বিষয়টা প্রশংসনীয়। অন্যদেরও একই ইচ্ছা ছিল এবং ভারতও প্রকাশ্যে বলেছিল, তারা আর উত্তেজনা বাড়াতে চায় না। তাই আমরা বললাম, ঠিক আছে, [যুদ্ধবিরতি) কেন নয়?’

সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের একটা ভিডিও বিবৃতি ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। সেখানে তাঁকে বলতে শোনা যায়, পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আগে ভারত সরকার পাকিস্তানকে জানিয়েছিল, সে দেশের ‘সন্ত্রাসীদের গোপন আস্তানা’কে নিশানা করা হবে।

বিবিসির তরফে পাকিস্তান আইএসপিআরের মহাপরিচালকের কাছে ওই বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের একটা আখ্যান, যা হাস্যকর। সে রকম কিছুই ঘটেনি। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কথা বলতে গেলে বলব, আমরা আমাদের গোয়েন্দা তথ্যের জন্য ভারতীয় সূত্রের ওপর নির্ভর করি না। আমরা ইতিমধ্যেই গণমাধ্যমকে দেখিয়েছি, যখনই ক্রস-সেকশন রাডার ড্রোন উড়ে আসে, আমরা তৎক্ষণাৎ জানি, সেটা কোথা থেকে আসছে।’

ভারতের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ তুলে শরিফ চৌধুরী বলেন, ‘ভারতের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাস রয়েছে। তারা মনে করে পাকিস্তান একটা দুর্বল দেশ এবং আমাদের নিয়ে তারা যা খুশি তা–ই করতে পারে। সাম্প্রতিক সংঘর্ষের সময় আমরা একাধিক স্তরে তাদের ঔদ্ধত্য ভেঙেছি। সুতরাং যখন তারা দাবি করে, আমাদের আগে থেকেই জানিয়েছিল, তার জবাবে আমরা বলছি, আপনার কাছ থেকে কোনো তথ্যের দরকার নেই। আমরা জানি, আপনারা কেমন প্রতিযোগী এবং আপনাদের যোগ্যতা কী?’

তবে পাকিস্তান যে ভারতের বিষয়ে সব সময় সতর্ক থাকে সে কথাও জানিয়েছেন শরিফ চৌধুরী। তাঁর কথায়, ‘একজন সৈনিক হিসেবে আমি আপনাদের বলতে পারি, আমরা খুব সতর্কতার সঙ্গে তাঁদের [ভারতকে) লক্ষ্য করি। তাঁরা কী করছে এবং কেন করছে তা লক্ষ্য রাখি। আমরা সব সময় সতর্ক রয়েছি ও প্রস্তুত আছি।’

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের বাহাওয়ালপুরে জইশ-ই-মোহম্মদের গোপন আস্তানায় হামলা চালিয়েছে বলে ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবির বিষয়ে শরিফ চৌধুরীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। জবাবে তিনি বলেন, এটা ভারতের পুরোনো আখ্যান, যা তারা বারবার পুনরাবৃত্তি করে। তাঁর কথায়, ‘বাহাওয়ালপুর, মুরিদকে ও মুজাফফরাবাদের যেসব জায়গায় তারা নিশানা করেছিল, সেগুলো সবই মসজিদ ছিল। পরদিন এসব জায়গায় সংবাদমাধ্যমকে নিয়ে যাওয়া হয়। এটা কি কখনো সম্ভব যে সেখানে রাতের বেলায় সন্ত্রাসী ও তাদের ক্যাম্প ছিল। আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শত শত মানুষের সামনে সব চিহ্ন মুছে ফেলা হয়েছে?

শরিফ চৌধুরী বলেন, ‘এসব অভিযোগ প্রমাণ করার মতো কোনো তথ্য-প্রমাণ তাদের (ভারতের) কাছে নেই, কোনো যুক্তিও নেই। পাকিস্তান সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তাদের [ভারতের) কাছে যদি কোনো প্রমাণ থাকে, তাহলে তা যেন প্রকাশ্যে আনা হয়। আমরা তদন্ত করে দেখব। কিন্তু সেটার জন্যও তারা প্রস্তুত নয়।’

যুক্তরাজ্যে ভারতীয় হাইকমিশনার একটা ছবি গণমাধ্যমের সামনে এনে অভিযোগ তুলেছিলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত  জইশ-ই-মোহম্মদ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তির শেষকৃত্যের নামাজের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। ওই ছবির প্রসঙ্গ টেনে শরিফ চৌধুরীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল।

জবাবে শরিফ চৌধুরী যুক্তি দেন, ‘জানাজার নামাজের প্রসঙ্গে বলি, বাহাওয়ালপুর, মুরিদকে বা মুজাফফরাবাদে সাম্প্রতিক সময়ে বা তার আগে, যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁরা আমাদের দেশের সন্তান। আমার কাছে তাঁদের সবার ছবি রয়েছে, আমি আপনাকে দেখাতে পারি। এই শিশুদের দিকে একবার তাকান, তাদের মুখের দিকে দেখুন। তার জানাজায় কি পাকিস্তানের সেনা যোগ দেবেন না? পাকিস্তানের প্রশাসন কি সেখানে যাবে না?’

কিন্তু জইশ-ই-মোহম্মদ আন্তর্জাতিকভাবে একটা ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে স্বীকৃত। পাকিস্তানের সামরিক কর্মকর্তারা যদি ওই গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের পরিবারের শেষকৃত্যে অংশগ্রহণ করেন, তা কি নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হবে না?

এই প্রশ্নের জবাবে শরিফ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা কবে থেকে ভারতকে খুশি করব, এমন সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেছি? ভারত যা বলে, আমরা কি সেটাই করতে শুরু করব? আমরা তা করি না। এখন পর্যন্ত বা ভবিষ্যতেও ভারতের কেউই কখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না যে, ভারতকে খুশি করতে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা আমাদের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। এই সেনাবাহিনী, এই সরকার, এই রাষ্ট্র শুধু পাকিস্তানের জনগণের কাছেই ঋণী।’

শরিফ চৌধুরী অভিযোগ তুলেছেন, ভারত পাকিস্তানের যেকোনো জায়গায় বোমা ফেলবে এবং তারপর দাবি করবে, সেখানে জইশ-ই-মোহম্মদের লোক রয়েছে। আমাদের জইশ-ই-মোহাম্মদের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো প্রমাণ দিক। প্রমাণ নিয়ে আসুক তারা। বাহাওয়ালপুরে সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ শিবির রয়েছে, তারা সেটা প্রমাণ করে দেখাক।

পাকিস্তান আইএসপিআরের মহাপরিচালকের কথায়, ‘আমরা সন্ত্রাসবাদকে ঘৃণা করি। আমাদের দৃষ্টিতে সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই, বিশ্বাস নেই, মানবতার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা মানবতার বাইরে। একজন সন্ত্রাসী কেবল একজন সন্ত্রাসীই। যদি কেউ প্রমাণ দেয়, কোনো পাকিস্তানি নাগরিক সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত রয়েছে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা নিজেরাই ব্যবস্থা নেব।’