বাবুই পাখি বিলুপ্তির পথে

প্রকাশ : 2021-08-05 16:52:50১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

বাবুই পাখি বিলুপ্তির পথে

কালের বিবর্তনে বগুড়ার নন্দীগ্রামে বাবুই পাখি বিলুপ্তির পথে। তালগাছের পাতায় মোড়ানো নিপুণ কারুকার্য খচিত বাবুই পাখি ও তার বাসা আর আগের মতো দেখা মিলে না। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বাবুই পাখির বাসা বিলীন হতে চলেছে। অথচ এক যুগ আগেও গ্রাম-গঞ্জের মাঠ-ঘাটের তালগাছে দেখা যেতো এদের বাসা। চমৎকার বাসা বুনে বাস করে বাবুই পাখি। এক সময় বাবুই পাখির কিচিরমিচির শব্দে গ্রাম বাংলার মানুষের সকাল বেলার ঘুম ভাঙতো। বৈরী আবহাওয়া ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে এখন আর তা হয় না। 

এ পাখিকে নিয়ে কবি রজনী কান্ত সেন তার স্বাধীনতার সুখ কবিতায় লিখেছেন, ‘‘বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়ই, কুঁড়েঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই। আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে, তুমি কতো কষ্ট পাও রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে, বাবুই হাসিয়া কহে, সন্দেহ কি তায় ? কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়। পাকা হোক তবু ভাই, পরেরও বাসা, নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর খাসা। কবির সেই চিরচেনা বাবুই পাখির অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। বসবাস উপযোগী পরিবেশ না থাকায় হারিয়ে যেতে বসেছে শৈল্পিক বাসার কারিগর বাবুই পাখি। 

উপজেলার কৈডালা গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোবারক আলী বলেন, এখন গ্রাম-গঞ্জেও আর আগের মতো চোখে পড়ে না বাবুই পাখি এবং তার তৈরি দৃষ্টিনন্দন বাসা। আষাঢ় মাস আসতে না আসতে কিচিরমিচির শব্দে মাঠে প্রান্তরে উড়েউড়ে খড়কুটো সংগ্রহ করে তালগাছে বাসা বাঁধে বাবুই পাখি। বাবুই পাখির বাসা যেমন দৃষ্টিনন্দন তেমনি মজবুত হয়। কথিত আছে বাবুই পাখি নিজের বাসা উজ্বল রাখতে রাতে জোনাকি পোকাধরে এনে বাসায় রাখে। এরা প্রতিটি তালগাছে প্রায় ৫০ থেকে ১০০টি বাসা তৈরি করে। বাসা তৈরি করতে এদের সময় লাগে ১০-১২ দিন। তালপাতা, খড়, কুটা, ঝাউ, কাশবন ও লতাপাতা দিয়ে বাবুই পাখি উঁচু তালগাছে বাসা বাঁধে। প্রবল ঝড়-বৃষ্টিতেও টিকে থাকে তাদের বাসা। বাবুই পাখির শক্তবুননের এ বাসা টেনেও ছেড়াও কঠিন। পুরুষ বাবুই পাখি বাসা তৈরির পর সঙ্গী খুঁজতে যায় অন্য বাসায়। 

সঙ্গী পছন্দ হলে স্ত্রী বাবুইকে সাথী করে নিজেকে আকর্ষণীয় করতে খাল, বিল ও ডোবার পানিতে গোসল করে গাছের ডালেডালে নেচে বেড়ায়। প্রজনন সময় ছাড়া অন্য সময় পুরুষ ও স্ত্রী বাবুই পাখির গায়ে পিঠে তামাটে কালো দাগ হয়ে থাকে। আউশ ও আমন ¶েতের ধান পাকার সময় হলো বাবুই পাখির প্রজনন সময়। প্রজনন ঋতুতে পুরুষ পাখির রং হয় গাঢ় বাদামি। প্রেমিক বাবুই পাখি যত প্রেমই দেখাক না কেন, প্রেমিকা ডিম দেওয়ার সাথে সাথেই প্রেমিক বাবুই আবার  খুঁজতে থাকে নতুন সঙ্গী। পুরুষ বাবুই পাখি এক মৌসুমে ছয়টি বাসা তৈরি করতে পারে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবার পরপরই বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য স্ত্রী বাবুই পাখি ক্ষেত থেকে দুধ ও ধান সংগ্রহ করে। বাবুই পাখি সাধারণত বিভিন্ন ফসলের বীজ, ধান, বিভিন্ন প্রজাতির পোকা, ঘাস, ছোট উদ্ভিদের পাতা, ফুলের মধু ও রেনু খেয়ে জীবনধারণ করে। নন্দীগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি পাখি প্রেমিক নাজমুল হুদা জানিয়েছে, অসংখ্য প্রজাতির পশু, পাখি, কীট-পতঙ্গ আমাদের পরিবেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে বাবুই পাখি বিচরণ ধরে রাখার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। 

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. অরুনাংশু মন্ডল এ প্রসঙ্গে বলেন, বৈরী আবহাওয়া ও পরিবেশ বিপর্যয়ের  কারণে অনেক প্রাণি হারিয়ে যাচ্ছে। অনেক প্রাণি  বিলুপ্তির পথে। প্রকৃতির বিরুদ্ধে মানুষের আগ্রাসী কার্যকলাপের বিরূপ প্রভাবেই এরা হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে দেশের গ্রামা লে এখনো হঠাৎ করেই চোখে পড়ে বাবুই পাখির বাসা। যা নন্দীগ্রাম উপজেলার নামুইট গ্রামে দেখা যায়।