বিদ্যালয়ে খিচুড়ি বাদ, অন্য কোনো খাবার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
প্রকাশ : 2021-06-01 16:46:18১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রান্না করে শিক্ষার্থীদের খিচুড়ি বিতরণের প্রস্তাব বাতিল করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে গরম খাবার বিতরণের প্রস্তাব উত্থাপন করলে সেটি অনুমোদন না করে ফেরত পাঠানো হয়। খিচুড়ির পরিবর্তে অন্য কোনো খাবারের ব্যবস্থা করতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। একনেক সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এসব কথা বলেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আজকের একনেক সভায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সারা দেশে ১ কোটি ৪৮ লাখ শিক্ষার্থীকে সপ্তাহের পাঁচ দিন খিচুড়ি, এক দিন বিস্কুট খাওয়ানোর একটি প্রকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করে। ‘প্রাইমারি স্কুল মিল’ শিরোনামের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট খরচ দেখানো হয়েছে ১৭ হাজার ২৯০ কোটি টাকা। কিন্তু প্রকল্পটি অনুমোদন না করে ফেরত পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠকে উপস্থিত সরকারের একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, এই প্রকল্পের আওতায় এনজিও নিয়োগ দিয়ে, খাদ্যগুদাম ভাড়া করে সপ্তাহের পাঁচ দিন সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ কোটি ৪৮ লাখ শিক্ষার্থীকে খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ানোর প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর পছন্দ হয়নি। স্কুলের শিক্ষার্থীদের খিচুড়ি বিতরণ করতে গেলে ঠিকাদার নিয়োগ দিতে হবে। এনজিও নিয়োগ দিতে হবে। হাঁড়িপাতিল কেনাকাটা করতে হবে।
চাল, ডাল, তেল, শাকসবজি—এত কেনাকাটা করলে শিক্ষার ওপর ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এটি বাস্তবায়ন করতে গেলে স্কুলের শিক্ষকেরাও রান্না এবং কেনাকাটার দিকে মনোযোগী হয়ে উঠবেন। এত বিশাল কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন না করে স্কুলের শিক্ষার্থীদের কলা-বিস্কুট, দুধ-ডিম দেওয়া যায় কি না, সেটি ভেবে দেখতে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে খিচুড়ি বিতরণের উদ্যোগ ভালো। কিন্তু এটি বাস্তবায়ন করতে গেলে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হবে। তবে সমাজের বিত্তশালী কেউ যদি নিজেদের টাকায় স্কুলে খাবার বিতরণ করতে চান, সেটা উন্মুক্ত থাকবে। কিন্তু এত বিশাল বাজেট দিয়ে সরকারের পক্ষে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে একনেক সভায় আলোচনা হয়। অর্থাৎ সরকারের টাকায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
একনেক বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, স্কুলে খাবার বিতরণের যে প্রস্তাব এসেছে, প্রধানমন্ত্রী সেটি পরিবর্তন করতে বলেছেন। যে প্রস্তাব এসেছে, এটি বাস্তবায়ন করতে গেলে স্কুলে বাচ্চাদের পড়াশোনা নষ্ট হবে। অন্য কোনো কাঠামোতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা যায় কি না, সেটা ভেবে দেখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রকল্পের নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, খিচুড়ি বিতরণের জন্য প্রতিটি জেলায় নিয়োগ দেওয়া হবে একটি করে বেসরকারি সংস্থা (এনজিও)। প্রকল্পের আওতায় ১৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করে চাল, ডাল, তেল, ডিমসহ সবজি কেনাকাটা করা হবে। কেনাকাটা করে সেটি রাখার জন্য ভাড়া করা হবে গুদামঘর। সেসব খাদ্যসামগ্রী স্কুল পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার জন্য ভাড়া করা পরিবহন নেওয়া হবে। এনজিও কর্মীদের বেতনভাতা, খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণের জন্য গুদাম ভাড়া, পরিবহন, কুকদের বেতন, সার্ভিস চার্জ বাবদ এই ১ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা খরচ হবে।
কিন্তু এনজিও কর্মীদের বেতন-ভাতার পেছনে কত টাকা খরচ হবে, খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণের জন্য ২০০টি গুদাম ভাড়ার জন্য কত টাকা খরচ হবে, পরিবহনে কত টাকা, যাঁরা রান্না করবেন তাদের পেছনে কত টাকা এবং সার্ভিস চার্জের পেছনে কত টাকা খরচ হবে, প্রকল্প প্রস্তাবনায় তা বিস্তারিত বলা হয়নি। সাধারণত, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) কোন খাতে কত টাকা খরচ করা হবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া কমিয়ে আনার পাশাপাশি স্কুলে ভর্তি ও উপস্থিতির হার বাড়ানোর জন্য প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। ‘প্রাইমারি স্কুল মিল’ শিরোনামের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট খরচ দেখানো হয়েছে ১৭ হাজার ২৯০ কোটি টাকা, যার পুরোটাই সরকার বহন করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু আজকের একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন না করে ফেরত পাঠানো হলো।
সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আসিফ উজ জামান বলেন, সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খাবার বিতরণ নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমান বাস্তবতায় খাদ্যদ্রব্য কেনা থেকে শুরু করে রান্নাবান্না এবং তা শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ ব্যবস্থাপনায় কতটা সফলতা মিলবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এই প্রকল্পে সুশাসন নিশ্চিত করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।