বিএনপি- ২০ দল- ঐক্যফ্রন্ট নেতারা কে কোথায় ঈদ করবেন
প্রকাশ : 2021-05-13 10:56:52১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
ঈদুল ফিতরের মতো মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবে আনন্দ নেই বিএনপি নেতাদের মধ্যে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন নির্বাসিত। কয়েক হাজার নেতাকর্মী কারাগারে। অপরদিকে বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। ফলে দেশের সব মানুষের মতো বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যেও ঈদের আনন্দ নেই বললেই চলে। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত বছরের মার্চে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বাসায় ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে গত ১০ এপ্রিল তিনি করোনা আক্রান্ত হন। ২৭ এপ্রিল তাকে এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৩ মে শ্বাসকষ্ট অনুভব হওয়ায় তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। এবারের ঈদ তার হাসপাতালেই কাটছে। অপরদিকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক যুগেরও বেশি সময় ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান, কন্যা জাইমা রহমান, ছোট ভাই প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিথী ও তার দুই মেয়েও ঈদ করবেন লন্ডনে।
প্রতিবছর দলীয় চেয়ারপারসনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের মধ্যে দিয়ে ঈদ উদযাপন শুরু হয় দলীয় নেতাকর্মীদের। কিন্তু গত দুই বছর কারাগারে এবং এক বছর বাসায় আইসোলেটেড থাকায় তা হয়নি। এবার হাসপাতালে থাকার কারণে দলীয় নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের সুযোগ থাকছে না। তবে ঈদের নামাজের পরপরই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে যাবেন দলটির শীর্ষ নেতারা। সন্ধ্যায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে হাসপাতালে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেটিও নির্ভর করছে নেত্রীর শারীরিক অবস্থার ওপরে।
জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এবারের ঈদ বলতে কোনো কিছু হবে না। তিনি গত ৩১ মার্চ সস্ত্রীক করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ছিলেন। গত ১৩ এপ্রিল করোনামুক্ত হয়ে বাসায় ফিরলেও বেড রেস্টে আছেন। সে কারণে এবার ঈদে নিজ গ্রাম কিংবা অন্য কোথাও যাওয়ার কর্মসূচি নেই। ঈদের দিন চেয়ারপারসনকে দেখতে হাসপাতালে যাবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা হাসপাতাল সুযোগ দেবে কিনা তার ওপর নির্ভর করে। পুরো বিষয়টি মহাসচিব বলতে পারবেন।
জানা গেছে, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনেকে প্রতিবার ঈদের সময় নিজ নিজ এলাকায় চলে যেতেন। এবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে অনেকেই ঢাকা ছাড়ছেন না।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকাতেই ঈদ করবেন। তিনি উত্তরার একটি মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করবেন। পরে জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত ও হাসপাতালে গিয়ে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করবেন।
এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ড. আব্দুল মঈন খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান ঢাকায় ঈদ করবেন। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী নিজ নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রামে ঈদ করবেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ দীর্ঘদিন ভারতে আছেন। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে সেখানে তার বিরুদ্ধে মামলা চলছে। তিনি জামিনে থাকলেও (ভারত) দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাকে এবারও ভারতে ঈদ করতে হচ্ছে।
দলের ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, আবদুল্লাহ আল নোমান, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, মো. শাহজাহান, বরকত উল্লাহ বুলু, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, আব্দুল আওয়াল মিন্টু, শওকত মাহমুদ ঢাকায় ঈদ করবেন। শামসুজ্জামান দুদু বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের নামাজ ঢাকায় আদায় করবো। দুদিন পরে চুয়াডাঙ্গা যাবো।
ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, আমি ঢাকায় ঈদ করবো, সম্ভবত ওই দিন এভার কেয়ার হাসপাতালেও যেতে হবে। সেখানে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অসুস্থতার কারণে ভর্তি আছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আমেদ, রিয়াজ রহমান, সুকোমল বড়ুয়া, আমান উল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, তাহসীনা রুশদীর লুনা ঢাকায় ঈদ করবেন।
এছাড়া চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী, খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সিলেটে ঈদ করবেন।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অসুস্থ হয়ে ঢাকার শ্যামলীতে বাসায় আছেন। তিনি সেখানেই ঈদ করবেন। যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল ঢাকায় ঈদ করবেন। যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর ঈদ কাটবে কারাগারে ও যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার বরিশালে ঈদ করবেন বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন।
এছাড়া দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন নিজ এলাকা গাজীপুরে, নজরুল ইসলাম মনজু খুলনায়, এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বিলকিস জাহান শিরিন ঢাকায় ঈদ করবেন। শামীমুর রহমান চট্টগ্রামে, ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন সিলেটে, আসাদুল হাবিব দুলু লালমনিরহাটে ঈদ করবেন।
বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বর্তমানে দলটির কেন্দ্রীয় দপ্তরের চলতি দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি বলেন, আমি সাধারণত ঈদুল ফিতরে ঢাকায় এবং ঈদুল আজহায় নিজ এলাকা ময়মনসিংহে থাকি। এবারও ঈদে ঢাকায় থাকবো। কয়েকদিন আগে এলাকায় ঘুরে এসেছি। ঈদের দুদিন পরে আবার যাবো।
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এমপি, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল লতিফ জনি, আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, রফিক সিকদার, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, যুগ্ম-সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, শাম্মী আকতার, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েল ঢাকায় ঈদ করবেন বলে জানা গেছে।
ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন নিজ এলাকা বগুড়ার শেরপুরে ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল নিজ এলাকা নরসিংদীতে ঈদ করবেন। ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন, সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন ঢাকায় ও যুগ্ম-সম্পাদক তানজিল হাসান পটুয়াখালীতে ঈদ করবেন।
বিএনপি দলীয় এমপি ও দলের যুগ্ম-মহাসচিব হারুন অর রশীদ চাপাইনবাবগঞ্জে, গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বগুড়ায়, মোশারফ হোসেন বগুড়ায়, জাহিদুর রহমান পঞ্চগড়ে, আমিনুল ইসলাম চাপাইনবাবগঞ্জে, উকিল আব্দুস সাত্তার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করবেন।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আওয়াল ও বৈদেশিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন ঢাকায় ঈদ করবেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার ঢাকায় ঈদ করবেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, এবছর করোনা পরিস্থিতি ও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে কারও মধ্যে ঈদের আমেজ নেই। ঈদ বলতে যা বুঝায় সেটা এবার হবে না। অধিকাংশ সিনিয়র নেতা ঢাকায় নিজ নিজ বাসার কাছাকাছি মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করবেন। নামাজের পরে মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে ফাতেহা পাঠ ও দোয়া মোনাজাত করবেন।
২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্ট
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন তার বেইলী রোডের বাসায় থাকবেন। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আসম আব্দুর রব বড় ছেলের বাসা যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে অবস্থান করছেন। নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না গুলশানের বাসায় থাকবেন। গণফোরাম নেতা মোস্তফা মহসীন মন্টু, ড. অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ঢাকায় ঈদ করবেন।
২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম, মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিব, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নুরুল কবির ভূইয়া পিন্টু, জাগপার একাংশের সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান ও অপর অংশের সভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান, এলডিপির একাংশের সভাপতি আব্দুল করিম আব্বাসি, মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফারুক রহমান, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ডেমোক্রেটিক লীগের মহাসচিব সাইফুদ্দিন মনি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি আবু তাহের ঢাকায় ঈদ করবেন। বাংলাদেশ ন্যাপের একাংশের চেয়ারম্যান এম এন শাওন সাদেকী সিলেটে ঈদ করবেন বলে জানিয়েছেন।